‘সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফেরানো হবে পুঁজিবাজারের আস্থা’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০২ পিএম, ২০ জুন ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৬:০৭ পিএম, ২০ জুন ২০২০ শনিবার
সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের আস্থা ফিরেয়ে এটিকে স্থিতিশীল বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের স্বার্থে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। তবে এটি (আস্থা ফেরানো) শুধু বিএসইসির একার কাজ নয়। এখানে অনেকগুলো পক্ষ আছে, তাদেরকেও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে পুঁজিবাজারে দ্রুত আস্থা ফিরে আসবে।
আজ শনিবার (২০ জুন) সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড আয়োজিত পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজারসহ সংশ্লিষ্ট খাতে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য প্রভাব বিষয়ক এক ওয়েবিনারে (ওয়েব সেমিনার) তিনি এ কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনউদ্দীন এবং সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, প্রত্যেকেই বিএসইসির দিকে আঙ্গুল তুলে। কিন্তু বিএসইসি শুধুই রেগুলেটর। আমাদের প্রধান কাজ আইন-কানুন প্রণয়ন করা। আইনে দেওয়া এখতিয়ারের মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের বক্তব্য শুনি, কোনো সমস্যা থাকলে সমাধানের চেষ্টা করি, বাজারের কল্যাণে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটিও করা হয়। কিন্তু বিএসইসি বাজারে বিনিয়োগ বা ম্যানুপুলেট (কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য পরিবর্তনের চেষ্টা) করতে পারে না। এটি সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর কাজ।
তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদের ব্যবসাকে সহজ করা, তথ্য প্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়িয়ে পেপারলেস রিপোর্টিং এবং বিভিন্ন বিষয় অনুমোদন বা সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা কমিয়ে আনাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে প্রস্তুত। এমনকি বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রয়োজন হলে সেটি করতেও আপত্তি নেই। কিন্তু বাজারে লেনদেনের বিষয়ে কিছু করার সুযোগ আমাদের খুবই কম।
বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে বলেন, বাজেটে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত কিছু ইস্যু মিস হয়ে গেছে। কিছু প্রস্তাবনা আছে যেগুলো পুঁজিবাজারের জন্য অনুকূল নয়। যেমন পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ বছরের লক-ইন আরোপ, তালিকাভুক্ত ও তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা, জিরো কূপন বন্ডের কর সুবিধা তুলে নেওয়া। এছাড়া পুঁজিবাজারের স্বার্থে মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর কমানো, ব্রোকারহাউজের লেনদেনে উৎসে কর কমানোসহ আরও কিছু বিষয় বাজেটে বিবেচনা করলে ভালো হতে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাকে বিষয়গুলো বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যানকে তিনি বিঝানোর চেষ্টা করেছেন, শুধু কয়েকটি কোম্পানির কাছ থেকে কর আদায়ের চেষ্টা না করে পরিধি বাড়াতে। চাপের মাধ্যমে করের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়, বরং কর কমিয়ে ব্যবসার সহজ পরিবেশ তৈরি করে দিলে যখন ব্যবসা বাড়বে, তখন স্বয়ংক্রিভাবে সরকারের রাজস্বও বাড়বে। আর এটিই হবে সবচেয়ে টেকসই।
ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক মঈনউদ্দীন বাজারে ইউনিলিভারসহ স্থানীয় ভাল ভাল কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তিনি। ব্যাংক থেকে বর্তমানে কম সুদে ঋণ পাওয়া, তালিকাভুক্ত হলে নানা ধরনের কমপ্লায়েন্সের মধ্যে আসা ইত্যাদি কারণে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। এসব সমস্যা কাটিয়ে কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিএসইসিকে এসব কোম্পানি বাজারে আনার একটি উপায় খুঁজতেই হবে। তিনি বিগত সময়ে আইপিওতে আসা বিভিন্ন কোম্পানির মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন বন্ড মার্কেট বিকাশের গুরুত্ব ও কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জিরো কুপন বন্ডে কর সুবিধা তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই ধরনের ব্যবস্থা বন্ড মার্কেটের বিকাশকে ব্যাহত করবে। ট্রেজারি বন্ডগুলো শুধু ওটিসি মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে কেন সে প্রশ্ন রাখেন তিনি?
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আগামী দিনে যাতে বাজারে আর কোনো মন্দ আইপিও না আসতে পারে সে বিষয়ে কাজ করছে বিএসইসি। আইপিও অনুমোদনের আগে সব ডকুমেন্টস ভালভাবে পরীক্ষা করা হবে, কোম্পানি পরিদর্শন করা হবে।এছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও এফআরসি’র সহায়তা নেবে। আগামী দিনে তিন ধরনের ব্যালান্সশিট বানিয়ে তিন জায়গায় দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। কারোরই অ্যাকাউন্টস জাগলারি (হিসাব কারসাজি) করে বাজারে আসার সুযোগ থাকবে না।
ওয়েবিনারে বিএসইসি চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারহাউজ ও অন্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বিএসইসিসহ সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আস্থা ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি স্টেকহোল্ডারদেরকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করার আশ্বাস দেন।
আরকে//