করোনায় ফুসফুস দীর্ঘমেয়াদে বিকলের আশংকা!
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫৫ পিএম, ২৫ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৫৯ পিএম, ২৫ জুন ২০২০ বৃহস্পতিবার
করোনাভাইরাসে যারা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন তাদের ফুসফুসের ওপর মারত্মক প্রভাব পড়ার লক্ষণ দেখছেন চিকিৎসকরা। ব্রিটেনে কোভিড-১৯তে গুরুতর আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন, এমন হাজার হাজার মানুষকে হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাদের ফুসফুস চিরকালের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য। খবর বিবিসি’র
ব্রিটেনে চিকিৎসকরা বলেছেন, যারা করোনাভাইরাসে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে আশংকা করছেন তারা। যাকে বলা হয় পালমোনারি ফাইব্রোসিস। ফুসফুসের এই ক্ষতি থেকে সেরে ওঠা যায় না এবং এর উপসর্গগুলো হল মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং ক্লান্তিবোধ।
করোনাভাইরাসে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হলে শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে তখন প্রচুর শ্লেষ্মা, জলীয় পদার্থ এবং কোষ তৈরি হয়। যা ফুসফুসে বাতাস চলাচলের থলিগুলো আছে (অ্যালভিওলি) সেগুলোকে ভর্তি করে ফেলে। এটা যখন হয়, তখন নিউমোনিয়া দেখা দেয় এবং কোনও সাহায্য ছাড়া মানুষের পক্ষে নিঃশ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না।
ব্রিটিশ সোসাইটি অফ থোরাসিক ইমেজিংয়ের একজন সদস্য এবং রয়াল কলেজ অফ রেডিওলজিস্টের উপদেষ্টা ড. স্যাম হেয়ার বলছেন, "সাধারণত এ ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের পর ছয় সপ্তাহ হয়ে গেলে ফুসফুসের অবস্থা আগের জায়গায় ফিরে যাবার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা হয়নি এবং সেজন্যই এটা উদ্বেগের কারণ।"
এই কারণে ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অধীনে সেরে ওঠা রোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেয়ার ও পুর্নবাসনের জন্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পালমোনারি ফাইব্রোসিস কী?
পালমোনারি ফাইব্রোসিস এক ধরনের রোগ। এই রোগের কারণে ফুসফুসের নরম অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এতে ফুসফুসের টিস্যুগুলো মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। যার ফলে ফুসফুসে বাতাসের থলিগুলো ঠিকমত কাজ করতে পারে না।
কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে পালমোনারি ফাইব্রোসিসের কারণে নিঃশ্বাস নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং ক্লান্তিবোধ দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে অন্য নানা ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই রোগ সহজে সারে না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। অর্থাৎ দিনে দিনে এই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তবে কোভিড-১৯ এর ফলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, তা নিয়ে গবেষণার কাজ এখনও খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
ধারণা করা হচ্ছে, যাদের হালকা উপসর্গ হয় তাদের ক্ষেত্রে ক্ষতি স্থায়ী হবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু যাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের নিবিড় পরিচর্যায় রাখার দরকার হচ্ছে বা যাদের সংক্রমণ খুবই গুরুতর পর্যায়ে গেছে। তাদের ফুসফুসে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হবার আশংকা রয়েছে।
মার্চ মাসে চীনে চালানো এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সেরে ওঠা ৭০ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৬৬ জনেরই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পরেও ফুসফুসের নানা সমস্যা রয়ে গেছে।
ব্রিটেনের রেডিওলজিস্টরা সেরে ওঠা রোগীদের প্রাথমিক স্ক্যান পরীক্ষার ভিত্তিতে বলছেন, যারা কোভিডে বেশি অসুস্থ হচ্ছে তাদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশংকা বেশি। এক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগীর ফুসফুসে ক্ষত তৈরির লক্ষণ পরিষ্কার হয়েছে।
ভবিষ্যৎ চিকিৎসা
ফুসফুসের ফাইব্রোসিস বা ফুসফুসের দেয়াল মোটা হয়ে যাওয়া সারানো যায় না। কারণ ফুসফুসের কোষ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা চিরস্থায়ী হয়। তবে নতুন ওষুধ দিয়ে এই ক্ষতির মাত্রা কমানো যেতে পারে। হয়তো তা কিছুটা বিলম্বিত বা আটকানোও সম্ভব হতে পারে, এক্ষেত্রে এই সমস্যাটি ঠিক সময়ে ধরা পড়তে হবে।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক জাতীয় ইন্সটিটিউটের গবেষক ও অধ্যাপক জিসলি জেনকিন্স বলছেন, “সমস্যাটা কতটা গুরুতর তা বোঝা দরকার এবং জানা দরকার ঠিক কখন এটা আটকাতে ওষুধ দেয়া দরকার। আমাদের জীবদ্দশায় এর আগে একই সাথে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ফুসফুস এ ধরনের আঘাতের মুখোমুখি হয়নি।”
কাজেই করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মূল্যায়ন করা এবং তাদের এই ক্ষতি কমাতে সাহায্য করা যায় কিনা, সেটাই এখন গবেষক ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সামনে আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ।
এএইচ/