ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড পেতে দিতে হচ্ছে ৫শ টাকা

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ২৬ জুন ২০২০ শুক্রবার

বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে বয়স্ক, স্বামী নিগৃহীতা মহিলা (বিধবা) ও শারীরিক সমস্যা প্রতিবন্ধীদের ভাতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ডাটাবেইজ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। ১০ টাকার বিনিময়ে সকল ভাতাভোগীরা নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতা সুবিধা ভোগ করার কথা থাকলেও প্রতিটি ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য ৫শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। 

যারা দাবিকৃত টাকা দিতে পারছেন না তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন টিটুর বিরুদ্ধে।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের মোট ১ হাজার ৬ জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা কার্ডের চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওই সুবিধাভোগীদের টাকা প্রদানের জন্য একটি করে ব্যাংক হিসাব খুলে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুন (মঙ্গলবার) থেকে চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডের চূড়ান্ত তালিকার সুবিধাভোগীদের ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার কাজ করছে চেয়ারম্যানের সহযোগী সাহাব উদ্দিন। নিজে বসে ব্যাংকের ফরম পূরণ করে দিয়ে জনপ্রতি ৫শ টাকা করে নিচ্ছে। যদিও চেয়ারম্যান বলছেন, প্রতি ফরমে ২শ টাকার করে নেওয়ার জন্য। যারা কম দিচ্ছে তাদের অশালিন ভাষায় গালমন্দ এবং যারা দিতে পারছেন না তাদের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। 

হিসাব খুলতে আসা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কেন টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে বিভিন্ন খরচ আছে বলে জানায় সাহাব উদ্দিন। দিন শেষে এই টাকা চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

ভুক্তভোগীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে ব্যাংকের হিসাব খোলার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ছবি ও টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। সাহাব উদ্দিন ও তার সাথে থাকা লোক একজন একজন করে সিরিয়ালে ডেকে কাগজপত্র নিয়ে ফরমে স্বাক্ষর ও টিপ নিয়ে টাকা নিয়ে যায়।

বিধবা ভাতার কার্ডের হিসাব খুলতে এসে হাতে টাকা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো এক নারীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘৫শ টাকা নিয়ে আমরা একাউন্ট করতেছি। টাকা কেন নেওয়া হচ্ছে আমি বলতে পারবো না, কাগজপত্র প্রস্তুত করতে লাগবে বলছে।’

বিধবা ভাতার ব্যাংক হিসাব করতে আসা আরেক নারী বলেন, ‘৩৮০ টাকা নিয়ে একাউন্ট খুলতে গেলে সাহাব উদ্দিন ফরম দেয়নি। পরে বাজারের একজন থেকে ১২০টাকা ধার করে মোট ৫শ টাকা মিলিয়ে দেওয়ার পর ফরম পূরণ করে দিয়েছে।’ 

চাপরাশিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন টিটু তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তিনি কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ১ টাকাও নিচ্ছেন না। উল্টো যে ১০ টাকা একাউন্ট খুলতে খরচ হচ্ছে সেই টাকা তিনি নিজের পকেট থেকে দিচ্ছেন।’

কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘১ হাজার ৬ জন হওয়ায় ব্যাংক হিসাব খুলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের ফরম পূরণ করতে কোন প্রকার টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ ফরম পূরণে টাকা লেনদেন করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এআই//