নিয়ন্ত্রণহীন প্লাটফর্মে অশ্লীল ছবি উসকে দিচ্ছে যৌনতা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৫৭ পিএম, ২৭ জুন ২০২০ শনিবার
বর্তমান সময়ে বিনোদনের নতুন জগৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যেখানে প্রচার হচ্ছে ছোট ছোট বিভিন্ন ওয়েব সিরিজ। দেশের বিনোদন সংশ্লিষ্টরা এ জগতে পা রাখলেও সেগুলো অশ্লীলতায় ভরা। বিনোদনের মোড়কে নিয়ন্ত্রণহীন এসব প্লাটফর্মে হু হু করে ছড়াচ্ছে অশ্লীল ছবি। অখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী ও মডেলদের সাথে এই স্রোতে মিশে গেছে অনেক পরিচিত মুখও। উপরে নিচে কিছু চটকদার শব্দ আর অর্ধনগ্ন স্থির চিত্র দিয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে দর্শকদের। এসব সিরিজে ব্যবহার করা নানান কুরুচিপূর্ণ উপাদান শুধু সামাজিক অবক্ষয়ই করছে না বরং আমাদের যে নিজস্ব একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় আছে সেটিও দিনদিন দূরে সরে যাচ্ছে।
দেশের বিনোদন জগতে কিছু দিন ধরে চলছে সমালোচনার ঝড়। কারণ একটাই, ওয়েব সিরিজের নামে অবলীলায় চলছে অশ্লীলতা। আর এতে অভিনয় করছেন দেশের জনপ্রিয় তারকারা। সেন্সরশিপ না থাকায় জনপ্রিয় নির্মাতাদের নির্মিত ওয়েব ধারাবাহিক, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো এখন আর পারিবারিকভাবে দেখার অবস্থায় নেই। কারণ গল্পে থাকছে অশ্লীল সংলাপ এবং সহিংসতার দৃশ্য থাকে এসব ওয়েব সিরিজে। বলা যায় ব্যবসায়িক স্বার্থে দর্শক টানতে বিদেশী অনুষ্ঠানগুলোর সাথে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন দেশের কনটেন্ট নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা।
উদ্ভট গল্প, অশালীন দৃশ্য, নোংরা সংলাপ ব্যবহার যেন নতুন কোনো বিষয় নয়। ওয়েব সিরিজের নামে এ এক অতিমাত্রার সুরসুরি ও যৌনতা। অনেকটা নীল ছবির নতুন রূপ। গল্পের প্রয়োজনে গালি ব্যবহার করা হলেও টিভি নাটকের সেই অংশের শব্দটুকু সাধারণত মুছে দেওয়া হয়। মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও সেবন করার দৃশ্যে ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ লেখা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজে এ ধরনের সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি।
স্ট্রিমিং প্লাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও ইউটিউবে মুক্তি পেয়ে রীতিমতো বিতর্ক উসকে দিয়েছে এই ওয়েব সিরিজগুলো। ফেসবুক, ইউটিউবের মত ওপেন প্লাটফর্মে এসব অশ্লীলতা দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য যেমন অশনি সংকেত, তেমনি তরুণ ও যুব সমাজের জন্য ভয়ংকর হিসেবে দেখছে মূলধারার শিল্পী ও নির্মাতারা।
গত ২৭ মে অনলাইনে মুক্তি পেয়েছে ‘সত্য ঘটনা অবলম্বনে’ শিহাব শাহীন পরিচালিত ক্রাইম থ্রিলার ‘আগস্ট ১৪’। ঐশী নামে বখে যাওয়া এক মেয়ের গল্প এটি। সে পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে। ২০১৩ সালে যে মেয়েটি মা-বাবাকে নির্মমভাবে খুন করেছিল। আলোচিত সেই ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে সিরিজটি। এই ধারাবাহিকে তুশি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা, শহিদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনিরা মিঠু, শাওন, তানভীর প্রমুখ।
সেখানে দেখা যায়, বন্ধুদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক, বাসায় একা নীল ছবি দেখার মুহূর্তসহ নানা কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য। থ্রিলারের শুরুতেই বলে নেয়া হয়, এটি ১৮ বছরের কম বয়সী দর্শকের জন্য নয়। আর এমন অশ্লীল দৃশ্যগুলোতে অবলীলায় অভিনয় করেছেন তিশা, যেভাবে আগে কখনোই তাকে দেখা যায়নি।
আদনান ফারুক হিল্লোল ও নাজিয়া হক অর্ষা অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং’ মুক্তি পেয়েছে ঈদে। সিরিজের শুরুটাই চমকে দেবে দর্শককে। পর্দায় বাংলাদেশী অভিনয়শিল্পীদের এত নিবিড় বিছানার দৃশ্য এর আগে কখনো দেখানো হয়েছে কি না, তা নিয়েও ভাবাবে দর্শককে।
এর আগে ২০১৭-১৮ সালে অনলাইনে মুক্তি পাওয়া কিছু নাটকে দেখা যায় কতিপয় তারকার খোলামেলা দৃশ্য। সেই সময়ে ‘আবাসিক হোটেল’, ‘হেলেন অব ট্রয়’ সিরিজগুলোতে কিছুটা খোলামেলা দৃশ্য থাকায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন সেগুলোর নির্মাতা এবং শিল্পীরা।
বিশেষ করে গত ১৮ সালের রোজার ঈদে ইউটিউব চ্যানেলে একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রকাশ পায়। তার মধ্যে সিএমভির ইউটিউব চ্যানেলে ৭ পর্বের ‘আমি ক্রিকেটার হতে চাই’ ও ‘অ্যাডমিশন টেস্ট’, ‘এল আমোর টিভি’ নামে ইউটিউব চ্যানেলে ‘টেস্টিং সল্ট’, বাংলা ঢোলের উদ্যোগে ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম বাংলা ফিক্সে প্রচার পায় বিশেষ নাটক ‘উপহার’।
এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহায়ও প্রকাশ পায় একাধিক নাটক। এর মধ্যে সিএমভির ব্যানারে সাত পর্বের ওয়েব সিরিজ ‘দ্য লিস্ট’, ধ্রুব এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে সাত পর্বের দুই সিরিজ ‘বাঘবন্দী’ ও ‘আবাসিক হোটেল’, কিংবা টয়া অভিনীত ‘পালাবি কোথায়’ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে সহস্রাধিক পর্নো সাইট বন্ধ করা হয়েছে। মূলত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে নিরাপদ রাখতেই এই উদ্যোগ। আমরা অনেকে পর্নো বলতে চলমান উত্তেজনা সৃষ্টিকারী চিত্রকেই বুঝে থাকি। কিন্তু এর বিস্তর বিশ্লেষণ রয়েছে। পর্নো হচ্ছে যৌন আকাক্সক্ষা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌন সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর প্রতিকৃতি অঙ্কন বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাকে বোঝায়। পর্নোগ্রাফি বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে উপস্থাপন করা যেতে পারে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বই, সাময়িকী, পোস্টকার্ড, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, অঙ্কন, পেইন্টিং, অ্যানিমেশন, সাউন্ড রেকর্ডিং, চলচ্চিত্র, ভিডিও এমনকি ভিডিও গেম। সে হিসেবে বিবেচনা করলে বর্তমান ওয়েব সিরিজগুলোতে যেভাবে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যে অশ্লীল চিত্র দৃশ্যায়নে লিপ্ত হচ্ছেন তাকে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণই বলা যেতে পারে। যা একজন স্বাভাবিক মানুষের কাম সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।
ওয়েব সিরিজ, সিনেমা বা যে কোনও কিছু নির্মাণ ও প্রচার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের একটি কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি আছে, রয়েছে সমাজের মূল্যবোধ। আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে কোনও কিছু করা কখনোই সমীচীন নয়। যা আইনানুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
এসএ/