নামী কোম্পানির তালিকাভুক্তি পুঁজিবাজারে গতি সঞ্চার করবে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৮ পিএম, ২৮ জুন ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১১:০৯ পিএম, ২৮ জুন ২০২০ রবিবার
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে একটি মোবাইল ফোন অপারেটরসহ দেশি-বিদেশি নামী কোম্পানির তালিকাভূক্তি পুঁজিবাজারে নতুন গতির সঞ্চার করবে বলে আশা করছেন আর্থিকখাতের বিশ্লেষকরা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইতোমধ্যে স্থানীয় নামী ব্র্যান্ড ওয়ালটনকে বাজারে তালিকাভূক্তির অনুমোদন দিয়েছে। একই সাথে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে দু’টি বেসরকারি ব্যাংককে নন কনভার্টেবল বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোন অপরাটের রবি আজিয়াটার পুঁজিবাজারে অন্তর্ভূক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিএসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ভাল কোম্পানির শেয়ার আনার মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাদের এই প্রচেস্টা। এদিকে আর্থিক ও বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন,নামী ব্র্যান্ড বা কোম্পানি বিশেষত মোবাইল ফোন অপারেটর তালিকাভূক্তির ফলে বাংলাদেশের দুই পঁজিবাজার বিকাশের পাশাপাশি সরকারের আয় বাড়বে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রবি’র মত বড় মোবাইল ফোন অপারেটরের তালিকাভূক্তি পুঁজিবাজারে ‘কিছুটা ইতিবাচক ধারনা’ নিয়ে আসবে। তিনি বলেন,‘ আমি মনে করি রবির মত বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ তবে তিনি সম্পদ বা আর্থিক ভিত্তির মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় কোন কোম্পানিকে যেন অতি মূল্যায়ন না করা হয়,সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
গত ২৩ জুন বিএসইসির ৭২৯তম সভায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেয়া হয়।বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করবে ওয়ালটন। অন্যদিকে বেসরকারিখাতের সিটি ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকে মোট ৮০০ কোটি টাকার নন কনভার্টেবল বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন পেয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর ‘রবি’র পুঁজিবাজারে আসাকে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্চক বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে তারা বাজারে তালিকাভূক্তির জন্য আইপিও জমা দিয়েছে। আজিয়াটা লিমিটেডের ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে দশ টাকা অভিহিত মূল্যের ৫২ কোটি ৩৮ লাখ শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। আর এসব শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫২৩ কোটি টাকা তুলবে রবি। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি রবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারের মালিক হওয়ার সুযোগ করে দেবে আইপিও।
বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, রবির আইপিও হচ্ছে দেশের ইতিমাসে সর্বোচ্চ আইপিও। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো, ছায়েদুর রহমান বলেন,‘রবির তালিকাভূক্তি বাজারকে আরো শক্তিশালী করবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অত্যন্ত ইতিবাচক ফল দিবে।’ এতে মূলধন সূচক দ্রুত বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
আবেদন করা আইপিও’র নথি অনুযায়ী, বর্তমানে রবির অনুমোদিত শেয়ার মূলধন ৬,০০০ কোটি টাকা এবং এর পরিশোধিত মূলধন ৪,৭১৪ কোটি টাকা। ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার নতুন শেয়ার ইস্যু করার সাথে সাথে এর পরিশোধিত মূলধন বেড়ে দাঁড়াবে ৫,২৩৭ কোটি টাকা।
ডিএসইর সাবেক পরিচালক রকিবুর রহমান পুঁজিবাজারে রবির তালিকাভূক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বিনিয়োগকারীরা ব্র্যান্ড ভ্যালুর ওপর নির্ভর করে শেয়ার ক্রয় করবে। তবে তিনিও মির্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে একমত পোষন করে বলেন, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অত্যন্ত কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে সম্পদ মূল্যায়ন করতে হবে। কোনভাবেই শেয়ার অতি মূল্যায়িত হলে বিনিয়োগকারীরা ভূল পথে চালিত হবে।
শেয়ারের অর্থ জমা দেয়ার বিষয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল,তার সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছে রবি। কারণ হিসেবে কোম্পানিটি বলছে,বিএসইসির কাছে ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ইএসপিপির বিপরীতে সংগ্রহ করা আমানতের অর্থ বর্তমান দায় হিসেবে প্রদর্শিত হতে পারে।
রবির চীফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি কর্মকর্তা শাহেদ আলম বলেন,‘ আমরা বিএসইসিতে যে আবেদন করেছি, সেটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে যে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে,তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, রবি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্তির জন্য দু’টি শর্ত দিয়েছে, এগুলো হলো- নূন্যতম টার্নওভার কর ২ শতাংশ হ্রাস করে শুণ্য দশমিক ৭৫ শতাংশ করা এবং আগামী ১০ বছরের জন্য কর্পোরেট করহার ৩৫ শতাংশ করা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল- ইসলাম বলেন, বৃহত্তর স্বার্থ ও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা বিবেচনায় রেখে পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানি নিয়ে আসার চেস্টা করব। তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি কেবল অর্থ সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে আসবে না, এর পাশাপাশি তারা কর সুবিধাও পাবে। সরকার এ জন্য তালিকাভূক্ত কোম্পানির জন্য কর সুবিধা প্রদান করছে।
শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ৪৮৬ কোটি টাকার আইপিও অনুমোদনের আগে ২০০৮ সালে বেসরকারি প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ৪৮৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। বাসস
এসি