ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনার হাত থেকে বাঁচাতে পারে মেডিটেশন!

মোঃ রোকনুজ্জামান

প্রকাশিত : ১২:০০ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:০০ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মঙ্গলবার

করোনার দীর্ঘ সূত্রতায় বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবন। ঘরবন্দী মানুষ যেন চাইলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। দীর্ঘ সময় ধরে ঘরে থাকার ফলে একদিকে যেমন মানসিক অশান্তি অন্যদিকে মহামারী করোনার প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কার না  হওয়ায় আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না সাধারণ মানুষের। 

চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো কার্যকরী প্রতিষেধক মানুষের হাতে তুলে দিতে না পারায় মানুষ খুঁজছে বেঁচে থাকার উপায়। প্রকৃতিবিমূখ মানুষগুলোই এ যুদ্ধে বেঁচে যেতে দ্বারস্থ হচ্ছে প্রকৃতির কাছে। এক্ষেত্রে মেডিটেশনের কথা তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষকরাও ধ্যান বা মেডিটেশনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলছেন, প্রাকৃতিক উপায়েই এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হওয়া সম্ভব।   

সম্প্রতি ‘‌দ্য কনভারসেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক বক্তব্যে ১৯৯৮ সালে মেডিসিন বিভাগে নোবেল জয়ী ফার্মাকোলজিস্ট লুই জে ইগনারো বলেছেন,  “নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। তাহলেই নাকি মরবে করোনার জীবাণু!‌ নাক দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে মুখ দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাই‌ড পরিত্যাগ করা ভীষণ উপকারী পদ্ধতি। এতে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়। ফলে ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং গোটা শরীরে অক্সিজেনের যোগান বাড়ে। এই নাইট্রিক অক্সাইড শিরা–ধমনী ও ফুসফসে এন্ডোথেরিয়াম তৈরি হয় যা উচ্চ রক্তচাপ রোধ করে। পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গেও রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এছাড়াও ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।”

দৈনন্দিন জীবনে আমরা সচারচর কী করি? কত অল্পতেই রেগে যায়! উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ছাড়া আমাদের একটা দিনও কাটাতে পারি না। নিজেকে নিয়ে একটু ভাবলেই বুঝতে পারি আতঙ্ক, হতাশা আর হয়রানির হাতে কেমন বন্দী আমরা। তবে এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের জন্য নানা রকমের রোগ ব্যধি অপেক্ষা করছে বলে অভিমত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ( বিএসএমএমইউ) সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন,  “মজার ব্যাপার হচ্ছে এই রোগগুলো থেকে মুক্তিও কিন্তু সম্ভব নিজেদের উদ্যোগেই ,কারণ মানুষের শরীর হলো সেরা ফার্মেসী আর মন হলো সেরা ডাক্তার। কিন্তু মনকে প্রশান্ত করবো কিভাবে? যেভাবে আমাদের নবী-রাসুল, মনি-ঋষী, ওলী-বুযুর্গগণ করেছেন সেইভাবে। আর তা হলো ধ্যান বা মেডিটেশন। মেডিটেশন করলে শরীর শিথীল হয়। মনে প্রশান্তি আসে, হার্ট-বিট ও রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়। দুশ্চিন্তা, হতাশা, গ্লানি দূর হয়। মন ও শরীর লাভ করে এক অনাবল প্রশান্তি। বাংলাদেশে এই মেডিটেশন চর্চার পথিকৃৎ কোয়ান্টাম। কোয়ান্টাম মেডিটেশন চর্চা করে লাখো মানুষ বদলে ফেলেছে তাদের জীবন। ছিলেন অসুস্থ হয়েছেন সুস্থ। কত বিচিত্র ক্রোনিক ব্যাধী থেকে যে তারা মুক্তি লাভ করেছেন তার কোনো ইয়াত্তা নেই। তাই সুস্থ জীবনের জন্য আপনার প্রথম পদক্ষেপ নিন। মেডিটেশন করুন। আর প্রতিদিন শতবার বলুন, ‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন, কর্মব্যস্ত সুখি জীবন’। দেখুন জীবন কত আনন্দের আর প্রশান্তির।”

স্বাস্থ্যগবেষকরা বলেছেন, “যোগ-মেডিটেশন মানুষকে শারীরিক-মানসিকভাবে মানুষকে  সুস্থ রাখে, এতে অনেক চিকিৎসা-ব্যয় কমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে রোগীমৃত্যুর হার কমাতে চিকিৎসকদের মেডিটেশনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে অনেক দেশ  যোগ-মেডিটেশনের ওপর থেকে সব ধরনের সার্ভিস ট্যাক্স ও ভ্যাট প্রত্যাহার করে নিয়েছে, উপরন্তু এর প্রসারে দিয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। বাংলাদেশেও উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালায় যোগ-মেডিটেশন ও শিথিলায়নকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে।”

করোনা পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী মানুষ কিভাবে নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে বর্তমান সময়ের আলোচিত বিজ্ঞানী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত করোনা সনাক্তকরণ কিট “জি র‍্যাপিড ডট ব্লট” গবেষক টিমের প্রধান ড. বিজন কুমার শীল বলেন, “সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে লকডাউন হওয়ায় অনেকটা সময় মানুষকে ঘরে থাকতে হচ্ছে, মানুষ বিরক্তও হচ্ছে। আমি বলবো এই সময় যদি একটা ভালো কাজ করা যায়, মেডিটেশন করা যায় , তাহলে অনেকটা ভুল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষ করে যারা বয়স্ক তারা কিন্তু এইটা করতে পারেন। মেডিটেশন করলে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই সাথে টেনশন কমার কারণে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এইটা একটা চর্চার ব্যাপার। আমাদের দেশে অনেকে মেডিটেশন করেন, এটা ধর্মীয় কোনো চর্চা নয়, এটা মন ও দেহকে সুস্থ রাখার জন্য। আমি আমার দেহকে সুস্থ রাখার জন্য যদি দশ-বিশ মিনিট চোখ বুজে বসে থাকি এবং আমার মানসিক চাপ কমাতে পারি এইটা কিন্তু খুব ভালো। এইটা ধর্মীয় কোনো অনুশাসন নয়, এইটা দৈহিক চাহিদা বলতে পারেন।”

এমবি//