করোনা থেকে বাঁচতে প্রফেসর ডা. আবদুল্লাহর পরামর্শ (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:২৬ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:০৩ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মঙ্গলবার
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমছে না। একদিন কমলে, পরের দিনই বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় লকডাউন উঠে গেছে, আবার কিছু কিছু এলাকায় নতুন করে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। হতাশা ও আতঙ্কের মধ্যে কীভাবে নিজেকে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখা বা বাঁচানো যায় সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের চেয়ারম্যান ও ডিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।
একুশে টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য থাকতে হবে প্রতিকার ও প্রতিরোধ। প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হচ্ছে, এটি দিয়ে যে ভালো তা কিন্তু নয়। এটি হলো একপ্রকার এক্সপেরিমেন্ট পর্যায়ের। মনে রাখতে হবে রোগ হয়ে গেলেই মুশকিল। রোগ যেন না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য প্রতিকার-প্রতিরোধ এগুলো মেইনটেন করে চলতে হবে।
তিনি বলেন, রোগ হয়ে গেলে টেনশন, মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে গেলে আরও মুশকিল। আমাদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি, নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। বাইরে গেলে মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না। বারবার হাত ধুতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। বের হলে দূরত্ব মেইনটেন করে চলতে হবে যতটা সম্ভব। আবার বাইরে গেলে দ্রুত কাজ সেরে ঘরে ফিরে আসতে হবে।
করোনাভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে রোগ উল্লেখ করে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, কার মধ্যে এই ভাইরাসটি রয়েছে, তা জানা সম্ভব নয়। তাই দূরত্ব বজায় না রাখলে ভাইরাসটি আপনার মধ্যে চলে আসতে পারে। আমরা যদি এই নিয়মগুলো মেনে চলি তাহলেই এই সংক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব।
লকডাউন মানা না মানা সম্পর্কে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার জীবন, আমার সুরক্ষা নিজেকেই করতে হবে। শুধু নিজের জন্য নয় পরিবারের জন্যও। তাই আমার লকডাউন আমাকেই করতে হবে। সরকার বললো আমি মানলাম না, তাহলে তো হলো না। নিজের স্বাস্থ্যবিধি নিজেকেই মেনে চলতে হবে। প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমার লকডাউন আমাকেই পালন করতে হবে। আমার জীবন, আমার নিরাপত্তা, আমার সুরক্ষা আমাকেই করতে হবে।’
সতর্কতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শুধু নিজে ভাল থাকলেই হবে না, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী সবাইকে ভাল রাখতে হবে। এই উদ্যোগটা আমাদের সবাইকে নিতে হবে। যার যার অবস্থান থেকেই এই উদ্যোগ নিলে লকডাউন যেমন কার্যকরী হবে, তেমনি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।
ডা. আবদুল্লাহ বলেন, এভাবেই করোনাভাইরাস থেকে নিজে, পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, দেশবাসীকে বাঁচানো যায়। সবার পক্ষেই সুস্থ থাকা সম্ভব। কিন্তু আমার দায়িত্ব আমাকেই পালন করতেই হবে। শুধু একটা নয়, সবাইকে বাঁচানোর টার্গেট রাখতে হবে।
করোনাভাইরাসে সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে কোনটি সঠিক? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস এগুলো। কিন্তু এর সবগুলোই জনসাধারণের জন্য দরকার নেই। পিপিই পাবে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। পিপিই সাধারণ মানুষের জন্য নয়। সবার মাস্ক ব্যবহার ও বারবার হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না, হাঁচি বা কাশি আসলে টিস্যু কিংবা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। আবার এসব যেখানে-সেখানে ফেলাও যাবে না। এসব স্বাস্থ্যবিধি সবারই মেনে চলতে হবে।
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্রুত সময়ের মধ্যে কতটুকু ভালো সমাধান আনতে পারে? এ সম্পর্কে ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, শুধু আমাদের দেশ কেন পৃথিবীর বড় বড় দেশের এই রোগটি সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা নেই। যাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা রয়েছে তারাও এখন পর্যন্ত হিমশিম খাচ্ছে। নিত্যনতুন তথ্য উঠে আসছে। সামনে বিভিন্ন চিকিৎসা আসবে, ভ্যাকসিন আসবে। তবে ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করেই চলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আশা করি দ্রুত ভ্যাকসিন আসবে। তবে করোনা হয়তো নির্মূল হবে না, আমাদের করোনার সঙ্গেই বাঁচতে হবে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবন বাঁচাতে হবে এবং জীবিকা যেভাবে লাভ করা যায় সেভাবেই চলতে হবে।
দেখুন ভিডিও-
এএইচ/এমবি