সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি, নিখোঁজ ১
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৫৭ পিএম, ৩০ জুন ২০২০ মঙ্গলবার
সুরমা নদীর পানি কমার সাথে সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানিতে এখন পর্যন্ত এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন।
এদিকে, উজানের ঢল ও বৃষ্টিতে পানিবন্দী হয়েছে লাখো মানুষ। নদীর পানি উপচে সুনামগঞ্জ শহরের প্রবেশ করায় নুতনপাড়া, শান্তিবাগ, মরাটিলা, হাছননগর, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, পশ্চিম নুতনপাড়া, পূর্ব নুতনপাড়া উত্তর নুতনপাড়া, জামাইপাড়া, আরপিননগর, কাজীর পয়েন্ট, ষোলঘর, নবীনগর, ধোপাখালী, বাধনপাড়া, সুলতানপুর, হাছনবসত, ওয়েজখালী, উত্তর আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, সোমপাড়া,উকিলপাড়া, আলীপাড়া, মোহাম্মদপুর, বনানীপাড়াসহ পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের অসংখ্য ঘরবাড়িতে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শহরে বেশির ভাগ সড়কে ৫ থেকে ১০ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
নিচু এলাকার লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন। বন্যার পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর দোয়াবাজার, জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আবাসিক এলাকার সড়কগুলো ডুবে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অধিকাংশ এলাকার সড়কে এখন নৌকা চলাচল করছে।
শহরের ৬০ ভাগ বসতবাড়ি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বিশেষ করে যারা পাকা ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসবাস করছেন তারা ঘরের আসবাবপত্রসহ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছেন।
জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, সদরের ৯টি, বিশ্বম্ভরপুরের ৫টি, তাহিরপুরের ৭টি, জামালগঞ্জের ৪টি, ছাতকের ৫টি, শাল্লার ১টি দোয়ারাবাজারের ২টি, জগন্নাথপুরের ৩টি ও ধর্মপাশা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নসহ ৬১টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন।
সদরে ১১টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৮টি তাহিরপুরে ৩১ টি, জামালগঞ্জে ২৫টি ছাতকে ৩টি, দোয়ারাবাজারে ৩টি, শাল্লায় ১টি, ধর্মপাশায় ২০টি ও জগন্নাথপুর উপজেলায় ২টি ও ৪টি ছাতক, সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুরসহ ৪টি পৌরসভায় ২৩টি সহ মোট ১২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ১৯৪টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ৯টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ৬৬ হাজার ৮৬৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হাবীবুর রহমান জানান, ‘জেলায় ৯টি উপজেলায় ২৫ হাজার গবাদি পশুর গো খাদ্য সংকটে পড়েছে।’
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৪১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় চিড়া, মুড়ি, গুড় বিস্কুট, দিয়াশলাই, মোমবাতি, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুবর রহমান বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণের কোন সম্ভাবনা নেই। নদীর পানি দ্রুত কমে যাচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। প্রশাসন সার্বক্ষণিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।’
এআই/এমবি