করোনার সময়ে অ্যালার্জিকে অবহেলা নয়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:০২ পিএম, ১ জুলাই ২০২০ বুধবার
ঘরের কাজ করতে গিয়ে পরপর হাঁচি, চোখ দিয়ে পানি পড়া বা চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কিন্তু অনেকেই এগুলো গুরুত্ব দেন না। তবে নিয়মিত এমন সমস্যায় পড়লে তার অ্যালার্জি থাকার আশঙ্কা প্রবল। অল্পতেই রোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে সামান্য হাঁচি-কাশিই গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। এছাড়া করোনার সংক্রমণও কিন্তু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাই অবহেলা না করে এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিন।
করোনা পরিস্থিতিতে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে বিভ্রান্ত হতে পারেন সাধারণ মানুষ। কারণ গলা ব্যথা, গলা খুসখুস, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট এই উপসর্গগুলো দুটি রোগের ক্ষেত্রেই হতে পারে। কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে যদি এই উপসর্গগুলো দেখা দেয় তবে কখনই জ্বর থাকে না। এখানেই করোনাভাইরাস ও অ্যালার্জির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
শুধু করোনা সংক্রমণের সময়ে নয়, অ্যালার্জির প্রতিকার নিয়ে যে সারাবছরই ভাবা দরকার। রাস্তাঘাটের দূষণের ফলেই যে এই অ্যালার্জি হয় তা কিন্তু নয়। বাড়িতে থেকেও অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঝাঁড়ু দেওয়া, আসবাব পরিষ্কার করা, পর্দা বা বিছানার চাদর বদলানোর মতো কাজের মাধ্যমে বাড়ির ভিতরেই দূষণের কবলে পড়তে পারেন যে কেউ। এছাড়া বিছানা-সোফায় থাকা ‘ডাস্ট মাইট’ নামে এক ধরনের প্রাণী অ্যালার্জির অন্যতম উৎস বলে জানাচ্ছেন নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা।
ঘরের কাজ করার সময়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতেই সমস্যা আটকানো যাবে বেশ খানিকটা। তারপরেও অসুবিধা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভাল বলে অভিমত তাদের।
বাড়িতে থেকেও অ্যালার্জিতে ভোগার পিছনে ঘরের ভিতরেই ধূমপান, অতিরিক্ত ভারী পর্দা বা কার্পেটের ব্যবহার, পয়-পরিষ্কারের কাজে রাসায়নিক পদার্থের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং পোকামাকড় তাড়ানোর স্প্রে জাতীয় জিনিসেরও বড় প্রভাব রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বক্ষরোগ চিকিৎসকরা।
গরম এবং আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় ভারী পর্দা ও কার্পেট ঘরের মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করে। অনেকটা সময় এসি চললে তা আরও বেড়ে যায়। তাই ঘরে আলো-বাতাস চলাচল করতে দিতে হবে। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
খোলা জায়গায় ফেলে রাখা খাবার, ঠিক মতো শুকনো না-হওয়া বা দীর্ঘদিন ব্যবহার না-করা পোশাক থেকেও হতে পারে বিভিন্ন প্রকার অ্যালার্জি। যাদের আগে অ্যালার্জি রয়েছে এবং কী থেকে সমস্যা হয় তা জানা আছে, তাঁদের সেগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই উচিত।
অনেকের বিশেষ কিছু ফল বা সবজি খেলে অ্যালার্জির সমস্যা অনেক বেড়ে যায়। মুখে এবং গলায় চুলকানি, অস্বস্তি দেখা দেয়। কখনও এই সব খাবার কাটাকাটি করলে, ধুতে গেলে বা রান্না করতে গেলেও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়তে পারে। আপনার যদি জানা থাকে যে, কোন কোন খাবারে আপনার অ্যালার্জি বেড়ে যায়, তাহলে সেই সব খাবার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
অ্যালার্জির সমস্যায় চিকিত্সকের দেওয়া নাজাল স্প্রে ব্যবহার করে থাকেন অনেকে। কিন্তু এই নাজাল স্প্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকেই নিয়ম মেনে চলেন না। নাজাল স্প্রের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে নাকের ভেতরের অংশে এবং সাইনাসে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
কোভিড-১৯ মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, তাই অ্যালার্জি বা হাঁপানির রোগীদের উপরে মানসিক চাপ আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। এই অবস্থায় তাঁদের পরামর্শ, কেউ যদি ওষুধ খান, তা বন্ধ করা চলবে না কোনও ভাবেই। প্রয়োজনে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, ‘অ্যালার্জিতে যারা ভোগেন, তাদের দরকার খোলামেলা পরিবেশ। মাস্ক পরে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। আবার মাস্কের কাপড় থেকেও সমস্যা হচ্ছে। অথচ, এখন মাস্ক পরাটাও অত্যন্ত জরুরি। সে ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসায় যাতে ছেদ না পড়ে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সূত্র: আনন্দবাজার
এএইচ/