দ্বিতীয় দিনের মত বন্ধ ভারতীয় পণ্যের আমদানি
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৫:৩৩ পিএম, ২ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও কোন পণ্য আমদানি হয়নি বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। বেনাপোল বন্দরে তিন মাসের অধিক সময় ধরে আটকে থাকা বাংলাদেশি পণ্য রফতানির দাবিতে এ এলাকার রফতানিকারক সমিতি একজোট বেধে বুধবার (১ জুলাই) সকাল থেকে এ পথে আমদানি বন্ধ করে দেয়। তবে বেনাপোল বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় সহ¯্রাধিক পণ্য বোঝায় ট্রাক আটকা পড়েছে দুই দেশের বন্দরে। ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা চাচ্ছে আমদানি হলে রফতানি হতে বাধা কোথায়। যে প্রক্রিয়ায় আমদানি হচ্ছে একই প্রক্রিয়ায় রফতানিও চলুক।
করোনা সংক্রমনের শঙ্কায় ‘নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে গত ২২ মার্চ থেকে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে কোন রফতানি পণ্য গ্রহন করছে না। তবে ৭ জুন থেকে ভারত বেনাপোল বন্দরে আমদানি চালু করলেও রফতানি পণ্য নিচ্ছে না। ফলে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও ব্যাহত হচ্ছে রফতানি। বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রফতানিকারকরা। বৈদেশিক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। দেশে স্থলপথে যে রফতানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৯ হাজার টন বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়। ফলে এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।
বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতীয় চালকেরা পণ্য নিয়ে বেনাপোলে ঢুকতে পারলে বাংলাদেশি চালকেরা কেন পেট্রাপোলে বন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন না? তাদের দাবি বেনাপোল বন্দর এলাকা এখন করোনামুক্ত, গ্রিন জোনে রয়েছে। ফলে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ট্রাক চালকেরা সুরক্ষা পোশাক পরেই ভারতে যাবেন এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কোন কথার কর্ণপাত করছে না ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল থেকে পেট্রাপোলে ট্রাক প্রবেশের সবুজ সঙ্কেত না মেলা পর্যন্ত ভারতের ট্রাককে ও বেনাপোল বন্দরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক আনু বলছেন, করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণ দেখিয়ে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য গ্রহণ করছে না। ফলে আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে গেলেও রফতানি হয়নি কিছুই। এমনিতেই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। একতরফাভাবে রফতানি আটকে রাখায় এই ঘাটতি আরো বাড়ছে।
‘এমন পরিস্থিতিতে আমরা বহু দেন-দরবার করেও বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রফতানি করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই বাধ্য হয়ে বুধবার সকাল থেকে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেন ব্যবসায়ী নেতা আমিনুল হক।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরাও চাইছেন, বেনাপোল থেকে পণ্য আমদানি শুরু হোক। পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস জানান, বেনাপোল থেকে পণ্য রফতানির কাজ এই মুহুর্তেই শুরু হোক। না হলে বহু ব্যবসায়ী এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও। স্বাস্থ্য বিধি মেনে কাজ শুরু হোক দ্রুত, দু’পারের অসংখ্য মজদুরও আর্থিক সংকটে ধুকছেন, তাঁদের কথাও ভারত সরকারকে ক্ষতিয়ে দেখতে হবে।
ভারতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি সাবেক বিধায়ক গোপাল শেঠ জানিয়েছেন, বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য আমদানি শুরু করার জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে তিনি চিঠি দিয়েছেন।
পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়শনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বেনাপোলের বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের দাবি আমরা কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারিনা, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দু’দেশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছেই আমাদের এ্যাসোসিয়শনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য ফের সচল করতে হবে।
পেট্রাপোল ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির ম্যানেজার শুভজিৎ মন্ডল বলেন, বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য আমদানির কাজ শুরু করার জন্য রাজ্যে সরকারের প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা আসেনি। রাজ্যের কোনও স্থলবন্দর থেকেই পণ্য আমদানির জন্য রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি এখনও পর্যন্ত। নির্দেশিকা এলেই বেনাপোল বন্দর থেকে রফতানি পণ্যবাহী ট্রাক গ্রহণ করতে কোন বাধা থাকবে না।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দর খোলা আছে। বাণিজ্য সচলের জন্য তারা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরকে//