ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

নতুন গভর্নর নিয়োগে বিলম্ব, দায়িত্বে মনিরুজ্জামান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৯ পিএম, ২ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৩২ পিএম, ৩ জুলাই ২০২০ শুক্রবার

এসএম মনিরুজ্জামান

এসএম মনিরুজ্জামান

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩ জুলাই (শুক্রবার)। দ্বিতীয় মেয়াদে ২ জুলাই ছিল তার শেষ কর্মদিবস। তাই তার অবর্তমানে ডেপুটি গভর্নর-১ এসএম মনিরুজ্জামান গভর্নরের কাজগুলো দেখবেন এবং ডেপুটি গভর্নর-২ আহমেদ জামাল নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ কথা বলা হয়েছে। অফিস আদেশটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে গভর্নরের যোগদানের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-১ এসএম মনিরুজ্জামান এবং ডেপুটি গভর্নর-২ আহমেদ জামাল নিজ নিজ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

ডেপুটি গভর্নর-১ এসএম মনিরুজ্জামান গভর্নরের দৈনিক ডাক দেখবেন। ডাক সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবেন। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নরকে ডেপুটি গভর্নরদ্বয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করবেন। পাশাপাশি প্রয়োজনে কার্যোত্তর অনুমোদন নিবেন। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আবারো রাখতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হবে। গত ৮ জুন এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। নিয়মানুযায়ী সংশোধনীটি সংসদের বাজেট অধিবেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু এটি নোটিশে আনা হলেও শেষ পর্যন্ত সংসদে উত্থাপিত হয়নি। জাতীয় সংসদের অধিবেশন বুধবার পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। তাই সংশোধনীটি পাস না হওয়া পর্যন্ত দুজন ডেপুটি গভর্নর দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে, জানা গেছে, বিদ্যমান বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার- ১৯৭২ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ নেই। কারণ, আজ তার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার অনুযায়ী, ৬৫ বছর হয়ে গেলে কেউ গভর্নর থাকতে পারেন না। 

তবে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে ফজলে কবিরকেই আরেক দফায় গভর্নর পদে রাখতে চাইছে সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয় গত মে-তে। এছাড়াও গভর্নরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে অনির্দিষ্টকাল করার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গত মে মাসের প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও। গত ৮ জুন মন্ত্রীসভার বৈঠকে ওই প্রস্তাব পরিবর্তিত হয়ে গভর্নরের বয়স ৬৭ বছরের জন্য অনুমোদন পায়। যদিও ৮ জুলাই পর্যন্ত সংসদ মুলতবি হওয়ায় অর্থ বিল, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাশ হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধনের বিলটি আটকে যায়। যে কারণে বর্তমানে গভর্নর বিহীন বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিহীন থাকার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, লুতফর রহমান সরকার দুই বছরের জন্য গভর্নর ছিলেন ১৯৯৮ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর ২৪ নভেম্বর গভর্নর হন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। মাঝের তিন দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি ছিল গভর্নরবিহীন। তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০১ সালের ২২ নভেম্বর বিদায় নেন তিনি। এর সাত দিন পর ২৯ নভেম্বর গভর্নর পদে যোগ দেন ফখরুদ্দিন আহমেদ। এমনকি ২০১৬ সালে আতিউর রহমান বিদায় নেয়ার পরও ১৬ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্তও বাংলাদেশ ব্যাংক ছিল গভর্নরবিহীন। 

এদিকে, সাধারণভাবে ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ১৯ মার্চ। কিন্তু গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৬৫ বছর অর্থাৎ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। আইন অনুযায়ী, সরকার চার বছরের জন্য কাউকে গভর্নর নিয়োগ দিলেও এ মেয়াদ আরেক দফা বাড়াতে পারে।  

আরকে//এনএস/