ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সাংবাদিকতায় ভিন্ন ধারার কিংবদন্তি গেদুচাচা ও খোন্দকার মোজাম্মেল হক

এম এস দোহা

প্রকাশিত : ০৯:৩৩ পিএম, ৪ জুলাই ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৬:৩৯ পিএম, ৫ জুলাই ২০২০ রবিবার

খোন্দকার মোজাম্মেল হক

খোন্দকার মোজাম্মেল হক

আশির দশকের শেষ প্রান্ত। এরশাদের সামরিক শাসনামলের শ্বাসরুদ্ধকর প্রেক্ষাপট। গণমাধ্যমে তখন এরশাদের বিরুদ্ধে বলা বা সমালোচনা করা খুবই কঠিন। কথা বলতে হতো খুবই কৌশলে। বিরোধী দলের আন্দোলনে রাজপথ উত্তপ্ত। বিবিসির আতাউস সামাদ, ভয়েস অব আমেরিকার গিয়াস কামাল চৌধুরী, যায় যায় দিনের শফিক রেহমান, বিচিন্তার মিনার মাহমুদ, মতিউর রহমান চৌধুরীসহ বড় বড় সাংবাদিকেরা অনেকেই নানাভাবে হয়রানির শিকার। অথচ ঠিক এরকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ১৯৮৮ সালের ১ জুন হঠাৎ অভিনব নতুন ধারায় সাংবাদিকতার সূচনা করেন খোন্দকার মোজাম্মেল হক। সাপ্তাহিক সুগন্ধা পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে শুরু করলেন ইতিবাচক সমালোচনা। অর্থাৎ সবকিছু বলবেন, তবে একটু অন্যভাবে। এই যেমন- তার বিখ্যাত কলাম ‘গেদু চাচার কলাম’। 

‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, এরশাদ চাচা। আমার ছালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি ছহি-ছালামতে আছেন। আমিও মোটামোটি। চাচাগো, আমাকে আপনার না চেনারই কথা। ৬৮ হাজার গ্রামের কোটি মানুষের মধ্যে আমি একজন অধম নাখান্দা নালায়েক। থাকি অজোপাড়া গাঁয়ে। সকলে আমারে গেদুচাচা বলিয়া ডাকে। পুতে ডাকে চাচা। আবার বাপেও আমাকে কহে চাচা। মানে আমি সকলের চাচা। আপনিও আমাকে চাচা বলিতে পারেন।’

প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় সারা দেশে। সামরিক শাসক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপাতি এরশাদের সাথে মশকরা! তাও আবার পত্রিকায় প্রকাশিত খোলা চিঠিতে- হাস্যরসের মাধমে! সহজ সরল গ্রাম্য ভাষায় মানুষের সমস্যা উপস্থাপন করতে পারতেন তিনি। রাষ্ট্র ও সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতির দূর্বলতাগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো ছিল তার অন্যতম উদ্দেশ্য। ভিন্ন ধারার এই সাংবাদিকতা পথিকৃত খ.ম.হ। পরবর্তীতে এই গেদু চাচার কলাম অনেকে লিখেছেন, সে এক অন্য ইতিহাস। অনেকের মতো আমিও ছিলাম এই কলামের নিয়মিত পাঠক। যা ছিলো অনেকটা নেশায় আসক্তির মতো। রাষ্ট্রপতি এরশাদ এই চিঠিটি নিয়মিত পড়তেন। অসংখ্য সমস্যার সমাধান ও দিক নিদের্শনা দিতেন গেদুচাচার চিঠির সূত্রধরে। সাপ্তাহিক সুগন্ধা থেকে পরবর্তীতে সাপ্তাহিক সূর্যোদয়, আজকের সূর্যোদয়ে তিনি এ কলাম নিয়মিত লিখেছেন।

তখন সবেমাত্র আমার ঢাকায় আগমন। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কোর্সের  সহ-সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছি। সেইসাথে দৈনিক দেশবাংলায় ‘জীবন প্রবাহ’ নামক মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদন লিখতাম। গেদুচাচাকে দেখা ও পরিচয় হওয়ার প্রচণ্ড আগ্রহ। দেখা করলাম। আলাপচারিতায় জানতে চাইলাম- এরশাদের মতো সামরিক শাসকের সাথে ঠাট্টাচ্ছলে লেখালেখির দুঃসাহস ও রহস্য সম্পর্কে। জবাবে তিনি বলেন, কৌশলী হলে স্ত্রীর চেয়ে শ্বাশুড়ীর সাথে বেশী ঠাট্টা মশকরা করা যায়। কথা-বার্তায়, চাল-চলন, সাংবাদিকতায় সকল ক্ষেত্রেই তিনি সহজ সরল। একবার মানবাধিকার বিষয়ক কর্মশালায় গেদুচাচাকে প্রশিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানালাম। সম্পর্ক আরো গাঢ় থেকে প্রগাঢ় হয়। মাঝে মাঝে দু-একটি লেখা দিতাম। খুব গুরুত্ব সহকারে ছাপাতেন। মূলত এভাবেই জড়িয়ে পড়ি খোন্দকার মোজাম্মেল হক, সুগন্ধা ও আজকের সূর্যোদয়ের সাথে।

৯০’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর দায়িত্ব নিলেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এবার তার কলামেও পরিবর্তন আসলো। গেদুচাচা তাকে ‘কডু চাচা’ সম্বোধনের মাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দেন। ‘কডু মিয়া’ ডাক নামটি সম্পর্কে বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের পরিবারের সদস্যদেরাও হয়তো জানতেন না।

সুগন্ধা, সূর্যোদয়, আজকের সংবাদ গ্রুপের কার্যালয় তৎকালে সর্বদা থাকতো জমজমাট। পত্রিকার কার্যালয়ে থাকতো সিনিয়র, জুনিয়র সাংবাদিকদের মিলন মেলা। আবদুল গাফফার চৌধুরী, এবিএম মুসা, মতিউর রহমান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান মিলন, হেদায়েত হোসাইন মোরশেদ, নাজিম উদ্দিন মোস্তান, শাহজাহান সরদার, আবু তাহের, নঈম নিজাম, স্বপন দাশ গুপ্ত প্রমূখরা কলাম লিখতেন। ভাবী ফারজানা হক লাকী আমাদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ যোগাতেন। যতটুকু মনে পড়ে ১৯৯০ এর শুরু থেকে তিনি নিজের নামে আজকের সূর্যোদয় পত্রিকা অনুমোদন নেন। প্রথম থেকেই পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা পায়। তখন নিউজ ডেস্কে ছিলাম রানা আশরাফ, মাহফুজুর রহমান, ইকবাল হোসেন সানু, আজমল হক হেলাল, শামীম মোহাম্মদ, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হালিম সিদ্দিকীসহ আমরা বেশ ক’জন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে শাবান মাহমুদ, চট্টগ্রাম ব্যুরোতে জুবায়ের সিদ্দিকী, সোহেল হায়দার চৌধুরী, সিলেটে লতিফ নতুন, কুমিল্লায় ফিরোজ মিয়া নতুনসহ দেশে বিদেশে আরো অসংখ্যা সংবাদ কর্মী। জেনারেল ডেস্কে খোন্দকার বেলায়েত হোসেন, অহিদুজ্জামান হিরু, ইউসুফ আলী, খায়রুল আলম ও জহিরুল ইসলাম প্রমূখ।

 

রহমান মাহফুজ বাসস-এ যোগদানের পর প্রধান প্রতিবেদকের দায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে। পাশাপাশি তাঁর সম্পাদনায় পাক্ষিক আপনজন, মাসিক সোনারতরী, বাণিজ্যবার্তার গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয় আমাকে। অসংখ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিবীদদের ছবি ও সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছি। কখনো প্রশ্ন তোলেননি। জানতেন হয়তো ফকিরাপুলের ডাব অথবা বাদশা হোটেলের ডাল গোস্তের বেশী আমার চাহিদা নেই।

তৎকালীন অনেক দৈনিকের চেয়ে এই সাপ্তাহিকের গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা কম ছিলোনা। সার্বিকভাবে পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনায় জৌলুসে হয়তো কিছুটা ঘাটতি ছিলো। তবে নীতি, আদর্শ, সততা, নৈতিকতা ও পাঠকপ্রিয়তা ছিলো পরিপূর্ণ। অনেকে দূর থেকে ভাবতো এরশাদের কাছ থেকে বাড়ী-গাড়ী-টাকা দু’হাতে হাতিয়েছেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে শত কষ্ট ও আর্থিক অনটনের মাঝেও পত্রিকার বিজ্ঞাপনের জন্য কোন শিল্পগোষ্ঠীর কাছে তাকে দিয়ে অনুরোধ বা ফোন করানো যেত না। বলতেন- অনুরোধ, তেলমারা, আমাকে দিয়ে হবেনা। মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে তাঁর ছোট মেয়েকে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন। বর্তমান সরকারের অনেক মন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিক কর্মী, তাঁর আপনজন। অথচ তাদেরকেও বিষয়টি জানাননি। গ্রামের বাড়ীতে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে নিরবেই সমস্যার সমাধান করেন। অর্থ উপার্জনে মোটেও বৈসয়িক ও কৌশলী ছিলেননা তিনি। টাকার চেয়ে আড্ডা আর জ্ঞান চর্চায় বেশী সময় ব্যয় করতেন। কথা বলা শুরু করলে আর থামানোর সুযোগ নেই। রাজনীতি, দর্শন, ধর্ম, ইসলাম সুফিবাদ, শিল্প-সংস্কৃতি সব কিছুতেই দখল ছিল তার। শোনার চেয়ে বলতেই বেশী পারদর্শী ছিলেন তিনি। তার জ্ঞান ও পাণ্ডিতের কাছে নীরব দর্শকের মতো শ্রবণের বিকল্প ছিলনা।

একবার পবিত্র হজ্ব পালনে সৌদি  আরবে অবস্থানকালে গেদুচাচার চিঠি লেখার জন্য আমার প্রতি আস্থা রাখেন। মনে হয়, ৪ সপ্তাহ আমি লিখেছিলাম। দেশে ফিরে বললেন, খুব ভালো হয়েছে। পত্রিকায় বর্ষপূর্তি ও ঈদ সংখ্যার লেখক খ.ম.হ অর্থাৎ গেদুচাচার সাক্ষাৎকার নিতে হতো আমাকে। পাঠক ও জনগনের মনে কথা, দেশের চলমান প্রেক্ষাপট কৌশলে বের করতাম গেদুচাচার মুখ থেকে। কল্পনাধর্মী এ সাক্ষাৎকারও যথেষ্ট পাঠক প্রিয়তা পায়। সেই সাথে আমাদেরকেও জড়িয়ে ফেলেন ভালবাসা ও মায়ার বন্ধনে। তখনকার সময়ে অনেক দৈনিক পত্রিকায় লোভনীয় বেতন ও অফার ফিরিয়ে দিয়েছি, শুধু মোজাম্মেল ভাইয়ের ভালবাসার মায়াজালে। কোনদিন মনে হয়নি একটা অফিসে কর্মচারী হিসাবে কাজ করছি। দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে কারো সাথে মন খারাপ হয়নি তার। বিগত চার দশকে সাংবাদিক তৈরীর বাতিঘর খোন্দকার মোজাম্মেল হক একজন শিক্ষক হিসাবে অনুকরণীয়। তার অনেক শীষ্য এখন বিভিন্ন সেক্টরে শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত।

পত্রিকা পরিচালনা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে খোন্দকার মোজাম্মেল দর্শন ছিলো একশত ভাগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ। ৯০ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকের কাছে আজকের সূর্যোদয় ছিলো অনুপ্রেরণা ও গাইডলাইনের মতো। আজকের সূর্যোদয় একমাত্র সাপ্তাহিক যা দীর্ঘ ৩০ বছর বিরামহীনভাবে প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকাটির চরিত্র, নীতি, আদর্শও অটুট। যদিও করোনাকালে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে। সাথে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক খোন্দকার মোজাম্মেল হকের জীবন খাতায় হয়েছে ছন্দপতন। ব্যাংকার ছোট ছেলে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে সাহস, উৎসাহ ও সেবাযত্ন করেন তিনি। এক পর্যায়ে আক্রান্ত হন নিজেও। সাহসিকতার সাথে বাসায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেদুচাচা খ্যাত সাংবাদিক খোন্দকার মোজাম্মেল হকের জন্ম  ১৯৫০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন গতিয়া পূর্ব সোনাপুর গ্রামে। তাঁর পিতা এটিএম খোন্দকার ওবায়দুল হক ছিলেন একজন শিক্ষক। মাতা সৈয়দা আজিজুন নেছা খানম ছিলেন গৃহিণী।

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, বিদ্রোহী ও স্বাধীনচেতা। ১৯৬৪ সালের ১১ মার্চ ছাত্র গণহত্যার প্রতিবাদে সারা দেশে ধর্মঘট ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার কর্মসূচি পালন এবং পাকিস্তানের উত্তোলিত জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে হুলিয়া প্রাপ্ত হন। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন তিনি আটক হলেও কৌশলে পালিয়ে যান। ১৯৬৬ সালে তিনি ফেনী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক হন, ১৯৬৭ সালে ফেনী মহকুমা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এম এস দোহা

ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনের সময় খোন্দকার মোজাম্মেল হক এবং শহীদ সৈয়দ মাওলানা ওয়ায়েজ উদ্দিন নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সেই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়। ১৯৬৯ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক জেলা ফেনী স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভায় খোন্দকার মোজাম্মেল হক স্বশরিরে উপস্থিত ছিলেন। সেই ঐতিহাসিক ৭ মাচের ভাষণ শোনার পর দিন ৮ মার্চ তিনি ফেনীতে আসেন। এসেই নিজ হাতে জাতীয় পতাকা তৈরি করেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নোয়খালী জেলার (গ্রেটার জেলা) সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ফেনী মহকুমার আহ্বায়ক হিসেবে ৯ মার্চ ১৯৭১ ফেনীর ট্রাংক রোড়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বিশাল জনসভায় লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি।

২৭ মার্চ ফের্নীতে একটি পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্প ঘেরাও করেন খোন্দকার মোজাম্মেলসহ মুক্তিকামী জনতা। মুক্তিকামী জনতার ওপর গুলি ছুড়ে পাকিস্তান হানাদার। পাল্টা আক্রামণে পাক হানাদারকে খতম করা হয়। ১৯৭১ সালে ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত হলে বিজয় মিছিলের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ছিলেন খোন্দকার মোজাম্মেল হক। মিছিল শেষে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি।

ফেনী মুক্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া থানার প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক পূনর্বিন্যাস কমিটির আহ্বায়ক ও নোয়াখালী-১ নির্বাচনী এলাকার বিশেষ রাজনৈতিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। লেখালেখি ছিল তাঁর সারা জীবনের অন্যতম অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস "তোমার সংগে যাবো", "আরেক একাত্তর " এবং কাব্যগ্রন্থ "রক্তাক্ত স্মৃতি ১৯৭১ সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে তাঁর।

২০২০ সালের ২৮ জুন শনিবার গেদুচাচা ঢাকার সেগুনবাগিচার নিজ বাসায় ডায়াবেটিস জনিত কারণে শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। সন্ধ্যায় তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ঢাকার উত্তর বাড্ডা এএমজেড হাসপাতালে ভর্তি হন। ২৯ জুন বিকাল ৪টায় তিনি চির বিদায় নেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন পুত্র, দুই মেয়ে, দুই ভাই, পাঁচ বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান।

লেখক: কলামিস্ট

আরকে//এনএস/