চলতি অর্থ বছরের ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য অর্জন কঠিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৪৫ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০২:৫৪ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২০ সোমবার
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আঘাতে এ মুহূর্তে দেশের সার্বিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এরই মধ্যে কর্মহীন ও হতদরিদ্র হয়ে পড়েছে কয়েক কোটি মানুষ। বিপর্যয় নেমে এসেছে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে। বন্ধ আছে সব ধরনের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।
ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে কৃষি ও পর্যটন খাতে। পুরোপুরি টালমাটাল হয়ে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্য খাত। বিগত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে চাপের মুখে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসছে ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার কাছাকাছি।
আর এ জন্য এবার বাজেটের লক্ষ্য ধরা হয়েছে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্নআয়ের মানুষকে পুনর্বাসন করা। এই বাজেটে এনবিআর ও এনবিআরবহির্ভূত খাত মিলিয়ে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে ভ্যাট থেকে। এই খাতে এনবিআরকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আয়কর থেকে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং শুল্ক খাত থেকে আদায় করতে হবে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এনবিআরকে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। বাধ্য হয়ে সরকারকে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে।
তবে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা গেলে গত অর্থ বছরের তুলনায় আদায় কিছুটা বাড়তে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। এ জন্য ভ্যাট আইন কার্যকরে এনবিআর ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে একসাথে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থাকলেও ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। ভ্যাট থেকে এসেছে ৮২ হাজার কোটি টাকা। করোনা সংকটে চলতি অর্থবছরেও ভ্যাটসহ রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
২০১২ সালের ভ্যাট আইন এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ব্যবসায়ী ও এনবিআর দু’পক্ষেরই দায় দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন আইনটি বাস্তবায়ন করা গেলে ভ্যাট আদায়ে খানিকটা গতি আসবে। এ অবস্থায় সমন্বিতভাবেই আইনটি বাস্তবায়নের পরামর্শ এসেছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এনবিআরের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। লক্ষ্যমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে কর্মকর্তারা একদিকে চাপে থাকবেন, অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারার একটা গ্লানি ভেতরে ভেতরে কাজ করবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘এনবিআরের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করা ঠিক হবে না। কারণ, করোনার এই বাস্তবতায় বিভিন্ন সেক্টরে ছাড় দিতে হচ্ছে। আয়করে ছাড় দিচ্ছে। ভ্যাটেও ছাড় দিতে হচ্ছে। ফলে আদায় করতে পারবে না। এনবিআরের জন্য চাপ হবে। কিন্তু তাদের কিছুই করার থাকবে না।’
এসএ/