ফেসবুক-ইউটিউবের যেসব বিষয় বিপদের কারণ হতে পারে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:০০ পিএম, ১৩ জুলাই ২০২০ সোমবার
নিজেদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা ইন্টারনেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কোন ধরনের সুযোগ নেই। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে বাংলাদেশে গত বছর দেড়েক ধরে বেশ আলোচনা হচ্ছে। যারা ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন, তাদের সবারই এ আইনটি সম্পর্কে জানা দরকার। এর কারণ হচ্ছে আপনি নিজের অজান্তে এমন কোনও ভুল করে বসছেন না তো? যার মাধ্যমে হয়তো এই আইনের দ্বারা আপনি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। হতে পারে আপনার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, আবার হতে পারেন আপনি গ্রেফতার।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কী?
একজন ব্যক্তি তিনি যদি কোনও ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস (মোবাইল হতে পারে কিংবা কম্পিউটার হতে পারে) ব্যবহারের মাধ্যমে অথবা কোনও ডিজিটাল প্লাটফর্মে আরেকজন ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যা কিংবা মানহানিকর কিছু বলেন বা কোনও বিষয়ে তিনি কোন ধরনের গুজব রটনা করেন, কোনও বানোয়াট তথ্য তিনি শেয়ার করেন। যার ফলে রাষ্ট্রের আইন
শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং এটি অন্যের জন্য যদি ক্ষতিকর হয় সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে।
কোন কোন বিষয় এই আইনের মধ্যে পড়ে তা এবার জেনে নেওয়া যাক...
ডিজিটাল ডিভাইস ও কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশ
অপরাধ করার উদ্দেশে কেউ যদি অন্য কোন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ডিজিটাল ডিভাইসে (কম্পিউটার, মোবাইল) প্রবেশ করেন তাহলে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই কাজ নিজে না করে যদি অন্য কাউকে করতে সহযোগিতা করেন তাহলেও একই ধরনের শাস্তি হতে পারে। এই শাস্তি হচ্ছে তিন বছরের কারাদণ্ড।
কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি করা
আপনি যদি কারও কম্পিউটার কিংবা কম্পিউটার সিস্টেমের ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করেন তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তার দৃষ্টিতে আপনি অপরাধী সাব্যস্ত হবেন। উদাহরণ স্বরূপ, কোন ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করা কিংবা আপনি যদি কারও কম্পিউটার সিস্টেম থেকে তথ্য-উপাত্ত তার অজান্তে সংগ্রহ করেন এ জন্য আইনে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০
লাখ টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া একজন ব্যক্তি উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা
এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। এখানে সাজার মাত্রাও বেশি। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রোপাগান্ডা-প্রচার চালানো হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাজা হবে। এ কাজ নিজে না করে যদি অন্য কাউকে করার মদদ দেয়া হয় তাহলেও একই ধরনের সাজায় দণ্ডিত হবেন। এর সর্বোচ্চ সাজা ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ কোটি
টাকা জরিমানা। অথবা উভয় প্রকার সাজাও হতে পারে।
ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি
আইনে বলা আছে, কোন ব্যক্তি যদি অনাধিকার চর্চার মাধ্যমে অন্য কোনও কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের তথ্য পরিবর্তন, মুছে ফেলা কিংবা অন্য কোন ধরনের অপরাধ হয় এমন কিছু করেন তাহলে এটি হবে ডিজিটাল জালিয়াতি। উদাহরণ, কোনও ব্যক্তি যদি আরেকজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তার তথ্য মুছে ফেলা কিংবা নতুন কোন তথ্য যুক্ত করে তাহলে এটি ডিজিটাল জালিয়াতি। এটি কারও ইমেইলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যও হতে পারে। এ জন্য ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। এমন কী উভয় প্রকার দণ্ড হতে পারে।
পরিচয় প্রতারণা এবং ছদ্মবেশ ধারণ
আপনি যদি অন্য কোনও ব্যক্তির নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্য যেকোন ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলেন তাহলে এটি এক ধরনের প্রতারণা। এটি করা যাবে না। এর শাস্তি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা। কিংবা উভয় প্রকার সাজাও হতে পারে।
আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভয় দেখানো
যদি অনলাইনে এমন কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন যেটি মিথ্যা হওয়া সত্ত্বেও (আপনি জানেন এটি মিথ্যা) কোনও ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটি করছেন এবং এটির জন্য যদি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় তাহলে এটি আইনে অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে। এ অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা জরিমানা
হতে পারে।
অনুমতি ছাড়া পরিচিত তথ্য ব্যবহার
আপনি যদি কারও অনুমতি ছাড়া তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড নম্বর ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে এগুলো ইন্টারনেট বা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ করেন তাহলে এটি অপরাধ। যদি কারও যৌন হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয় কিংবা কারও অজ্ঞাতে শারীরিক তথ্য ও ছবি ধারণ কিংবা সেগুলো প্রকাশ বা ইন্টারনেটে ব্যবহার করা হয় তাহলে
সেটিও ডিজিটাল আইনে অপরাধ। এর শাস্তি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা। কিংবা উভয় প্রকার সাজাও হতে পারে।
ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত
যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য ওয়েবসাইটে কিংবা ইন্টারনেটে কিছু প্রকাশ করে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে।
মানহানিকর তথ্য প্রকাশ
যদি কোনও ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এ ধরনের অপরাধ আপনি করেন তাহলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। এছাড়া উভয় প্রকার দণ্ডও হতে পারে। এ মানহানির বিষয়টি বাংলাদেশের অন্য আইনেও বলা আছে। তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারণ কার কিসে মানহানি হবে আর মানহানি হবে না সেটি
কিন্তু অত্যন্ত বিতর্কের বিষয়। অনেকেই বলেন যদি কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করা হয় তাহলে কি সেটি সেই ব্যক্তির মানহানি হবে? এটি কিভাবে নির্ধারণ হবে। সুতরাং এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।
কীভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখবেন?
যে কোনও তথ্য শেয়ার করার বিষয়ে অত্যন্ত জরুরি হচ্ছে এটি যাচাই করে নেওয়া। সেটি সত্য কি মিথ্যা, তা যাচাই করে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় আমরা নানাধরনের মন্তব্য করে থাকি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে। এই ধরনের মন্তব্য করার আগে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এ ধরনের মন্তব্য কারও জন্য প্রতিহিংসামূলক কিনা, সে ব্যক্তির মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করছে কিনা, কিংবা কোনও ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে না। কাজেই যে কোনও মন্তব্য করার আগে অবশ্যই এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এএইচ/এমবি