করোনা সচেতনতায় বাগেরহাটে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা (ভিডিও)
এইচ.এম মইনুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:২৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:৩০ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার
করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ নিশ্চিত, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুষ্টি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বার্তা পৌঁছে দিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বাগেরহাটের স্বাস্থ্যকর্মীরা। দরিদ্র ও অস্বচ্ছল মানুষদেরকে দিচ্ছেন বিনামূল্যে ডিটার্জেন পাউডার। বিতরণ করছেন পুষ্টি বার্তার লিফলেট, হ্যান্ডস গ্লোবস, স্যানিটাইজার ও মাস্ক। উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্পের সহযোগিতায় পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও প্রশাসন।
করোনা পরিস্থিতির বিস্তার ঘটার পরে উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্পের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উদ্যোগে বাগেরহাট জেলার ৪টি উপজেলায় স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ নিশ্চিত, গ্রামের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুষ্টির বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। মোংলা, শরণখোলা, মোল্লাহাট ও কচুয়া উপজেলার ৬৩ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকারা বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। উঠান বৈঠক ও ব্যক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও করোনা সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সোপি ওয়াটার তৈরির পদ্ধতি শেখাচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে মাত্র চার চামচ অর্থ্যাৎ ১ টাকার ডিটার্জেন পাউডার দেড় লিটার পানির সাথে মিশিয়ে সোপি ওয়াটার তৈরি করা যায়। যা দিয়ে একজন মানুষ আশি বার হাত ধুতে পারেন।
পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা মুক্তি রানী ডাকুয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্পের পক্ষ থেকে আমাদের হ্যান্ডস গ্লোবস, স্যানিটাইজার ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে। আমরা মানুষের বাড়ি পুষ্টি বার্তা সম্বলিত লিফলেট লাগিয়ে দিচ্ছি। মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন ও করোনা মুক্ত থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি। সোপি ওয়াটার তৈরি ও হাত ধোয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি।
কচুয়া উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের গৃহবধু সাথী ঘরামী, লতা মৃধা, সুপ্রিয়া, লিলিসহ কয়েকজন বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পরে স্বাস্থ্য আপারা আমাদের বাড়িতে এসে পুষ্টিকর খাবার, হাত ধোয়ার পদ্ধতি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। যার ফলে আমরা অনেককিছু শিখতে পারছি। আমরা এখন পরিবারকে সুস্থ রাখার জন্য চেষ্টা করতে পারব।
বৃদ্ধা বকুল বলেন, আমরা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে বিশ্বব্যাপি করোনা ভাইরাস আক্রমন করবে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের বাড়ি বাড়ি এসে স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেককিছু শিখাচ্ছে। আমরা বার বার হাত ধোবো। নিজেরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকব, বাচ্চাদেরও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখব। পুষ্টিকর খাবার খাব। এগুলো আমাদের ভবিষ্যতেও যে কোন দুর্যোগে কাজে দিবে।
স্থানীয় বিপ্লব বলেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ও স্বাস্থ্য কর্মীরা যে কাজ করছে এতে এলাকাবাসী সচেতন হচ্ছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়তে এদের প্রচেষ্টা কাজে লাগছে।
শিক্ষিকা অনুলা মিত্র বলেন, স্বাস্থ্য আপারা আমাদেরকে সচেতন করার জন্য অনেক চেষ্টা করছেন। যার ফলে সত্যিই এলাকার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। শুধু করোনা পরিস্থিতি নয় দেশ স্বাভাবিক হলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই ধারা অব্যাহত রাখার দাবি জানান এই নারী।
কচুয়া উপজেলার বারুইখালি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সুব্রত সাহা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উদ্যোগে ও উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্পের সহযোগিতায় করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করছি। শুধু ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা মানুষদের নয়, আমাদের কর্ম এলাকায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও আমরা সচেতনতা মূলক কাজ করছি। উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্পের প্রদান করা ডিটার্জেন পাউডার বিনামূল্যে বিতরণ করছি।
উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্প (ক্রেণ) এর কচুয়া উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মোসাঃ মাহফুজা আক্তার মনি বলেন, বাগেরহাট জেলার মোংলা, শরণখোলা, মোল্লাহাট ও কচুয়া উপজেলায় আমরা কাজ করছি। এই উপজেলা গুলোর ৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকাদের মাধ্যমে আমরা মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করেছি। বিনামূল্যে ১০ হাজার ৫’শ মানুষের মাঝে ডিটার্জেন পাউডার বিতরণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় আমরা হ্যান্ড গ্লোবস, স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিতরণ করেছি।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত দেবনাথ বলেন, উন্নত পুষ্টির জন্য সমন্বিত প্রকল্পের অধীনে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যে কাজ করছে তা প্রশংসার দাবিদার। তারা আমার উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রান্তিক জনগোষ্টির মাঝে ডিটার্জেন পাউডার, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোবস ও স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন। এর ফলে স্থানীয় মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক ক্ষেত্রে সচেতন হতে পারছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এটি খুবই যুগোপযোগী উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
এমবি//