ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সমৃদ্ধ হচ্ছে অনলাইন ওয়েব সিরিজ প্ল্যাটফর্ম

দিলরুবা সুমী

প্রকাশিত : ০৩:২৯ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:২৬ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

খুব অল্প সময়ের মধ্যে দর্শকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওয়েব সিরিজ। হাতে থাকা মোবাইলে নিজের সুবিধামতো সময়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়াই দেখা যায় বলে ওয়েব সিরিজের দিকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকছেন বিনোদনপ্রেমী দর্শকরা। বিঞ্জ, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, জি ফাইভ, হইচইসহ অনলাইনভিত্তিক স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সাথে নির্মাতারাও মানসম্পন্ন ও জনপ্রিয় কনটেন্ট তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। 

নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা অথবা জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের গল্প স্ক্রিনে উপস্থাপনের মাধ্যমে দর্শকদের বিনোদনের খোরাক যোগানোর পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ হচ্ছে ওয়েব সিরিজ। ওয়েব সিরিজে দর্শকদের আকৃষ্ট করতে অ্যাকশন, ক্রাইম থ্রিলার, কমেডি কিংবা জীবন দর্শনমূলক ছোট ছোট গল্পকে নাটকে রূপ দেয়া হয়। গ্রাহকরাও তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী সিরিজ দেখার জন্য বেছে নিচ্ছেন তাদের প্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম।  

ভারতে এই ভিডিও স্টিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে গত চার বছর আগে আয় করেছিল ছিল ৯ হাজার কোটি রুপি যা বর্তমানে ২০ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতে বড় অংঙ্কের বৈদেশিক বিনিয়োগও এসেছে। ইতোমধ্যে এ শিল্প থেকে ব্যাপক পরিসরে ব্যবসা করছে দেশটি।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং পিআই স্ট্র্যাটেজির গত বছরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে দুই লাখের বেশি আর্ন্তজাতিক ওটিটি সাবস্ক্রাইবার আছে এবং এর থেকে প্ল্যাটফর্মগুলোর আয় প্রায় ২শ’ কোটি টাকা। অথচ বাংলাদেশে কোন কনটেন্টের জন্যই তাদের কোন বিনিয়োগ নেই। এ থেকে দেশের বাজারে ওয়েব সিরিজের ব্যাপক চাহিদার বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়।

অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম নির্বাচন অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ডিজিটাল এন্টারটেইনমেন্ট প্ল্যাটফর্ম নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে; যেমন: এমন প্ল্যাটফর্ম যেখানে প্রচুর পরিমাণে চলচ্চিত্র ও ওয়েব শো মিলিয়ে থাকবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কনটেন্টের সম্ভার। প্লাটর্ফমটি অবশ্যই সবধরনের ডিভাইস যেমন টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইলে একসেস করার উপযোগী হতে হবে। এখানে অবশ্যই সবধরনের কনটেন্ট এবং বিভিন্ন বাজেটের সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ থাকবে। সবচেয়ে জরুরী বিষয় অবশ্যই পেরেন্টাল কন্ট্রোল ফ্যাসিলিটি থাকতে হবে।

ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যায় দর্শকদের পছন্দ একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। সেদিক থেকে ক্ষেত্রটি এখনো চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছায়নি। দর্শকদের এই বৈচিত্র্যময় চাহিদা মেটাতে গত ২২ মে দেশের ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে ‘বিঞ্জ’ নামে নতুন একটি স্ট্রিমিং সার্ভিস।

বিনোদন জগতের সুবিশাল সংগ্রহের এই প্ল্যাটফর্মটিতে রয়েছে ১৫০টির বেশি লিনিয়ার টিভি চ্যানেল এবং ৩ হাজারের বেশি ওয়েব সিরিজ, লেটেস্ট ওয়েব ফিল্ম, বিঞ্জ এক্সক্লুসিভ অরিজিনালসহ আরো অনেক কিছু। গ্রাহকরা অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ল্যাপটপ ও টিভিতে প্ল্যাটফমটি উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের মাধ্যমে যেকোনো টিভিকে স্মার্ট টিভিতে রূপান্তরের সুবিধা দিচ্ছে বিঞ্জ।  

স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্নটি উঠতে পারে- ওয়েব সিরিজে এমন কি আছে যা টিভি সিরিজ বা অন্য কনটেন্ট থেকে একে ভিন্নতা দিয়েছে এবং কী কারণে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে!

ওয়েব সিরিজ এবং টিভি শো’র মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যটা হচ্ছে কনটেন্টের দৈর্ঘ্যে। একটি টিভি সিরিজ সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট দৈর্ঘে্যর হয়ে থাকে; যেখানে একটি ওয়েবিসোড মাত্র ৫ থেকে ১৫ মিনিটের হয়। ওয়েব শো’র ক্ষেত্রে দর্শকদের অনেক বড় সুবিধা হচ্ছে পরবর্তী ঘটনা দেখার জন্য পরের সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। শুধু একটি ক্লিক করেই তাৎক্ষণিকভাবে দর্শক তা দেখে নিতে পারেন। এছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা এতে কোনো বিজ্ঞাপন বিরতি নেই। 

সম্প্রতি দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া বিনোদনের নতুন এই জগতটি শিল্প-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মানুষের জন্য এক অবারিত সুযোগ তৈরি করেছে। নির্মাতারা বড় পরিসরে কনটেন্ট তৈরির ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সীমিত বাজেটের মধ্যেই তার সৃজনশীল কাজটি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করতে পারছেন। এমনকি যেকোনো ব্যক্তি তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল চালু করে সেখানে তার তৈরি সৃষ্টকর্ম তুলে ধরতে পারেন।

এমবি//