ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

‘বাজেট ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতিকে আগের অবস্থানে আনবে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫৮ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

দেশে করোনাকালীন বিপর্যয়ের সময় ঘোষিত হয়েছে এবারের জাতীয় বাজেট ২০২০-২১। তবে এ বাজেটে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে আবার আগের অবস্থানে নিয়ে আসতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনান্স বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ‘‘ন্যাশনাল বাজেট ২০২০-২১’’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন-বিএইচবিএফসি এর চেয়ারম্যান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-আইবিবিএলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের  অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম উদ্দিন মনোনীত আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় বাজেট ২০২০-২১  এমন সময় ঘোষিত হয়েছে, যখন বিশ্বের অধিকাংশ অর্থনীতিসহ আমাদের অর্থনীতির প্রায় সব খাত কোভিড-১৯ এর কারণে অস্বাভাবিক, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। বাজেট ২০২০-২১ মূলত দুইটি ভিত্তিকে কেন্দ্র করে যথা- মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো এবং বিগত কয়েক মাসে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে গৃহীত বিভিন্ন নীতি, কৌশল এবং প্রণোদনাকে প্রাধান্য দিয়ে রচিত হয়েছে। 

ড. সেলিম আরো বলেন, জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ পরিপূর্ণ ভাবে বিশ্লেষণ করলে কমপক্ষে ৬(ছয়) টি প্রধান মৌলিক অঙ্গীকার স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়। ছয়টি মৌলিক অঙ্গীকার হলো: ১) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত  ১,০৩,১১৭  কোটি টাকার বিশাল প্রণোদনার দ্রুত বাস্তবায়ন ২) সরকারি ব্যয়ে কর্ম সৃজনকে প্রাধান্য দিয়ে গুনগত মানে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা ৩) বিলাসী ব্যয় হ্রাস ও নিরুৎসাহিত করা ৪) স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করা ৫) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি এবং ৬) বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করে যথাযথ তারল্য বজায় রাখা। 

করোনাকালীন দূর্যোগের জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ কে সফলভাবে বাস্তবায়নে সমর্থ হলে কোভিড-১৯ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থের জন্য কল্যাণকর কার্যসম্পাদন, দরিদ্র, স্বল্প আয়ের ও সাম্প্রতিক কর্মবিচ্যুত লোকগুলোকে পুনর্বাসন করা, সকল ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনৈতিক খাতগুলোকে পুননির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতিকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা, অর্থনীতি চাঙ্গা হয় এমন পদক্ষেপ এবং বরাদ্দের দিকে মনোনিবেশসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ধনাত্বক প্রভাব বিস্তার করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, বাজেটের সুফল, ভাল ও ধনাত্বক প্রভাব, কার্যকারিতা এবং সর্বোপরি সফলতা বাস্তবায়নের উপর অবশ্যই নির্ভরশীল। এই প্রেক্ষিতে ড. সেলিম ০৪(চার) টি ধারণার কথা উল্লেখ করেন যেটাকে তিনি নিজের ভাষায় পেস্ট (চঊঝঞ) নামে অভিহিত করেন। যেমন:  চ মানে চৎড়ঢ়বৎষু অর্থাৎ বাজেট আইনকানুন নিয়ম নীতি অনুসরণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। ঊ মানে ঊভভরপরবহপু অর্থাৎ আউটপুট ইনপুট অনুপাত সর্বাধিকসহ উৎপাদনশীলতার দিকে সবিশেষ নজর দেয়া। ঝ মানে ঝরহপবৎবষু  অর্থাৎ আন্তরিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, দূর্নীতিমুক্ত পরিবেশের এবং ন্যায় নীতির কথা বুঝানো হচ্ছে। সর্বশেষ ঞ মানে ঞরসবষু অর্থাৎ সময়ের কাজ সময়ে মানে সমকালীনতায় জোর দিয়ে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়া। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিকে কোথায় নিয়ে যাবে তা এখনও অজানা। বর্তমান সময় পর্যন্ত বিশ্বের কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারছেনা যে, অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে কতদিন লাগবে। সবকিছু বিবেচনা করলে মনে হচ্ছে, আমরা মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি। তাই অচিরে আমাদের অর্থনীতি তথা জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে সেই ১৯২৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেশনের প্রভাব কে মাথায় রেখে তৎকালীন ইউএস প্রেসিডেন্ট হারবাট ক্লার্ক হুভারের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রোজভেল্টের সেই অর্থনীতির ধারণা সম্বলিত ‘‘নিউ ডিল’’ এর অনুকরণে সার্বিক অর্থনীতির সুষ্টু ব্যবস্থাপনার এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মেনার্ড কেইনসের মতবাদ ১৯২৯ এর মহামন্দায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উল্লেখ্যযোগ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কেইনসের মতে মহামন্দায় সরকারি হস্তক্ষেপসহ চাহিদা বৃদ্ধিতে জোরালো ভূমিকা রাখা ছাড়া অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনায়ন করা খুবই কঠিন। তাই ড. সেলিম এই বাজেট বাস্তবায়নের ফলে সরকারি ব্যয় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখবে। তবে আয়ের দিক এবং ঘাটতি অর্থায়নের সকল ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জসমূহ বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে।

ড. সেলিম আরো উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে ধ্বংসাত্বক অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে এবং বাজেট ২০২০-২১ এর সফল বাস্তবায়নে অবশ্যই জন সম্পৃক্ততার বিষয়টি সরকার এবং সচেতন জনগণকে বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ জনগণকে সরকারের গৃহিত নীতি, কৌশল ও প্রণোদনার প্রতি অবিরত সমর্থন এবং সরকার ও পেশাগত দক্ষতা সম্পন্ন লোকদেরকে বিভিন্ন উপায়ে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তখনই যেকোন মহামারী থেকে পুনরুদ্ধারে সকল কৌশলাদী অধিকতর কার্যকর হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের ফাইনান্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে একই বিভাগের প্রফেসর ড. সালেহ জহুর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রফেসর নছরুল কাদির, প্রফেসর ড. জান্নাত আরা পারভিন, প্রফেসর ড. ইসমত আরা হক, প্রফেসর ড. জামাল, প্রফেসর ড. সোহরাব আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। উক্ত অনুষ্ঠানে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন প্রফেসর সালামত উল্লাহ ভূইয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।  

আরকে//