ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

করোনায় দূরে সরে যাচ্ছে স্বজনরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫২ এএম, ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার

করোনার বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। লাশ গুনতে গুনতে ক্লান্ত মানুষ। এ এমনই এক মহামারি যা আপনজনকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। আক্রান্ত রোগী কিংবা মৃতব্যাক্তি কারও পাশেই থাকছে না মানুষ। মৃত্যুর পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিঃসঙ্গ অনন্ত যাত্রায় ধনী থেকে দরিদ্র, শিল্পপতি থেকে শীর্ষ নেতা কারও পাশেই দেখা মিলছে না স্বজনদের।

এমনও ঘটছে যে- স্ত্রী-সন্তানের মতো স্বজনরাও দূর থেকে দেখিয়ে দেয়, ওই ঘরে লাশ। শেষ বারের মতো মৃতের মুখটাও আর দেখতে চায় না তারা। সে ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবীরা লাশ নিয়ে সৎকার করছেন। এলাকাবাসী বা স্বজনরা সহযোগিতা তো দূরের কথা, বিদায় হওয়া মানুষটির কবর দেওয়ার জায়গাটিও দেখিয়ে দিচ্ছে না অনেকে। কোনো কোনো সময় কাফনের কাপড়ও কিনতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের।

সম্প্রতি এক শিল্পপতির মৃত্যুর পর নিজে অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে একজন বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছিলেন- ‘তিনি (শিল্পপতি) যখন আইসিইউতে, ঘটনাক্রমে আমাকে কয়েকদিন তার পাশের রুমটাতে থাকতে হয়েছিলো। তার আত্মীয় স্বজনকে সেভাবে দেখি নাই তার খোঁজ নিতে। চার দিনের মধ্যে একদিন কোম্পানির ঊর্ধতনরা এসেছিলেন দেখতে। স্যারের কি কি লাগবে? কি কম হলো! যন্ত্রণা কতটুকু কমলো! ওষুধ, ইনজেকশন দরকার হলে বেশি বেশি দেন, আইসিইউয়ের ১৫ বেডে দরকার হলে স্যার একাই থাকবে- ব্যাপারগুলো এমনই মনে হয়েছিলো।

আফসোস করছিলাম আর কথা বলছিলাম এক ডাক্তারের সাথে। মৃত্যুর সময়ে একজন মানুষের হাতের স্পর্শ কি পেয়েছিলেন তিনি (শিল্পপতি)! কারো সাথে বিদায় শব্দটি বলতে পেরেছিলেন কী! ভীষণ নি:স্তব্দ সেই রুমটায় আমি একবার গিয়েছিলাম। আধো আলো। চারপাশে সব অর্ধমৃত, মৃতপ্রায় মানুষ! আহারে জীবন!’

সত্যিই তাই, এ এমনই এক মৃত্যু যেখানে অতিআপন মানুষটিও শেষ সময়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। বিদায়ের শেষ বেলায় চোখের দেখাও দেখছেন না অনেকে। পার্থিব জীবনে অহমিকা, অর্থ প্রতিপত্তির মোহে যারা গাঁ ভাসিয়ে দিয়েছে তাদের প্রায় সব ধর্মই সতর্ক করেছে।

মহা পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনেও আল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- ‘ হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালক সম্পর্কে সচেতন হও এবং ভয় করো সেদিনের, যেদিন পিতা সন্তানের কোনো উপকারে আসবে না, না সন্তান পিতার কোনো উপকার করতে পারবে। অবশ্যই আল্লাহর প্রতিশ্রুত (পুনরুত্থান) অনিবার্য সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবনের মোহ যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চনামূলক চিন্তাভাবনাকে প্রশ্রয় দিয়ে শয়তানের ধোঁকায় যেন পড়ে না যাও।’- সূরা লোকমান।

 মহাকাশ ও (ভাসমান) পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই আল্লাহর। আল্লাহ তো অভাবমুক্ত ও সদাপ্রশংসিত। পৃথিবীর সমস্ত গাছ যদি কলম হয় আর সকল সমুদ্রের পানি যদি কালি হয়, তবুও আল্লাহর মহিমা লিখে শেষ করা যাবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।- সূরা লোকমান

(অধিকাংশ মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই যে) তুমি যদি ওদের জিজ্ঞেস করো, মহাকাশ ও (ভাসমান) পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? নিশ্চয়ই ওরা বলবে, ‘আল্লাহ!’ ওদের বলো, (তা হলে তোমাদের জানা উচিত) ‘সকল প্রশংসা শুধু আল্লাহর।’ কিন্তু ওদের অধিকাংশই একথার মর্ম বোঝে না।- সূরা লোকমান

তিনিই নভোমণ্ডলকে নির্মাণ করেছেন কোনো খুঁটি ছাড়া, যা তোমরা নিজ চোখেই দেখছ। তিনি (ভাসমান) পৃথিবীতে পর্বতমালা বসিয়েছেন জমিনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে। তিনি জমিনে সব ধরনের প্রাণিকুলের বিস্তারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি মেঘমালা হতে বৃষ্টিবর্ষণ করে সব ধরনের সুকোমল প্রাণের বিকাশকে নিশ্চিত করেছেন। এ সবই আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি ছাড়া অন্য কেউ কোনোকিছু সৃষ্টি করে থাকলে তা আমাকে দেখাও। আসলে জালেমরা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত।- সূরা লোকমান

(মানুষ কি ভেবে দেখবে না) সে কি একসময় স্খলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? তারপর কি নিষিক্ত ডিম্বে পরিণত হয় নি? তারপর আল্লাহ কি তাকে আকৃতি দান ও সুঠাম করেন নি? তারপর তিনি তা থেকে যুগল নরনারী সৃষ্টি করেন নি? এরপরও কি (তুমি মনে করবে) মৃতকে জীবিত করার শক্তি আল্লাহর নেই?- সূরা কিয়ামা

(হে মানুষ! প্রতি মুহূর্তে তোমার সময় ঘনিয়ে আসছে) তোমার খুব কাছেই, খুব কাছেই! আবার বলছি, তোমার আরো কাছে, আরো কাছে! সময় ঘনিয়ে আসছে!- সূরা কিয়ামা

বাস্তব সত্য হচ্ছে, তোমরা অধিকাংশই যা সামনে দেখতে পাও অর্থাৎ পার্থিব জীবনকেই ভালবাসো, (মহাবিচার দিবস এবং) পরকালের জীবন নিয়ে কোনো চিন্তা করো না।- সূরা কিয়ামা

সাক্ষী কেয়ামত দিবস! সাক্ষী তিরস্কারকারী বিবেক! মানুষ কি মনে করে, আমি (তাকে পুনরুত্থিত করতে) তার হাড়গুলো একত্র করতে পারব না? আমি তো তার আঙুলের ডগা (বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙুলের নকশা) পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। তারপরও মানুষ (অবশ্যম্ভাবী ভবিষ্যতকে অস্বীকার করে) পাপাচারে লিপ্ত থাকতে চায়। সে প্রশ্ন করে, কখন কেয়ামত দিবস আসবে?- সূরা কিয়ামা
এসএ/