ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজ দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার | আপডেট: ১১:১১ এএম, ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বিশ্ব মহামারি করোনার ধাক্কা লেগেছে অর্থনীতিতে। আর সব খাতের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। এসব ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের বড় একটি অংশ নারী। কিন্তু সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এখন পর্যন্ত এসএমই ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৫১ জন নারী উদ্যোক্তা। ফলে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএমই ঋণে ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ এবং উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র দেখাতে না পারাই ঋণ ছাড় না হওয়ার কারণ। এ অবস্থায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা প্রণোদনা প্যাকেজের দাবি করেছে উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।

করোনা মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি প্রনোদনা প্যাকেজের ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে। সুদের হার হবে সর্বোচ্চ নয় শতাংশ। কিন্তু এ পর্যন্ত এসএমই ঋণ পেয়েছেন মাত্র ৫১ জন নারী উদ্যোক্তা। এ সংখ্যা কেন এতো কম তা নিয়ে ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অপরদিকে, ব্যবসায়ী নেতারা ও ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমান ঋণ অল্প সময়ের মধ্যে বিতরণ নিয়ে নানা সমস্যার কথা বলে আসছে।

উইম্যান চেম্বার বলছে, পুরুষ উদ্যোক্তাদের সাথে সরাসরি প্রতিযোগীতা করে নারীরা ঋণ পাবেন না। এ অবস্থায় নারীদের জন্য আলাদা প্যাকেজের দাবি তাদের। সহায়তা না পেলে অনেক ক্ষুদ্র নরী উদ্যোক্তা হারিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা উইম্যান চেম্বারের। 

সম্প্রতি করোনার প্রভাবে নারী উদ্যেক্তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেছে উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ওয়েন্ড)। সংগঠটির প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর এক খোলা চিঠিতে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

এ চিঠিতে ড. নাদিয়া বিনতে আমিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সম্মৃদ্ধ বাঙালি জাতি যখন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সাহসিকতা ও ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে চলেছে, যখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে উচ্চতর মর্যাদায় আসীন করেছেন তখন চীনের উহান থেকে সৃষ্টি হওয়া ‘করোনা’ নামক এক বৈশ্বিক সংক্রমক এক মহা সংকট হিসেবে আমাদের সামনে এসে উপস্হিত হয়েছে।’

‘এ সংকট মোকাবেলায় আপনি এবং আপনার সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও প্রজ্ঞা ইতিমধ্যে প্রদর্শন করেছেন তা এক কথায় নজিরবিহীন। এ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংক্রমন বিস্তার রোধ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা ব্যবস্হাপনার মান উন্নীতকরণের দৃঢ ও তড়িৎ পদক্ষেপ আপনার বিজ্ঞ নেত্বৃতেরই প্রকাশ। জনসাধারণের সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি ও তৈরিতে আপনি যে অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছেন তাও আমাদের উদ্দীপ্ত করেছে। পাশাপাশি এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেবার বিষয়ে ইতিমধ্যে যে ঘোষণা আপনি দিয়েছেন তা আবার ও প্রমাণ করে আপনি মাদার অফ হিউমিনিটি।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনার এই সাহসী ও দৃঢ প্রত্যয়ী এগিয়ে চলার পথে এ দেশের কোটি কোটি নারী উদ্যোক্তাগণ অতীতেও যেমন আপনার সাথে ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে- দেশের নারী উদ্যোক্তাদের পক্ষে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইমেন এন্ট্রাপ্রিনিওয়ার্স নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন (ওয়েন্ড) এই অঙ্গীকার করছে।’

‘‘ওয়েন্ড’ হচ্ছে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের একটি সংগঠন। আমরা নারী উদ্যোক্তারা আপনার সরকারের সহযোগিতায় ক্ষুদ্র পর্যায় থেকে ব্যাবসা করে আসছি। দেশের ৭৩ লক্ষ কর্মহীন নারীদের আত্মকর্মসংস্হান, দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যে অবদান রেখে জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের চেষ্টা করে আসছে।’

‘প্রিয় মমতাময়ী মা! বর্তমান চলমান বাস্তবতায় আমাদের যে আসন্ন সংকট সে বিষয়ে আপনি নিশ্চয়ই অবহিত আছেন। তথাপি কয়েকটি বাস্তবতা নারী উদ্যোক্তাগণ আপনার হৃদয়ের সংবেদনশীলতাকে আরও গভীরভাবে স্পর্শ করবে সেই প্রত্যাশায় উপস্থাপন করছে।’

‘আমরা একদিকে যেমন কোটি টাকার অর্থ বিনিয়োগ করতে পারি না অন্যদিকে ব্যবসায়িক উৎপাদন ও আর্থিক ক্ষতি হলে তা কাটিয়ে উঠতে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা পাই না। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আমাদের যে ব্যবসায়িক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা সত্ত্বেও হয়তো বা চলতি পুঁজি থেকে মার্চ মাসের খরচ চালান সম্ভব হবে, কিন্তু ব্যবসার ভরা মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত করোনার নেতিবাচক প্রভাবে আক্রান্ত হওয়ায় সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছাড়া আমাদের পারিবারিক দৈনন্দিন খরচ ও ব্যাবসার কী অবস্থা হবে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আশংকা করা হচ্ছে এই ক্রান্তিকালে সরকারের সহযোগিতা না পেলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঝরে যাবে।’

‘আজ যারা চাকরি করেন তাদের পাশে আছেন তাদের প্রতিষ্ঠান। মাস শেষে একটা বেতন চলে আসে। যারা কোম্পানিগুলো চালান তারা নিজেরাই নিজেদের ত্রাণকর্তা। যারা গরিব, দিনমজুর তাদের জন্য আছে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ত্রাণ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও এলাকার বিত্তশালীদের দান খয়রাত ইত্যাদি৷ কিন্তু আমাদের মতো নতুন, ক্ষুদ্র, ও মাঝারী উদ্যোক্তা আর কিছু ছোট ব্যবসায়ী যারা কোনো তালিকায় পড়ি না তারা সরকারের সাহায্য ছাড়া বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করছি না। মানুষ বাঁচে আশায়, আমরাও চাই বাঁচতে। চাই এই দুর্যোগ থেকে বেরিয়ে আসতে।’

‘আমরা মনে করছি, এই অনাকাঙ্ক্ষিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে সর্বোচ্চ মহল থেকে আর্থিক সাহায্যসহ সকল ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত হলে আমরা আগামী ছয় মাসের মধ্যে গুছিয়ে নিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’

‘আমরা করোনাভাইরাসে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আপৎকালীন এক থেকে ২ শতাংশ সুদে সহজ শর্তে (সহজ শর্তে) ঋণ চাই। এটা যদি এপ্রিল মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় তাহলে নারী উদ্যোক্তারা পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাবে। এই ক্রান্তিলগ্নে অবশ্যই নারী উদ্যোক্তাদের একটি ফান্ড প্রয়োজন। নারী উদ্যোক্তারা যেন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কারখানা চালু রাখতে পারেন।’

‘তবে আমাদের এখন বাঁচতে হবে, মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে। যে দেশের জিডিপিতে ২৫ শতাংশ অবদান আমাদের নারীদের, সরকার নিশ্চয়ই আমাদের আবেদন রাখবেন , যেহেতু সারাদেশে মোট জনসংখ্যার কোটির ওপর লোকদের নিয়ে আমরা কাজ করি, এবং তাদের আয়-রোজগার আমাদের ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। আমরা সবাই মিলে এক হই ও সরকারকে নিয়ে আবার দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করি। আমরা বিশ্বাস করি আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট মহা মন্দা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।’

‘অতএব, আপনার নিকট আকুল আবেদন আমাদের এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে দেশের চলমান অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে আপনার সহানুভূতি নারী উদ্যোক্তাদের পাশে থাকবে।’
এসএ/