পছন্দের স্থানে চিরঘুমে এন্ড্রু কিশোর
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:০৭ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২০ বুধবার
রাজশাহীতে নিজের পছন্দের স্থানে চিরঘুমে শায়িত হয়েছেন কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী সার্কিট হাউস এলাকায় খ্রীষ্টান কবরস্থানে অনন্তকালের জন্য তাকে সমাহিত করা হয়। শিল্পীর এই মহাপ্রয়াণের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে চোখের পানি ঝরান হাজারও ভক্ত-অনুরাগী।
সকাল ৯টার দিকে এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে বের করে সিটি চার্চে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখানে ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। এরপর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছু সময়ের জন্য চার্চের সামনে একটি মঞ্চে রাখা হয়।
সেখানে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে এন্ড্রু কিশোরের কফিন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ খ্রীষ্টান কবরস্থানে নেয়া হয়। কবরস্থানে ঢুকতেই ডান পাশে শিল্পীর পছন্দ করা স্থানে আগে থেকেই কাটা হয়েছিল কবর। সেই কবরে তাকে সমাহিত করা হয়। পরে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
হাসপাতালের হিমঘর থেকে সমাহিত করা পর্যন্ত এন্ড্রু কিশোরের পাশেই ছিলেন তার সহধর্মীণী এন্ড্রু লিপিকা, ছেলে জয় এন্ড্রু সপ্তক এবং মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা। সিটি চার্চে ধর্মীয় প্রার্থনা শেষে তারা কফিনের পাশে বসেন। এ সময় তারা ডুকরে কাঁদেন। কবরে কফিন নামানোর পরও পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা।
বাবার কফিনের ওপর মাটি দেয়ার পর ছেলে ও মেয়ে এই কবরস্থানেই থাকা তাদের দাদা, দাদি, চাচা এবং চাচাতো বোনের কবরে ফুল দেন। এই চারটি সমাধি রয়েছে পাশাপাশি। তবে এন্ড্রু কিশোরের সমাধি হলো সামান্য একটু দূরে। মৃত্যুর আগে জায়গাটি তিনি নিজেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
এ সময় সেখানে সুরকার ও গীতিকার ইথুন বাবু এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান উপস্থিত ছিলেন। শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা এন্ড্রু কিশোরের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত এবং তার স্মৃতি ধরে রাখতে একুশে পদক দেয়াসহ তার নামে কিছু করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাবেন বলে জানান তারা।
এক প্রতিক্রিয়ায় মেয়র লিটন ও সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা এন্ড্রু কিশোরের নামে রাজশাহীতে সংগীত বিদ্যালয় এবং কমপক্ষে একটি সড়ক তার নামে করে তাকে স্মরণীয় করে রাখার কথা জানান।
১৯৫৫ সালে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন খ্যাতিমান এ সংগীত শিল্পী। তার বাবার নাম ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ। মা মিনু বাড়ৈ। স্কুল শিক্ষিকা মিনু ছিলেন সংগীত অনুরাগী মানুষ। মায়ের ইচ্ছাতেই রাজশাহীর ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে সংগীতের তালিম নেন এন্ড্রু কিশোর। সত্তর দশকের শেষ দিকে প্লেব্যাকের জগতে পা রাখেন তিনি। এরপর ১৫ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন নন্দিত এই শিল্পী।
তাকে বলা হয় ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পী দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই চিকিৎসাধীণ ছিলেন। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয় দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন।
তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয় গত ১১ জুন। এরপর থেকে রাজশাহীতে তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় এখানেই উপমহাদেশের এই কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার দুই সন্তান পড়াশোনা করেন অস্ট্রেলিয়ায়। তাদের ফেরার অপেক্ষায় মরদেহ রাখা হয়েছিল হিমঘরে।
এন্ড্রু কিশোরের ভগ্নিপতি ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, এন্ড্রু কিশোরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ রাখার কথা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার ও রাজশাহী কলেজ চত্বরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। তাই ভক্তদের শ্রদ্ধাতে জানাতে এই সুর সম্রাটকে সমাধিস্থ করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সারা দেশে একসঙ্গে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচি নেয়া হয়।
এআই//এসি