মোহাম্মদ নাসিমের শোকসভায় বক্তারা
শেখ হাসিনা একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারিয়েছেন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সাবেক মুখপাত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম এমপি’র স্মরণে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শোকসভার আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। গতকাল বুধবার রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে Zoom Meeting প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জনাব আমির হোসেন আমু এমপির সভাপতিত্বে এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সাবেক মুখপাত্র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম এমপি’র স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র জনাব আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছিলেন নাসিমের চলে যাওয়ায় আমি আমার একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি, নেত্রীর এই উক্তির মধ্যে দিয়েই নাসিমের সার্বিক রাজনীতির কর্মের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব তার পিতা যেরকম একনিষ্ঠ ছিলো অবিচল ছিলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নাসিমও সেরকম অবিচল ও একনিষ্ঠ ছিলেন। আমরা একসাথে কাজ করতাম, প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে নাসিম ছিলো আমার সহযোদ্ধা। মোহাম্মাদ নাসিম ১৪ দলকে জাতীয় পর্যায়ে একটা বিরাট পরিচিতি দিয়ে গেছেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে সংগঠন চালিয়ে গেছেন। ওর চলে যাওয়া আমার জন্য বেদনাদায়ক। করোনাকালে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মীর মৃত্যুর কথা স্বরণ করে শোক জানান আওয়ামী লীগের এই জাতীয় নেতা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জনাব তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, আমার অত্যন্ত প্রিয় অকুতোভয় সহযোদ্ধা নাসিমের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, তার অকাল মৃত্যু আমাকে কাঁদিয়েছে। একজন বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ ছিলেন মোহাম্মাদ নাসিম, আমরা একসাথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, একসাথে রাজপথে মার খেয়েছি, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় একসাথে নির্যাতিত হয়েছি। তিনি দেশের জন্য দলের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন, বারবার কারাবরণ করেছেন। শরিরে অসুস্থতা নিয়েও সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন সফল সংগঠন ও রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, পৃথিবীতে খুব কম দেশে দেখা গেছে পিতা পুত্র একসাথে জেলে গেছেন। পাকিস্তানের আইয়ুব সাহেবের আমলে আন্দোলন করে পাবনায় পিতা জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সঙ্গে মোহাম্মাদ নাসিমও কারাবরণ করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নাসিম ছিলেন একজন সংগ্রামী ও প্রানবন্ত রাজনীতিবিদ। অনেক আন্দোলন সংগ্রামে মোহাম্মাদ নাসিমকে আমি আমার পাশে পেয়েছিলাম। ১৪ দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে নতুন সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাজ করবেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের প্রানপ্রিয় নেতা মোহাম্মাদ নাসিম রেখে গেছেন তার দীর্ঘ কর্মময় রাজনৈতিক জীবন, যা আমাদের অনুকরনীয় ও পাথেয়। তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সিপাহসালা হিসেবে দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪ দলকে সংগঠিত করেছেন, একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। বিএনপি-জামাতের সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে একটি অসম্প্রাদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা ও শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। নাসিমদের মৃত্যু নেই, নাসিমরা বেঁচে থাকবেন কর্মময় জীবনের। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ১৪ দলের নব-নির্বাচিত সমন্বয়ক হিসেবে জননেতা আমির হোসেন আমু তার সমগ্র মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে ঐকবদ্ধ রাখবেন ও পৃষ্ঠপোষকতা করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, একজন প্রানবন্ত মানুষকে প্রয়াত বলতে হবে এটা মেনে নেয়া কষ্টকর। মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন অসম্প্রদায়িক আপদমস্তক একজন বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ, ছিলেন সফল সংগঠক। ছিলেন রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের নায়ক, দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা। ভূমিকা রেখেছিলেন ১৪ দলের সাথে আওয়ামী লীগের হয়ে একজন সেতুবন্ধন হিসেবে। আমরা তাকে ভুলবো না।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের সৃষ্টির পর থেকে জননেতা মোহাম্মাদ নাসিম ১৪ দলকে ঐকবদ্ধ রাখতে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে ১৪ দল ও আওয়ামী লীগের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরনীয় নয়। সংকটকালে যারা বিরাজনীতিকরনের রাজনীতি করছে, যারা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করছে, যারা বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে এসবের বিরুদ্ধে ১৪ দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইসমাইল হোসাইন বলেন, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম এর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করার পাশাপাশি ১৪ দলের সফলতার পিছনে তার অবদানের কথা ব্যক্ত করলেন ন্যাপ এর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসাইন। ১৪ দলের সমন্বয়কারী হিসেবে তার যে দক্ষতা ও অবদান ছিল তা ভুলবার নয়। সেই সাথে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বললেন নতুন নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক উন্নয়নের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবার এবং সফলকামী হওয়ার।
গণ আজাদী লীগের সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা এডভোকেট এস কে শিকদার শোকসভায় উপস্থিত হয়ে তার ভারাক্রান্ত হৃদয়ের কথা ব্যক্ত করলেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম-এর প্রয়ানে। তার জনদরদী কার্যক্রমকে স্মরণ করে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার এবং সুদিন ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন তিনি।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৪ দলের অনেক সংকটে তিনি সমন্বয় করেছেন। আমরা তাকে স্মরন করছি। আজকের ১৪ দলের নেতৃত্বে আছেন আমির হোসেন আমু। আশা করবো আমরা তার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবো। আমরা এগিয়ে যাবো জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর একাংশের নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করছি নাসিম সাহেব কে। আমরা তার দেখানো পথে এগিয়ে চলবো নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, নাসিম সাহেব ছিলেন আপোষহীন নেতা, তিনি আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের পাশে ছিলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। আজকে আমু ভাই নেতৃত্বে এসেছেন, আমরা তার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে চলে যাওয়া সকল নেতাকর্মিদের রুহুরের মাগফেরাত কামনা করছি। মুহাম্মদ নাসিম একজন সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে আমরা একসাথে কাজ করেছি। লক্ষ্য একটাই একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলিপ বড়ুয়া বলেন, জনাব নাসিম যে কৌশলে নেতৃত্ব জীবন্ত রাখতেন সেটা অতুলনীয়। আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নাসিম সাহেবের দিক নির্দেশনায় আমরা সারাদেশে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ মোজাফফর হোসাইন পল্টু বলেন, নাসিম আমাদের মাঝে নাই, আমার ভাবতেও কষ্ট লাগে কত স্মৃতি তার সাথে। কত আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করেছি আমরা। আমার সৌভাগ্য হয়েছে নাসিমের বাবার সাথে কাজ করার। অনেক কিছু শিখেছি। সেই গুন নাসিমের মধ্যে দেখেছি। নাসিমকে কখনো আন্দোলনের সময় পিছু হটতে দেখিনি।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার দৃঢ়তা দেখেছি। দক্ষ সংগঠক ও বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম। ছাত্রজীবন থেকে শুরু থেকে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন তিনি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৪ দলের নেতা নাসিমকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এই সময়ে করোনা জয় করলেও এর পরবর্তী সময় মোকাবোলা করতে ঐক্যের মাধ্যেমে এগিয়ে যেতে হবে। দূর্নীতি পুষে রেখে দেশে আগানো যাবে না, এমনকি করোনাকে পুষে রেখে অর্থনীতি সচল রাখা যাবে না। সুতরাং একসঙ্গে লড়ে যেতে হবে।
এমবি//