মেয়ে ও জামাতার নির্যাতনে ঘরছাড়া শ্বশুর
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৩:১৮ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২০ শুক্রবার
মো. ফরিদ মিয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফরিদ মিয়া (৮০) নামে এক বৃদ্ধকে মারধর করে ঘর ছাড়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে নিজের মেয়ে ও মেয়ের জামাতার বিরুদ্ধে। দফায় দফায় মারধরের শিকার ওই বৃদ্ধ এখন ঘর ছাড়া। নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ওই বৃদ্ধের স্ত্রীও। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ তার স্বজনদের।
নির্যাতনের শিকার মো. ফরিদ মিয়া উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের আ. মমিনের ছেলে। এ নিয়ে নাসিরনগর থানায় লিখিত অভিযোগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে মামলা করেন তিনি ।
নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধ ফরিদ। তিনি জানান, ‘তার কোন ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়ে। জমি বিক্রি করে সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তার মেজো মেয়ে সেলিনা আক্তারকে বাড়ির পাশেই বিয়ে দেন। মেয়েদের বিয়ের পর ওই বৃদ্ধ তার স্ত্রী নিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতেন। কোন ছেলে সন্তান না থাকায় বৃদ্ধের সকল সম্পত্তি মেয়ে সেলিনা ও জামাতা আলকাছ তাদের নিজের নামে লিখে নেয়ার জন্য অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছিল।’
ঘটনার দিন গত বুধবার বাড়িতে গেলে তার মেয়ে ও জামাতা কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দা ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ফরিদকে। অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে যান। খবর পেয়ে অপর দুই মেয়ে বাড়িতে আসলে তাদেরও মারধর করা হয়।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মেয়ে সেলিনা ও জামাতা আলকাছকে সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় ২০১৯ সালের ২৪ জুন লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে ফরিদ মিয়াকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১০ দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। এ সময় নাসিরনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করে তার মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকে অভিযুক্ত করেন।
অভিযোগ দেয়ার পর থেকে ওই বৃদ্ধের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আবারও মারধর করে। এবং পুনরায় থানা অভিযোগ না করতে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে একটি মামলা করেন। এত কিছুর পরও তিনি নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেননি।
করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যের বাড়িতে থাকতে সমস্যা হওয়ায় নিজ বাড়িতে ফিরতে চান ফরিদ মিয়া। এমতাবস্থায় গত বুধবার বাড়িতে যাওয়ার পর তার মেয়ে সেলিনা ও জামাতা আলকাছ লোহার রড ও দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
বৃদ্ধের মেয়ে বিলকিছ জানায়, ‘এর আগেও জোর করে সম্পত্তি লিখিয়ে নেয়ার জন্য আমার আব্বাকে মারধর করেছে তারা। এ ঘটনায় নাসিরনগর থানায় অভিযোগও করে ছিলেন। বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য স্থানীয়দের দায়িত্ব দেয় পুলিশের সদস্যরা। কিন্তু তারপরও কোন সুরাহা করতে পারেনি। মেয়ে ও মেয়ের জামাতার নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে ও নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে আইনশৃঙখলা বাহিনীর প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত আলকাছ ও সেলিনার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা পাশের বাড়ির অন্যদের দিয়ে ফোন রিসিভ করান। ফলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ইউপি সদস্য আলীজান জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। স্থানীয়ভাবে উভয় পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে নাসিরনগর থানা তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এআই/এমবি