করোনাকালে কষ্টে আছেন ফুটপাতের বই বিক্রেতারা (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২০ রবিবার
হাবিবুর রহমান। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন এই বৃদ্ধ। ষোল বছর ধরে শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে ফুটপাথে বসে বই বিক্রি করেন তিনি। বই বিক্রি যতটা না তার কাছে ব্যবসা, তার চেয়ে বেশি নেশা। কিন্তু করোনা সংকটের পুরো সময়টাতে কষ্টে জীবন চালাতে হচ্ছে তার। তার মত পথেরধারের এই বই বিক্রেতাদের একই অবস্থা। দীর্ঘ সময়ে করোনাকালের এমন অভিজ্ঞতা কখনই দেখতে হয়নি তাদের।
গেল মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর, বিক্রি না হলেও নিয়মিতই হাবিবুর রহমান বসতেন বই সাজিয়ে। শাহবাগ থেকে চারুকলা এই পথে চারটি বইয়ের দোকান থাকলেও খোলা মাত্র একটি। সংক্রমণ শুরুর পর অনেকেই দোকান করেননি। এখন কেউ কেউ ফুটপাতে বই নিয়ে বসলেও বিক্রি নেই। করোনা সংকটের পুরো সময়টাতে কষ্টে জীবন চালাতে হচ্ছে পথেরধারের এই বই বিক্রেতাদের।
এ নিয়ে তারা বলেন, কদাচিৎ ক্রেতা দু এক জন আসে, কিন্তু বই কেনেই বা ক জন?
পুরনো ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের আরো একটি বড় বাজার নীলক্ষেতের ফুটপাথ। বিক্রেতারা প্রহর গুনছেন- কবে শেষ হবে করোনা কাল? স্বাভাবিক হবে সব কিছু; খুলবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়।
দৃশ্যপটের কোন বদল নেই পল্টনের পুরান বইয়ের দোকানগুলোয়। কারো সময় কাটে পত্রিকা পড়ে, কারো সময় কাটছে ক্রেতার অপেক্ষায়। বিক্রি নেই একেবারেই। কোনোরকমে টিকে থাকায় এখন দায় হয়েছে তাদের।
করোনাকালে খারাপ থাকলেও তাদের খোঁজ নেয়ার মতো কেউই নেই বলে আক্ষেপ পুরোনো বই বিক্রেতাদের।
এদিকে, করোনার এই ক্রান্তি কালে বেশ জোরেশোরেই ধাক্কা লেগেছে প্রকাশনা শিল্পে। নতুন বই প্রকাশ বন্ধ, ছাপাখানার খট খট আওয়াজও নেই। ঘরভাড়া ও শ্রমিক কর্মচারিদের বেতন দিতে না পেরে বন্ধের পথে অনেক প্রকাশনা সংস্থা এবং ছাপাখানা। কষ্টের দিন যাচ্ছে এই শিল্পের শ্রমিক কর্মচারিদেরও।
বাংলা-বাজার, সৃজনশীল ও পাঠ্য বইয়ের এ পাইকারী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা সংকটে বদলে গেছে এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। লেখক, প্রকাশক, ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা নেই। বেচা কেনায়ও ধস নেমেছে। একই চিত্র নীলক্ষেতের বইয়ের মার্কেটেও। নিউমার্কেটের দোকানিদেরও ক্রেতার অপেক্ষায় দিনভর বসে থাকতে দেখা গেছে।
ব্যাবসায়ীরা বলছেন, অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে দোকান টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে উঠেছে।
এদিকে বই বিক্রিতে ভাটা পড়ায় ছাপাখানাগুলোর অবস্থাও করুণ। আরামবাগ, ফকিরাপুল, পল্টন এলাকায় কম করে হলেও আড়াই হাজার ছাপাখানা রয়েছে। যার বেশিরভাগেরই চাঁকা ঘুরছে না। শ্রমিকদের পাওনা মেটানোতো দূরে থাক, ঘরভাড়া দিতে পারছেন না ছাপাখানার মালিকরা।
দিনে দিনে সংকট বাড়ছে বলে জানালেন সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকরা। সাধারণত বই মেলার পর প্রকাশনার বড় কাজগুলো হয় মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। এবার সবই বন্ধ। এ অবস্থায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখাই কঠিন বলে মনে করছে মুদ্রন শিল্প সমিতি।
এসএ/