চিরসবুজ আফজাল হোসেন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪৫ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২০ রবিবার
আফজাল হোসেন। অভিনেতা, নির্মাতা, লেখক ও চিত্রশিল্পী- এমন অনেক পরিচয়ে পরিচিত তিনি। তবে সাধারণ মানুষের কাছে অভিনেতা হিসেবেই তিনি বেশ জনপ্রিয়। বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয় দিয়ে তিনি জয় করেছেন কোটি দর্শক-হৃদয়। আজ তার জন্মদিন। ১৯৫৪ সালের আজকের এই দিনে সাতক্ষীরার পারুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। যদিও সনদ অনুযায়ী তার জন্মদিন ২৭ মার্চ।
জন্মদিন নিয়ে এবার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই তার। যদিও অতীতেও কখনো ছিল না। একবার শুধু ঢাকা থিয়েটার জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। জানালেন এই তারকা।
তিনি বলেন, ‘নিজে কখনো কোনো পরিকল্পনা করে জন্মদিন উদযাপন করি না বা সেরকমভাবে করা হয় না। তবে হ্যাঁ, বাসায় পরিবার-পরিজনদের গেট-টুগেদার হয়। এই যা।’
ছোটবেলার জন্মদিনের স্মৃতি প্রসঙ্গে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি মফস্বলে বড় হয়েছি। তাই ছোটবেলায় জন্মদিন বলতে কিছু ছিল না। এমনকি অনেকটা বড় হওয়ার পরে জন্মদিনের বিষয়টা মাথায় আসে। তাই ছোটবেলার জন্মদিনের কোনো স্মৃতি নেই। তবে হ্যাঁ, ছাত্রজীবন আমার জন্মদিনে আমি একটা লেখা লিখতাম। আর তা ছিল মানুষকে নিয়ে। তবে, পরবর্তীতে জেনেছি সেটা আমার ভুল জন্মদিন।
নিজের কাজ প্রসঙ্গে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি আমার জীবনে একটানা কোনো কিছু করিনি। যখন অভিনয় করেছি, তখন অভিনয়ের মাঝে লম্বা বিরতিও দিয়েছি। মাঝে মাঝে এমন হয় প্রতিদিন কবিতা লিখছি আবার কখনো কখনো এমন হয় যে মাস পেরিয়ে গেছে কিন্তু একটা লাইনও লিখি নাই। আমার কাজ মানে স্বতঃস্ফূর্ততা। যেহেতু আমার কোনো লক্ষ্য নেই যে বিশেষ কিছু হতে হবে, তাই নিজের কাছে যেটা ভালো লাগে, যেটা উপভোগ্য, সেটাই করি। শুধু মাথায় রাখি আমি যেই কাজটা করছি সেটা যেন অন্যের কাজে লাগে এবং অন্যের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। তবে, যখন যেটা করি, সেটা ভালো লাগা থেকে করি, পুরোটা দিয়ে করি।’
উল্লেখ্য, আফজাল হোসেন টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে বেশ জনপ্রিয় হলেও তার অভিনয়জীবনের শুরু মঞ্চে। চারুকলায় পড়ার সময় ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চকাজ শুরু করেন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে তিনি টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করেন। আশির দশকে হয়ে ওঠেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় এক নাম। তার অভিনীত বেশ কিছু নাটক আজও মাইলফলক হিসেবে দর্শক-হৃদয়ে স্থান করে আছে।
১৯৮০ সালে প্রচারিত ‘রক্তের আঙ্গুরলতা’ নাটকে আফজাল হোসেন নিয়ে আসেন নতুন ধারা, নতুন ভাবনা। তার ‘পারলে না রুমকি’ বিটিভির নাটকের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে আজও। মডেলিং ও বিজ্ঞাপনচিত্রকে শিল্প পর্যায়ে উন্নীত করেছেন এই তারকা। একটি পণ্যকে ভোক্তার কাছে উপস্থাপন করার যে পথ তিনি দেখিয়েছেন, সে পথ ধরেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনচিত্রের আজ এত দূর এগিয়ে আসা। বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ আফজাল হোসেনের নেশা ও পেশা।
চীর তরুণ এই অভিনেতার রুচিবোধ, পোশাকের স্টাইল, নিজেকে উপস্থাপনের ভঙ্গি সবই অনুকরণীয় নবীনদের কাছে। আজও তরুণদের ফ্যাশন আইকন হিসেবে অনুসরণীয় রয়েছেন আফজাল হোসেন। তার ব্যক্তিত্বের আভিজাত্যে খেই হারিয়ে ফেলে বাঘা বাঘা মডেলরাও। বহুগুণের অধিকারী এ মানুষটি সম্পর্কে আরেকটি কথা না বললেই নয়। তা হলো মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা। প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি বটে, তবে পরোক্ষভাবে যোদ্ধা ছিলেন তিনিও। তার আঁকা কার্টুন প্রদর্শনী সাহস জুগিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের।
এসএ/