ক্যারিয়ার গড়ার গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস (ভিডিওসহ)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:১৪ পিএম, ২০ জুলাই ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৫:২৩ পিএম, ২০ জুলাই ২০২০ সোমবার
ক্যারিয়ার গাইড অনুষ্ঠানে কথা বলছেন এসিআই’র বিজনেস ডিরেক্টর কামরুল হাসান
আমরা ছোট থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বড় হই। যখন বড় হই, তখন আগের স্বপ্নগুলো আর থাকে না। নতুন নতুন স্বপ্ন এসে ভর করে। কখনো মনে হয় ব্যাংকার হই, কখনো ফিল্ম নিয়ে কাজ করব, কখনো ফটোগ্রাফার হবো, আবার বাবা-মাও চায় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হতে। একদিকে নিজের স্বপ্ন অন্যদিকে বাবা-মার স্বপ্ন কি যে করি। বুঝে উঠতে পারছি না ক্যারিয়ারটা কোনদিকে যাবে। এমন সমস্যা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে আসে। তবে এখন এ সমস্যার সময় শেষ হয়েছে। নিজেকেই এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং সমাধান করতে হবে সমস্যাগুলোকে।
আগে সমস্যাগুলো কি কি তা বের করতে হবে। অনেকগুলো ক্যারিয়ার নিয়ে কনফিউজড হয়ে পরে। যেমন ব্যাংকার হতে চান আবার সরকারি চাকরিজীবী হতে চান এ নিয়ে কনফিউজড। আবার যোগ্যতা একটু কম বলে পছন্দের ক্যারিয়ারটার কাছে যেতে পারবেন না এমন চিন্তা হতে পারে। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না।
স্বপ্নের ক্যারিয়ারটি পেতে হলে চেষ্টা করতে হবে নিজ থেকেই। এখন অনেক ধরনের ক্যারিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ করুন কোন ধরনের ক্যারিয়ারের জন্য আপনি ফিট। কারণ প্রত্যেকটি ক্যারিয়ারে জন্য আপনি ফিট হবেন এমন না ভাবাই ভালো। তবে মনে রাখবেন আপনি কোন না কোন কাজের যোগ্য। তাই নিজে যে দিকে এগিয়ে গিয়েছেন সেদিকেই ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করা ভালো।
ক্যারিয়ার নিয়ে একুশে টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন ‘ক্যারিয়ার গাইড’ অনুষ্ঠানে বিস্তারিত কথা বলেছেন এফএমসিজির জগতের অন্যতম লিজেন্ড এবং আইকন কামরুল হাসান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায়ী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এসিআই’র বিজনেস ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত। কামরুল হাসান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর যুক্ত হন বাংলাদেশের এফএমসিজি ইন্ডাস্ট্রিতে। সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস দিয়েছেন। নিম্নে তা দেয়া হলো-
একুশে টেলিভিশন: এফএমসিজি ইন্ডাস্ট্রিজে আসার শুরুটা কিভাবে হয়েছিল কিংবা কোন প্ল্যান ছিল কি না?
কামরুল হাসান: আমার এইম ছিল ডক্টর হবো। এ জন্য কোচিংও করেছি। তবে চ্যান্স হয়েছিল কুমিল্লা মেডিক্যালে, এখানে ভর্তি হইনি। একই সময়ে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম আইবিএতে। আরেকটা এইম ছিল যে, আমি পাস করার পর একদিনও বসে থাকবো না। আমার ক্যারিয়ার শুরু করলাম ভার্জিন ড্রিকিংস ইন্ডাস্ট্রিতে। জয়েন করার ছয় মাসের মধ্যে ভার্জিন ড্রিকিংস লনস্ করি বাংলাদেশে। এর দুই মাসের মধ্যে সফট ড্রিকিংস ইন্ডাস্টিতে লিডারশীপ পেয়ে যায় ভার্জিন। যেখানে কোক-পেপসির মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানি ছিল।
একুশে টেলিভিশন: এফএমসিজি ইন্ডাস্ট্রিতে যারা আসতে চাচ্ছে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
কামরুল হাসান: এফএমসিজি সেক্টরটাই এমন যে, একজন মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। আমি যদি ক্যারিয়ারটা এই সেক্টরে গড়তে চাই, তাহলে বাজারে কিংবা যখন যেখানেই যাই না কেন কী প্রডাক্ট আছে, কিভাবে মার্কেটিং করে, কত ধরনের ব্র্যান্ড আছে, কোনটা দেশি ব্র্যান্ড কোনটা বাইরের ব্র্যান্ড এবং এর সঙ্গে টিভিতে যে বিজ্ঞাপনগুলো চলছে, কে কী বলতে চাচ্ছে, পুস সেলিংয়ের বিষয়গুলোর প্রতি ইনফিউজিং মাইন্ড যদি স্টুডেন্টদের থাকে, তাহলে এটা তার জন্য অনেকটাই হেলফ করবে। আরেকটি হলো লার্নিং, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বইগুলো ভালো করে পড়তে হবে। একদিকে বই পড়লাম অন্যদিকে অবজার্ভেন্ট হলাম তাহলে কিন্তু দুটির মধ্যে ব্রান্ডিং করা যাবে। ব্রান্ডিং করতে পারলে লার্নিংটা বেটার হয়।
একুশে টেলিভিশন: এখন যারা স্টুডেন্ট এই মুহূর্তে তাদের কী করা উচিত, যাতে পরবর্তীতে কোন এফএমসিজি ম্যানেজার হতে পারে?
কামরুল হাসান: লাইফ খুবই কপ্লেটেটিভ, এখানে যোগ্যতাসম্পন্ন না হলে কিন্তু হবে না। এ জন্য এক্সটা কারিকুলামে থাকতে হবে। যেমন ডিবেট, বিজনেস ক্লাব, বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি সম্পর্কে প্রচুর স্টাডি করতে হবে। লোকাল ইকোনমি, ট্র্যান্ট, গ্লোবাল ইকোনমি ও ডমেস্টিক ইকোনমি ইন্ডিকেটেড সম্পর্কে আইডিয়া থাকতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: ভ্যান ম্যানেজার জব আসলে কী? একজন ভালো ভ্যান ম্যানেজার হতে হলে স্টুডেন্টদের কী করা উচিত?
কামরুল হাসান: ভ্যান ম্যানেজার একটি ব্রান্ডের কাজ করে। বাচ্চাকে মা যেমন নার্সিং করে বড় করে, তেমনি ব্রান্ডকে নার্সিং করে বড় করে ভ্যান ম্যানেজার। মায়ের মতোই ঠিক ভ্যান ম্যানেজারকে বুঝতে হবে তার ব্রান্ডের কখন অ্যাডভেটাইজে যেতে হবে, কখন এটাকে রিপজিশনিং করতে হবে, কখন রি-লাউন্সিং করতে হবে। এই জিনিসগুলো একজন ভ্যান ম্যানেজারের শয়নে-স্বপনে-জাগরণে থাকতে হবে। তাহলেই সে সাকসেসফুল হতে পারবে।
একুশে টেলিভিশন: এফএমসিজি সেক্টরে সেলসে যারা ক্যারিয়ার গঠন করতে চায়, তাদের কী করা উচিত?
কামরুল হাসান: যে কোন ক্যারিয়ারে আপনি যদি ভাল করতে চান এবং ভাল করতে পারেন তাহলে কিন্তু ওকে। সেলসে সেই অপারচুনিটি বেশি। কারণ হলো একটা অর্গানাইজেশনে একজন ভ্যান ম্যানেজার কিন্তু সেলসে থাকে অসংখ্য। তাই এই জায়গায় অপারচুনিটি বেশি। কিন্তু আমাদের দেশের স্টুডেন্টরা সেলসে যেতে চায় না। এটার কারণ সেলসে বাইরে ফিল্ড ওয়ার্কিং বেশি করতে হয়। তাই আরামে অফিসে বসে কাজ করার আগ্রহ থাকে তাদের। মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে ফিল্ডের এক্সপেরিয়েন্স দরকার আছে। সেলসে ক্যারিয়ার গড়ে মার্কেটিংয়ে আসলে এটি ইফেক্টিভ হবে। ভ্যান ম্যানেজার হতে হলে এবং মার্কেটিংয়ে কাজ করতে হলে সেলস বুঝতে হবে, ফাইন্যান্স বুঝতে হবে, ডিস্টিভিউশন বুঝতে হবে, প্রোডাকশন বুঝতে হবে, ফিল্ড মার্কেটিং বুঝতে হবে এবং কনজ্যুমার বুঝতে হবে। তবে নট নেসেসারি তাকে সেলস থেকে আসতে হবে, বাট তাকে সেলস বুঝতে হবে।
একুশে টেলিভিশন: কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে উত্থান-পতন রয়েছে, তবে যারা বড় হয় তাদের সিক্রেট সসটি আসলে কী?
কামরুল হাসান: কনটিনিউয়াস লার্নিং, ডেডিকেশন, সিন্সিয়ারেটি, বিজনেস ওয়ার্ল্ডের চেঞ্জিং ট্রান্ট বুঝতে হবে। আরেকটা হলো ইনোভেশন, অলওয়েজ মাথায় রাখতে হবে কাজটি কিভাবে এফিসিয়েন্টলি করা যায়।
একুশে টেলিভিশন: অনেকে কুইক জপ হপ করতে থাকেন, অন্যদিকে কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় থাকায় এমডি, সিইও হয়েছে। কিন্তু এই চাকরি হপের উদ্দেশ্য কি?
কামরুল হাসান: মানুষ সব সময় চায় একজন ভালো বসের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যার আন্ডারে থাকলে শেখা যাবে। সুতরাং বস যদি ভাল না হয় তখন মানুষ সুইস করে। সুইস করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে যে অপারচুনিটি ভাল হয়নি। এরপর আরেক জায়গায় মুভ করা। এভাবেই অনেক জায়গায় জব হপারের মতো ঘুরে বেড়ানো হয়। আল্টিমেটলি অনেক সময় ক্যারিয়ার সাসকেস হয় না, আবার অনেক সময় হতেও পারে। কিন্তু, একটা জায়গায় থেকে নিবেদিতভাবে কাজ করলে তার শেখার পরিপূর্ণতা আসে।
একুশে টেলিভিশন: আপনি কিভাবে ব্যর্থতা, বাধা-বিপত্তি ম্যানেজ করেন, কিভাবে ডিল করেন?
কামরুল হাসান: একটা ব্যর্থতা একটা শেখা, সুতরাং ব্যর্থতা বলা ঠিক হবে না। কিন্তু বুঝতে হবে কেন ফেইল করলাম, ওখান থেকে কিছু শিখতে না পারলে তাহলে কিন্তু আমি কিছুই শিখলাম না। আবার যদি সাকসেসও হই, তাহলে কেন সাকসেস হলাম তাও জানতে হবে। কেননা এই সাকসেস পরবর্তীতে অন্য কাজে অ্যাপলাই করা যাবে।
একুশে টেলিভিশন: মেনটরশীপ কী আপনার জীবনে কোন ভূমিকা রেখেছে, আপনার কোন মেনটর আছে কি?
কামরুল হাসান: আমরা যারা প্রফেশনে আসি, একজনকে দেখেই তো ইন্সপেয়ার্ড হয়ে আসি। ওই জায়গাটা চিন্তা করলে তো আপনি কাউকে না কাউকে ফলো করেন এবং কেউ না কেউ আপনাকে গাইড করে। কাজেই পরামর্শদাতা এই জায়গায় দরকার আছে।
একুশে টেলিভিশন: যারা গ্রাজুয়েশন করেছে এবং যারা ইয়াং প্রফেসনালাস এদের ক্যারিয়ার প্রফেশনের জন্য টপ ফাইভ টিপস যদি দেন?
কামরুল হাসান: প্রথমে তার একাডেমিক জ্ঞান ভাল থাকতে হবে, তার উপস্থাপনা দক্ষতা থাকতে হবে, আইটি জ্ঞান থাকতে হবে, বিশ্লেষণ ক্ষমতা থাকতে হবে। সর্বশেষ আর যেটি থাকতে হবে তা হলো- ধৈর্য।
প্রসঙ্গত, এফএমসিজি বাংলাদেশের অন্যতম প্রটেনশিয়াল সেক্টর। এখানে ক্যারিয়ার গড়াটা অনেকের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এই সেক্টরে ২ কোটি লোক যুক্ত ক্যারিয়ার গড়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে এখানে। আপনার মধ্যে যদি শেখার আগ্রহ থাকে, আপনি যদি পরিচিতি লাভ করতে চান, অস্থির না হোন, আপনার মধ্যে যদি ধৈর্য্যশক্তি থাকে, আপনি যদি জীবনে বড় হতে চান তাহলে এফএমসিজিতে ক্যারিয়ার গড়া আপনার জন্য অনেকটাই সহজ।
এফএমসিজি বা ফার্স্ট মুভিং কনজুম্যার গুডস শিল্পের মধ্যে এমন শিল্পকে বুঝায়, সেখান থেকে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যগুলো উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এফএমসিজি প্রতিষ্ঠানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন করা হয় এবং এসব পণ্য দ্রুত ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে হয়। আর এ জন্য এফএমসিজি শিল্পে বিভিন্ন পদে প্রচুর জনবল নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিবছর।
ক্রেতার পরিতৃপ্তির মধ্যেই এ পেশার আনন্দ। তাই দেশের এফএমসিজি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়া একই সাথে জনপ্রিয়, সম্ভাবনাময় ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। ইতিবাচক মনোভাব, পেশাগত জ্ঞান এবং সঠিক অধ্যাবসায় এফএমসিজির সেক্টরে সফল হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বিশ্বায়নের এই যুগে পরিশ্রমী তরুণ-তরুণীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে এফএমসিজি সেক্টর।
এএইচ/এমবি