ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

প্রতিদিন অসংখ্য পাগলের মুখে হাসি ফুটান সীতাকুণ্ডের আবু তাহের

এম হেদায়েত সীতাকুণ্ড 

প্রকাশিত : ১১:১৩ পিএম, ২১ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

রাস্তায় হাঁটতে, চলতে-ফিরতে কত পাগলই তো আমরা দেখি। তাকে নিয়ে ভাবা তো দূরের কথা, অনেকে দ্বিতীয়বার তাকাতেই সংকোচ বোধ করে। অথচ একবারও ভাবি না, সে-ও একজন মানুষ। তার প্রতি কি এ সমাজের কোনো দায়িত্ব নেই? আমাদের কাছে হয়তো বা নেই; কিন্তু সমাজের দু-একজন মানুষ আছেন, যাঁরা এদের নিয়েও ভাবেন। তাঁদেরই একজন সীতাকুণ্ডের ব্যতিক্রমী মানব সেবক মোঃ আবু তাহের (২৯)।

তিনি উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের নতুন পাড়া গ্রামের আবদুল হামিদের পুত্র। শুধু পাগল নয়, সমাজের অবহেলিত কিংবা বিপদগ্রস্থ যেকোন মানুষের জন্য কিছু করতে পারাটাকে পরম সৌভাগ্য মনে করেন নিঃস্বার্থ এ যুবক। নিজের প্রয়োজনে কেউ ডাকলে ভোর কিংবা রাত দুপুরে কিছু যায় আসে না। দ্রুতই ছুটে যান সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তিটির কাছে।

দেশে করোনা ভাইরাস জনিত লকডাউন শুরু হবার পর থেকে নিয়মিত পাগলদের সেবা, করোনা আক্রান্ত রোগিদের বাঁচাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে যাওয়াসহ তার বেশ কিছু ব্যতিক্রমী সেবামূলক কাজ সীতাকুণ্ডের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। তাহেরকে দেখে খুশিতে মেতে উঠে পাগলেরাও ! কারণ, তারা জানে ইনিই একমাত্র মানুষ যে নিয়মিত তাদের মুখে খাবার তুলে দেন। পরম আপনজনের মত সেবা করেন। খেতে দেন, চিকিৎসা প্রদানের চেষ্টা করেন। তাইতো যুবকটিকে কাছে পেলে ছুটে আসে পাগলের দল!

দিনের পর দিন নিজের ঘরে রান্না করে পাগলদের খাওয়াতে খাওয়াতে একসময় তাদের অতি প্রিয়জন হয়ে গেছেন তাহের। কোনো কোনো খোলা বারান্দায় পাগল অবস্থান করছে তার সন্ধান নিয়ে সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন খাবার নিয়ে। অনতিদূরে শরীরে মল-মূত্রের গন্ধ নিয়ে শুয়ে থাকা পাগলকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। এই সব পাগলসেবা দেখতে অনেকে ভিড়ও করছেন। পাগলরা কোনো না কোনো বাবা-মায়ের সন্তান। তাদের শরীরে থাকে না লজ্জা নিবারণের পোশাক। শরীরে মল- মূত্রের গন্ধে কেউ কাছে আসতে চায় না, প্রতিনিয়ত খাওয়া, গোসল,কাপড় পরিধানসহ কিছুই করতে পারে না তারা।

এসব পাগলদের কাছে পরিচয় জানতে চাইলে কিছু বলতে পারে না। তাই আমি এসব পাগল ও অসহায়দের একটু সেবা করছি মাত্র। পাগল সেবার মাঝেই বাকি জীবনটা কাটানোর আশা প্রকাশ করেন তাহের।

” জনসেবা জনকল্যাণে আমরা” নামে তাহেরের রয়েছে একটি সেবামুলক সংগঠন। সেই সংগঠনের মাধ্যমেও তাহের গরীব, এতিম ও অসহায় মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করে থাকেন।

মানবতাবাদী যুবক তাহের বলেন, এই উপজেলায় আনুমানিক ৭০-৮০ জন পাগল আছেন। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবার পর এই পাগলগুলো খাবারের অভাবে ধুকছিলেন। তাই তিনি স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে বলে তাদের জন্য খাবার রান্না করিয়ে ভাড়া গাড়ি নিয়ে সবার কাছে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিতেন। এভাবে গত প্রায় চার মাস পাগলদের খাবার দিতে দিতে অনেক পাগল এখন তাকে দেখে চিনে গেছে।

তিনি জানান, ‘মানবিক ও সামাজিক কাজগুলো সরকারের একার নয়। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই এগিয়ে এলে আর একজন মানসিক ভারসাম্যহীনও রাস্তায় পড়ে থাকবে না।

আরকে//