ঝালকাঠিতে মডেল পাইলট বিদ্যালয়ের সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে মৌন মিছিল
আজমীর হোসেন তালুকদার, ঝালকাঠি:
প্রকাশিত : ০৮:২১ পিএম, ২২ জুলাই ২০২০ বুধবার
ঝালকাঠির রাজাপুরে শত বছরের ঐতিহ্যবাহি রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বেহাত হওয়া সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সর্বস্তরের জনতা। ১১ দফা দাবী নিয়ে গত দুইমাস ধরে বিদ্যালয়ের বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিবেকবান রাজাপুরবাসী মানববন্ধন, গণস্বাক্ষরসহ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল ১১ টায় অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে কালো ব্যাচ ধারণ, মৌন মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী বৃন্দ এবং সচেতন রাজাপুর বাসীর আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী মৌন মিছিলে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের কয়েক সহাস্রাধিক মানুষ মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিলে অংশ নেয়। মিছিলটি রাজাপুর প্রেস ক্লাব চত্তর থেকে শুরু করে উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে উপজেলা পরিষদ চত্তরে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আ’লীগ সহ সভাপতি বাবু সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস, উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: শাহ আলম নান্নু, সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান মোল্লা, উপজেলা যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজনীন পাখি প্রমুখ।
আন্দোলনকারীরা জানায়, বিদ্যালয়ের প্রায় ৯ একর সম্পত্তি থাকা সত্যেও মাত্র ৬৭ শতাংশ জমিতে ৫টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির বিপুল সম্পত্তির স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহল বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আত্মসাৎ করতেই বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে সংকুচিত করে একটি কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত করেছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের সহাস্রাধিক শিক্ষার্থীদের পিটি-প্যারেড করার জায়গাটুকুও নেই।
আন্দোলনকারীরা আরো জানায়, দখলকারীদের মধ্যে একজন সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক অবৈধ লিজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বধ্যভূমি সংলগ্ন বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দ্বীতল ভবন নির্মানসহ বেশকিছু জমি বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। বিদ্যালয়ের জমিতে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক ভবনটি নির্মানে ৪২লাখ টাকা ঋন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মৌকুফ করে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দিলে সেখানে শিক্ষার্থীদের পাঠাগার নির্মানের কথা থাকলেও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় অর্থলোভী সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে বরাদ্দ নিয়ে ব্যক্তিগত বানিজ্যিক উদ্দেশেদোকান ঘরে রুপান্তরিত করে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিদ্যালয়ের মূল ভবনের পেছনের দিকে বিপুল পরিমান সম্পত্তি কতিপয় স্বার্থন্বেষী ব্যক্তি নিজেদের ঘরবাড়ী নির্মান করে দখল করে নিয়েছে।
বিদ্যালয়ের ভকেশনাল ভবনটি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে পরিত্যাক্ত দেখিয়ে ম্যানেজিং কমিটির কয়েক সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে ভাড়া দিয়ে স্কুল তহবিলে জমা না করে নিজেদের পকেটভারী করছে। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি কার্যত; ধ্বংস করে কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের মিলিত উক্ত অর্থলোভী চক্র রাস্তার সংলগ্ন অংশ নাম মাত্র মূল্যে লিজ দেখিয়ে বানিজ্যিক মার্কেট নির্মানের পায়তারা করছে।
বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন আফসার আলী আকন শিক্ষক-ছাত্র মিলনায়তনটি বহু দিন ধরে আত্মাসাতের প্রচেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে ভাড়া দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। আর এসব দখল-আত্মসাৎ ও লুটপাটের সাথে যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে তখন সেই দলের লেবাসধারী কতিপয় রাজনৈতিক নেতা সরাসরি অংশ নেয়ায় সাধারন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সচেতন জনসাধারন প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে সাহস পায়নি বলে বর্তমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীরা জানিয়েছে।
বক্তারা বলেন, উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সুদীর্ঘ প্রায় ৯৪ বছর যাবৎ গৌরব ও ঐতিহ্য নিয়ে এ অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। কালের বিবর্তনে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ লীজ প্রদান ও বেদখলের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের জায়গা সংকুচিত হয়েছে। তাই বিদ্যালয়ের বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করতে হবে। বিদ্যালয়ের এক ইঞ্চি জমিও বেদখলে থাকা চলবে না। প্রয়োজনে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাঁচাতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত যাবো। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে যদি তৎপর না হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
আরকে//