ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সংঘাত কেন বাড়ছে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০১ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২০ শুক্রবার

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে স্বার্থের সংঘাত বেড়েছে। সামনের দিনগুলোয় এ বিরোধ আরো প্রকট হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ দুই পরাশক্তির মধ্যকার দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আজ হুমকির মুখে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতিতে বড় ধরনের অচলাবস্থার আশঙ্কা করছেন ও সে অনুযায়ী নতুন করে তাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। খবর সিএনবিসি।

চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের আগুন আরো বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, চীনের দুই হ্যাকার নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণারত মার্কিন কোম্পানিগুলোকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য চুরি করছে। তারা এ কাজ করছে দুটি উদ্দেশ্যে। প্রথমত, নিজেরা দুপয়সা কামিয়ে নেয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত, চীনা সরকারের হয়ে চৌর্যবৃত্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে।

এদিকে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট হঠাৎ করে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আজকের মধ্যে সেখানে কনস্যুলেটটির সব কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, মেধাস্বত্ব ও নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে এ নির্দেশ দিয়েছে তারা।

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলে আসা পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াভিত্তিক সম্পর্কের এ টানাপড়েন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিষ্ঠানগুলো। কমবেশি তাদের সবাই মনে করছে যে দুই পরাশক্তির মধ্যকার এ স্নায়ুযুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক বিশ্বে মেরুকরণ বাড়বে। কারণ এ দুই দেশের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি ও কোম্পানিগুলো এখন হয় চীন অথবা যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত হয়ে পড়বে।

রকফেলার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলী জিমি চ্যাং বলেছেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকেই চীন তা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এরপর তারা হংকংয়ের ওপর জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। আসলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশগুলো ও চীনের নীতিগত সিদ্ধান্তের গতিপ্রকৃতি বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা কীভাবে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফির আসবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে বিবাদ চলছে, তা আগামী দিনগুলোয় কেবলই বাড়বে, যদি না চীনের নীতিগত কাঠামোয় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসে। আর এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে না তেমন কিছু হতে পারে।’

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপের খুব বড় প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না। গতকাল শীর্ষ সূচকগুলো লেনদেন শুরু করেছে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থেকেই। তবে এতে চিন্তামুক্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ বেইজিং এরই মধ্যে হুমকি দিয়ে রেখেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নির্দেশ প্রত্যাহার করে না নিলে চীনও এর পাল্টা কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

জিমি চ্যাংয়ের মতে, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার বিবদমান সম্পর্কের দিকে বিনিয়োগকারীরা এখন আগের থেকে আরো বেশি সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের দ্বন্দ্বের কারণে সাপ্লাই চেইন ও ট্রেড প্যাটার্নে যে পরিবর্তন আসবে, তা কিছু অর্থনীতি ও কোম্পানির ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।’

চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের পূর্বাভাস দিতে গিয়ে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্ল্যাকরক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার লড়াইয়ে রসদ জুগিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসছে। এর ঠিক আগ মুহূর্তে প্রায় সব খাতেই যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ছে। এতে বিপাকে পড়ছে অন্য দেশগুলো। তাদের এখন হয় যুক্তরাষ্ট্র নয় চীন যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। এই অর্থনৈতিক মেরুকরণ এখন কেবল আর প্রযুক্তি খাতে সীমাবদ্ধ নেই। তা সব খাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। আগে হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অগ্রাধিকার পেত। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীদের উভয় বাজারের দিকেই লক্ষ রাখতে হচ্ছে। বিশেষ করে যখন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র এখন এশিয়ার দিকে সরে আসছে।

ব্ল্যাকরকের গ্লোবাল চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট মাইক পাইল বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীদের এখন সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদের পোর্টফোলিও সাজাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির দুই চালিকাশক্তি বাজারেই ভারসাম্যের ভিত্তিতে পোর্টফোলিও তৈরি করা যায়।’

রকফেলার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের জিমি চ্যাং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একদিকে মার্কিনরা চায় চীন যেন তাদের কৃষিপণ্য কেনে। অন্যদিকে তারা চীনকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে রাজনৈতিক কূটকৌশল সাজাচ্ছে। নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টি উভয়েই চীনবিরোধী সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে ভোট টানতে চাইবে। আমার মনে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিদ্বেষ দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে এ বিদ্বেষ আরো প্রকট হবে, যা বাজার পরিস্থিতিকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।’

এমবি//