ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন বিলম্বিত হতে পারে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫০ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২০ শনিবার

কোভিড-১৯ মহামারি ও বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামগ্রিক টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে, এমন মতামত উঠে এসেছে পিকেএসএফ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে। 

পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (এসডিজি বিষয়ক) মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

ওয়েবিনারে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক কর্তৃক প্রণীত ‘টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২০’-এ বাংলাদেশের মূল্যায়ন ও এসডিজি বাস্তবায়নে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে কিছুটা বাধাগ্রস্ত করছে, তবে সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে, তা উল্লেখ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ অনেক বাড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, দরিদ্রদের জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে সরকার বদ্ধপরিকর ও আন্তরিক। সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাসমূহে এসডিজির অভীষ্টসমূহ নিহিত আছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ সঠিক সময়ে এসডিজি অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম জানান, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিম্নমুখী হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন অর্জন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি শিথিল না করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বজায় রাখার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ তার বক্তব্যে কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক গৃহীত নানা পদক্ষেপকে দূরদর্শী ও সময়োপযোগী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এ পরিস্থিতিতে সঠিক পরিকল্পনা, কার্যক্রম গ্রহণ ও অর্থায়নের পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে অন্যান্য অভীষ্টের পাশাপাশি মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, কোভিড মহামারির বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে এসডিজি অর্জন নিশ্চিত সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা জোরদার করা আবশ্যক।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে অগ্রগতির ওপর গত ৩০ জুন ২০২০ ‌‌‘টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২০’ শীর্ষক একটি বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওয়েবিনারে এই বিষয়ক উপস্থাপনা প্রদান করেন পিকেএসএফ (এসডিজি) উপ-মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুল ইসলাম শামীম। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ সরকারিভাবে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক নামের একটি সংস্থা। প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

সূচকভিত্তিক বাংলাদেশের অগ্রগতি মূল্যায়নে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। তবে, অতি দারিদ্র্য নিরসনে সফল হলেও দারিদ্র্য নিরসনে সফলতার হার কম। ক্ষুধা মুক্তির সুচকগুলোতে দেখা যায়, ৩টি সূচকে বাংলাদেশ ভালো করলেও ২টিতে স্থিতাবস্থায় ও ২টিতে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের সূচকগুলোর মধ্যে ২টি সূচকে ভালো করেছে কিন্তু ১১টি সূচকেই চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান রয়েছে। গুণগত শিক্ষায় স্থিতাবস্থা রয়েছে। লৈঙ্গিক সমতা অর্জনে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এভাবে মূল্যায়িত মোট ৮৫টি সূচকের মধ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ২৬টি সূচকে লক্ষ্য অর্জন করেছে, ১৭টি সূচক অর্জনে খুবই কম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, ১৬টি সূচকে কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং ২৪টি সূচকে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টেকসই অভীষ্ট ৯ ও ১৭-তে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভার্চুয়াল এই আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ জসীম উদ্দিন। মূল উপস্থাপনার ওপর আলোচনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগ অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও পিকেএসএফ পরিচালনা পর্ষদ সদস্য রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ। পিকেএসএফ-এর বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।

আরকে//