করোনায় কমেছে পৃথিবীর কম্পন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:১০ এএম, ২৬ জুলাই ২০২০ রবিবার
আমরা মানুষেরা এক ধরনের বাধাদানকারী প্রজাতি। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা পৃথিবী নামের গ্রহে কম্পন সৃষ্টি করে। সহজভাবে বললে, গাড়ি চালনা ও ভ্রমণ, খনন ও নির্মাণ, শিল্প এবং এমনকি খেলাধুলার আয়োজনগুলোও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ভূমিকম্পের কম্পন তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তবে বর্তমানে কভিড-১৯-এর কারণে লকডাউনকে ধন্যবাদ দিতেই পারে পৃথিবী। মানুষের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড কমে আসায় গ্রহটি বর্তমানে জানা ইতিহাসে অ্যানথ্রোপোজেনিক সিসমিক শব্দের সবচেয়ে নাটকীয় হ্রাস প্রত্যক্ষ করছে।
ব্রিটেনের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের সিসমোলজিস্ট স্টিফেন হিকস বলেছেন, আমরা ক্রমাগত পৃথিবীর গর্জন পর্যবেক্ষণ করছি। তবে এটা নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পায়, সপ্তাহান্তে ও রাতে কিছুটা শান্ত থাকে, পাশাপাশি ক্রিসমাস, নববর্ষ ও ছুটিতে কিছুটা কম থাকলেও একেবারে কখনই থামে না। এমনকি লকডাউনেও মানুষের আওয়াজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি, তবে কয়েক মাস আগে থেকে ৫০ শতাংশে নেমে আসা এটা আগে দেখা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হ্রাস।
পৃথিবীর ১১৭টি দেশের ২৬৮টি সিসমিক মনিটরিং স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা করা হয়েছে। কভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে দেশগুলো যখন লকডাউন বাস্তবায়ন শুরু করে তখন একটি পরিষ্কার প্যাটার্ন দেখা যায়। লকডাউনে থাকা অঞ্চলগুলোর ১৮৫টি স্টেশন উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানথ্রোপোজেনিক সিগন্যালে উল্লেখযোগ্য অবনমন রেকর্ড করেছে। এটা সর্বাধিক ঘনত্বযুক্ত শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কমেছে। তবে গবেষকরা বলেছেন, এর প্রভাব কম ঘনত্ব পল্লী অঞ্চলে নিস্তব্ধতা তৈরি করেছিল।
এই নিস্তব্ধতা বিশ্বজুড়ে মানবিক প্রভাবের বৈশ্বিক মহামারী-প্ররোচিত হ্রাসের অংশ। দুটি মূল কারণেই ভূমিকম্পবিদরা বলেছেন, এটা একটা বৈজ্ঞানিক উপহার। প্রথমটি হলো প্রাক-মহামারীকালটি করোনাভাইরাসের লকডাউনের সময়কালের সঙ্গে তুলনা করে বিজ্ঞানীরা মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা উত্পন্ন শব্দটি আগের চেয়ে আরো ভালো করে চিহ্নিত করতে পারেন। দ্বিতীয়টি হলো নিস্তব্ধতা, বিজ্ঞানীরা আরো ভালো স্পষ্টতার সঙ্গে ভূমিকম্পের সংকেত শুনতে পারবেন, যা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলের কাছাকাছি ভূমিকম্পের কেন্দ্রগুলোতে ডুবে যেত।
বেলজিয়ামের রয়্যাল অবজারভেটরির ভূমিকম্পবিদ ও গবেষণাটির শীর্ষ লেখক থমাস লেকোক ব্যাখ্যা করেন, বতুমান নগরায়ণ ও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক জনসংখ্যার সঙ্গে আরো বেশি মানুষ ভূতাত্ত্বিকভাবে বিপজ্জনক অঞ্চলে বসবাস করবে। অতএব প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট গোলমালের মধ্যে পার্থক্য করা আগের চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যাতে আমরা শ্রবণ করতে পারি এবং আমাদের পায়ের তলদেশের স্থলভাগের গতিবিধিকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। আর এ গবেষণাটি নতুন গবেষণার ক্ষেত্রটিকে সূচনা করতে সহায়তা করতে পারে।
এমবি//