দেশের অনলাইন বাজারে শক্ত অবস্থানের পথে ইভ্যালি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১২:৩০ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২০ রবিবার
যাত্রা শুরুর দুই বছরেরও কম সময়ের মাঝে দেশের বাজারে শক্ত অবস্থান অর্জনের পথে ইভ্যালি ডট কম ডট বিডি। প্রায় ৩৫ লাখ নিবন্ধিত গ্রাহক, ১০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিক্রেতা এবং নামীদামী ব্র্যান্ডের পণ্য নিয়ে স্বনির্ভর মার্কেটপ্লেস হিসেবে গড়ে উঠছে দেশিয় প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। সেই হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির বয়স দুই বছরেরও কম। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা কিংবা আমাজনের মতো বাংলাদেশের বাজারে প্রতিষ্ঠিত এবং শক্ত অবস্থান অর্জন করতে চলেছে ইভ্যালি। বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিকিকিনির নিয়মিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও সম্পূর্ণ ই-কমার্স ভিত্তিক ইকো-সিস্টেম তৈরির পথে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
করোনাকালীন সময়ের শুরুতেই বিভিন্ন ধরনের গ্রোসারি পণ্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠানটি চালু করে ইভ্যালি এক্সপ্রেস শপ। পাশাপাশি পরবর্তীতে এতে যুক্ত হয় মাছ, মাংস এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মতো পণ্যও। রাজধানী ঢাকার বাইরে ৩০টিরও বেশি জেলায় এবং কিছু কিছু জেলার ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে ইভ্যালি।
পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সেবা চালুর অংশ হিসেবে ইভ্যালি নিয়ে আসে বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সেবা। ইভ্যালি ফুড এক্সপ্রেস বা ই-ফুড এর মাধ্যমে রাজধানীর বিখ্যাত সব রেস্টুরেন্টের খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ই-ফুডের যাত্রা শুরুর প্রথম মাসেই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় ৫০ হাজার ডেলিভারি সফলভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে ইভ্যালি সূত্রে জানা যায়।
ব্যবসায়িকভাবে পণ্য বিক্রি ছাড়াও অনানুষ্ঠানিকভাবে বা ব্যক্তিগত পণ্য বিক্রির প্ল্যাটফর্মও নিয়ে এসেছে ইভ্যালি। সহযোগী প্রতিষ্ঠান ই-বাজারে যেকোন ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। আবার গ্রাহকেরাও সেখান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। আর কেনাবেচার এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে বিনামূল্যে। গ্রাহক এবং বিক্রেতার উভয়ের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিরিক্ত কোন খরচ ছাড়াই পেমেন্ট পদ্ধতিও রাখা হয়েছে ই-বাজারে। আসছে ঈদ উল আযহাকে স্যামনে রেখে কোরবানির পশু বিক্রেতারাও এখানে তাদের পশু বিক্রি করতে পারবেন বলে জানিয়েছে ইভ্যালি। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার বার করে ডাউনলোড হচ্ছে অ্যাপটি।
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল জানান, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী রয়েছেন। এসব ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অনলাইন বা ইকমার্স অবকাঠামো নেই। এদের কথা চিন্তা করে ‘ই-খাতা’ নামক একটি ইনভেনটরি এবং একাউন্টিং সলিউশন রয়েছে ইভ্যালির। এভাবেই ই-কমার্সের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ অটোমেশন এবং প্রযুক্তি নির্ভর ইকো-সিস্টেম গড়ে তুলতে চায় বলে দাবি ইভ্যালির।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে শুরু করেছি তবে শুরু থেকেই আমাদের স্বপ্ন ছিল দেশ ও দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে বড় হওয়ার। আমরা প্রযুক্তি নির্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইকমার্স ইকো-সিস্টেম গড়ে তুলতে চাচ্ছি। এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে সবধরনের পণ্য ও সেবা পাওয়া যাবে। আমাদের সাথে এই মুহূর্তে ওয়ালটন, স্যামসাং, এমআই, টিভিএস, বাজাজ, হোণ্ডা, পারটেক্স, ব্রাদার্স ফার্নিশার্স, বেঙ্গল গ্রুপের মতো স্বনামধন্য এবং জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড যুক্ত আছে। খাবার আইটেমের কথা বললে গ্লোরিয়া জিনস বাংলাদেশ, বিএফসি, সিক্রেট রেসিপি, শেফস টেবিল, কোকা কোলা এর মতো প্রতিষ্ঠানের খাবার ও বেভারেজ পণ্য সরবরাহ করছি। ফুড ডেলিভারি সেবা এবং ডেলিভারি বিভাগ ই-লজিস্টিক্স এ স্থায়ী এবং ফ্রিল্যান্স ভিত্তিতে অন্তত তিন হাজার ‘ইভ্যালি হিরো’ তথা রাইডারের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘বিভিন্ন খাতের ওপর আলাদা আলাদা ওয়েব এবং স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপ ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ই-বাজার চালু হওয়ার মাত্র ১৬ দিনে ৬০ হাজার গ্রাহক এতে যুক্ত হয়েছেন। গেল জুন মাসের গুগল ট্রাফিক এবং ট্রেন্ডসের হিসেব মতে, বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত ইকমার্স সাইটগুলোর মধ্যে আমরাই এখন শীর্ষে। এই মাসে মোট ৪৯ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৬ বার গুগলে ‘ইভ্যালি’ সরাসরি সার্চ করা হয়েছে। বিভিন্ন রেফারেল লিঙ্ক থেকে ইভ্যালি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৫২৮ বার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ট্রাফিক এসেছে ১২ লাখ ১ হাজার ৪১৬টি।’
ব্যবসায়িক গ্রোথ এবং বিনিয়োগ নিয়ে ইভ্যালির এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে মাসে প্রায় ১০ লাখ অর্ডার নিয়ে কাজ করছি। ই-কমার্সে বিদেশি বিনিয়োগ আসতেই পারে। যেমন আমাদের ই-খাতায় ভারতের ‘খাতাবুক’ এর মতো গ্রোথ হতে পারে। জিও’তে যেমন ফেসবুক,গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আছে। আমরাও ইভ্যালিতে এমন বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। ইতোমধ্যে আমরা দেশি-বিদেশি শীর্ষ এয়ারলাইন্স টিকেটিং পার্টনার এবং হোটেল চেইনগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছি। তবে প্রতিষ্ঠান দেশিয় না হলে টেলিকম খাতের মতো ইকমার্স খাতও বিদেশিদের দখলে চলে যেতে পারে। আমরা দেশের জনগণ এবং সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক সাহায্য পাচ্ছি। এখনই সময় দেশিয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত অবস্থান অর্জনে আরও বেশি সমর্থন ও সাহায্য করার।’
এআই//এমবি