ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

যেভাবে নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে রাইনোপ্লাস্টি সার্জারি (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৩৪ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৩:১৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২০ সোমবার

এই পৃথিবীতে নিজের সৌন্দর্য কে না চায়। চেহারার এই সৌন্দর্যের অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে নাক। কেননা প্রথম দর্শনটা পড়ে নাকের উপর। সেই নাক যদি অ্যাবড়ো-থেবড়ো হয় তখন সৌন্দর্য অনেকটাই মেলান হয়ে যায়। এই সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রে জন্মগত ত্রুটি আবার দুর্ঘটনার কারণে কারও চেহারায় বিকৃতি ঘটে। এসব সমস্যা খুব সহজে দূর করে আপনার সৌন্দর্য অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে কসমেটিক সার্জারি রাইনোপ্লাস্টি। সবাই যে নিখুঁত সৌন্দর্য নিয়ে জন্ম নিবে তা কিন্তু নয়। কারও কারও দেখা যায় নাকটা বোচা জাতীয় এবং কারও আবার নাক অনেক প্রশস্ত। এই সমস্যাগুলো রাইনোপ্লাস্টির মাধ্যমে যেমন বোচা নাককে উঁচু এবং প্রশস্ত নাককে চিকন করা হয়। এমনকি নাকের বাঁকানো হাড্ডি সোজাও করা হয়। এর ফলে আপনার সৌন্দর্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এই বিষয়টিতে ঝামেলাও কম। বর্তমানে দেশে বিশ্বমানের অনেক কসমেটিক সার্জারির ডাক্তার তৈরি হয়েছে। 

একুশে টেলিভিশনের স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য এবং পরামর্শমূলক অনুষ্ঠান ‘হেলদি লাইফ’ অনুষ্ঠানে নাকের সৌন্দর্যবর্ধক কসমেটিক সার্জারি ‘রাইনোপ্লাস্টি’ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. ইকবাল আহমেদ। তিনি কর্মরত আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের বার্ন সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। 

একুশে টেলিভিশন: নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সার্জারি ‘রাইনোপ্লাস্টি’ এটা এখন বেশ প্রচলিত। এই সার্জারি সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাই?

ডা. ইকবাল আহমেদ: আমাদের দেহের সবচেয়ে দৃষ্টিগোচর অংশ হলো মুখ এবং এই মুখের মাঝখানে থাকে নাক। একটি উন্নত নাক যে কোন মানুষকে দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণ করে।  এর বিপরীতটা ঠিক যে, এর সামান্য গঠনগত ত্রুটি বা ব্যতয় ঘটলে তাকে কিন্তু অনেক সৌন্দর্যহানি করে থাকে। এই নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির যে কোন সার্জারিকে আমরা রাইনোপ্লাস্টি সার্জারি বলে থাকি।
 
একুশে টেলিভিশন: নাকের কী কী ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে বেশি আসে?

ডা. ইকবাল আহমেদ: আমরা বোচা বা অবধমিত নাক, অধিক প্রশস্ত নাক, নাকের একটি অংশ উঁচু হয়ে আছে এমন, জন্মগত ত্রুটি, আঁকাবাকা নাক (যেটি দুর্ঘটনাজনিত হতে পারে) অথবা ঠোঁটকাটা তালুকাটার সঙ্গে জন্মগত যে নাকটা থাকে এই সব সমস্যা নিয়ে মানুষ সাধারণত আমাদের কাছে বেশি আসে। 

একুশে টেলিভিশন: যেহেতু অনেকে ভয় পান তাই অনেকেরই প্রশ্ন থাকে সার্জারি ছাড়া কি এগুলো করা সম্ভব?

ডা. ইকবাল আহমেদ: সার্জারি ছাড়াও নাকের সৌন্দর্যবর্ধন সম্ভব। নাকের একটা সৌন্দর্যবর্ধন হলো নাকটা উঁচু করা, প্রশস্ত নাক চিকন করা, নাকের একটি অংশের হাড্ডি হয়তো বড় হয়ে আছে সেটি, আরেকটি আঁকাবাকা নাক (আঘাতের জন্য হোক কিংবা পূর্ববর্তী কোন সার্জারির জন্য হোক) যেগুলোকে আমরা ডাক্তারি ভাষায় ক্রুকটনো বলে থাকি। এগুলোর নন-সার্জিক্যালের কোনো ওয়ে নাই। শুধু সার্জারি ছাড়া নাকটা উঁচু করা যায়। কিন্তু এটার নেতিবাচক দিক হলো এটি খুবই অস্থায়ী। আমরা বলে থাকি পাঁচ মাস থেকে ১ বছরের মতো স্থায়ী হয়। কিন্তু এগুলো বেসিক্যালি চার-পাঁচ মাস স্থায়ী হয়। একটা বার যখন নাকটা উঁচু করবেন, চার-পাঁচ মাস পর আবার যখন নীচু হয়ে যাবে এটা কিন্তু তার মানসিক পরিবেশের উপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অনেকে ডিপ্রেস্ট হয়ে যায়। এই রোগীগুলোই বেসিক্যালি আমাদের কাছে আসে। যেহেতু একটি উঁচু নাক নিয়ে পরিচিত হয়েছে এবং সেটা ভালো লাগতো। আবার যেহেতু অবধমিত হয়ে গেছে, এখন সে এটার স্থায়ী সমাধান চায়। সার্জারি রি-সিপিংটা বেসিক্যাললি পার্মানেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতি।

একুশে টেলিভিশন: ফিলার কী ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি, কিভাবে এটা করা হয়ে থাকে?

ডা. ইকবাল আহমেদ: ফিলার হলো এক ধরনের পদার্থ, যেটা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া যায়। এই ফিলারটা আমরা নাকের উপরের অংশে, স্কিনের নীচে বা হাড়ের কভারিং থাকে সেটার নীচে দিয়ে থাকি। এগুলোর নিচে দিলে সেই অংশটা ফুলে এবং উপরের অংশটা উঁচু করতে পারা যায়।

একুশে টেলিভিশন: ফিলার দিয়ে যে পদার্থ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যা পরবর্তীতে খারাপ কোন রি-অ্যাকশন হওয়ার সম্ভাবনা?

ডা. ইকবাল আহমেদ: এগুলোতে সাইড ইফেক্ট খুবই নগন্য। যে পদার্থগুলোতে সাইড ইফেক্ট নাই, সেগুলো দিয়েই এই ফিলার তৈরি করা হয়। ঐ ধরনেরই ফিলার আমরা এসব কাজে ব্যবহার করে থাকি।
 
একুশে টেলিভিশন: সেক্ষেত্রে তা যদি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে বা আবার আঁকাবাকা হয়ে গেলে?

ডা. ইকবাল আহমেদ: আঁকাবাকা নয়, তবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

একুশে টেলিভিশন: কিভাবে এই সার্জারি রাইনোপ্লাস্টি করে থাকেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ: সার্জারি রাইনোপ্লাস্টির দুটি পদ্ধতি আছে। একটা ওপেন রাইনোপ্লাস্টি, অন্যটি হলো ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি। এগুলো অনেক মানুষই ইউটিউব ঘেটে জেনে থাকে। ওপেন রাইনোপ্লাস্টি হলো যে, নাকের নীচের অংশের একটু কেটে নাকের স্টাকচার থেকে স্কিনটা একটু উপরে উঠিয়ে ওখানের দৃশ্যমান যে ত্রুটিগুলো আছে (হাড়ের বা কার্টিলেইজের) সেগুলো দেখে আমরা সংশোধন করে থাকি। চেহারার প্রমিনেন্ট অংশটা হলো নাক, এখানে দাগ পড়া বা কাটা দাগ থাকা এটা খুবই ইমপর্টেন্ট ইস্যু। এটা আমাদের কাছে যেমন, রোগীর কাছে আরও বেশি ইম্পর্টেন্ট ইস্যু। এজন্য আমরা চাই দাগটা যে কোনভাবে লুকাতে। এই দাগ লুকানোর আরেকটি পদ্ধতি আছে, নাকের ছিদ্রের সামান্য একটু কেটে নাকের ভেতর দিক দিয়ে প্রবেশ করে ত্রুটিগুলো সংশোধন করা। এর সুবিধাটা হলো কোন ধরনের দাগ দৃশ্যমান হয় না। এটাই হলো ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি।

একুশে টেলিভিশন: ওপেন রাইনোপ্লাস্টি এবং ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টিতে কি ধরনের অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হয়?

ডা. ইকবাল আহমেদ: ওপেন রাইনোপ্লাস্টিতে যে জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া লাগে বা পুরা অজ্ঞান লাগে সে রকম নয়। ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে পুরা অজ্ঞান লাগে, তবে পুরো অজ্ঞান ছাড়াও করা যায়। কিন্তু ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টির ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে আমরা লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করতে পারি। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া মানে হলো ইনজেকশন দিয়ে শুধু নাকটা অবশ করি, পুরাটা অজ্ঞান না করে।

একুশে টেলিভিশন: নাকের কি ধরণের সমস্যার জন্য আপনারা ওপেন রাইনোপ্লাস্টি করে থাকেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ: নাকের বড় সমস্যা যেগুলো কোন দুর্ঘটনাজনিত কারণে এবড়োথেবড়ো হয়ে গেছে অথবা জন্মগত ত্রুটি, পূর্বে কোন অপারেশন হয়েছিল যার ফলে মেজর ব্রিজটা আঁকাবাকা হয়ে গেছে এসব সমস্যার ক্ষেত্রে সাধারণত পুরা অজ্ঞান করে থাকি। যেটা ওপেন রাইনোপ্লাস্টি।

একুশে টেলিভিশন : কী কী ক্ষেত্রে আপনারা ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি করে থাকেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ : ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি করে থাকি যখন কেউ নাকের উচ্চতাটা বাড়াতে চায় সে ক্ষেত্রে। তখন আমরা নাকের ছিদ্রের সামান্য একটু কেটে পকেট করি, সেখানে একটি সিলিকন ইনপ্ল্যান্ট ঢুকিয়ে দিয়ে থাকি। এটাই হলো ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি। কেউ যদি নাকের প্রশস্ততা কমাতে চায় সেক্ষেত্রেও আমরা ক্লোজ রাইনোপ্লাস্টি করে থাকি।

একুশে টেলিভিশন: সিলিকন ইনপ্ল্যান্ট যে দেয়া হয়ে থাকে, পরবর্তীতে এর কোন সাইড ইফেক্ট আছে কী?

ডা. ইকবাল আহমেদ: সিলিকন ইনপ্ল্যান্টে কোন সাইড ইফেক্ট নাই সাধারণত, যদি সিলিকন ইনপ্ল্যান্ট প্রোপার ওয়েতে হয়। সিলিকন ইনপ্ল্যান্ট এমন একটা জিনিস যেটাতে বডিতে কোন রি-অ্যাকশন নেই। এটা বডির টিস্যুর সঙ্গে কোন রি-অ্যাকশন করে না। সিলিকনটা বসানোর পর ওখানে একটি ক্যাপসুল বা কাভার তৈরি হয়। যার ফলে তিন মাস পর এটা নাড়াতে যাবে কোন সমস্যা হবে না। অনেকেই মনে করেন, আমি সিলিকন ইনপ্ল্যান্ট লাগালাম তাই সারাক্ষণ সাবধানে চলতে হবে। ব্যাপারটা একদমই এরকম নয়। তিন মাসের মধ্যে এর চারপাশে এমনিতেই একটা কাভারিং তৈরি হবে এবং নাড়াচাড়া করা যাবে, কোন সমস্যা হবে না।

একুশে টেলিভিশন: এই অপারেশনের প্রসিডিয়ারে কত সময় লাগতে পারে? 

ডা. ইকবাল আহমেদ: শুধু যদি আমরা ইনপ্ল্যান্ট বসাই এর জন্য খুব বেশি হলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময় লাগতে পারে। যদি কারও সাইডের অ্যালাগুলো প্রশস্ত থাকে তখন অ্যালারবেইসড রিড্যাকশন সার্জারির দরকার হয়। মানে ওই প্রশস্তটাকে কমিয়ে দেয়া। এই অ্যালারবেইজড রিড্যাকশনে আরও ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এই দুটি অপারচ্যুইনিটি এক সঙ্গে করলে ১ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

একুশে টেলিভিশন: যেহেতু এটি অপারেশন। অপারেশন-পূর্ববর্তী রোগীদের এসেসমেন্টের জন্য আপনারা কি ধরনের পরীক্ষা করিয়ে থাকেন? 

ডা. ইকবাল আহমেদ: লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করার যোগ্য হলে, সেক্ষত্রে সাধারণত কোন ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিকেশন লাগে না। আর যদি তাকে অজ্ঞান করে সার্জারি করা হয়, তখন অজ্ঞানের ফিটনেসের জন্য আমরা কিছু পরীক্ষা করিয়ে থাকি। কিছু রক্তের পরীক্ষা, এ-ক্সরে মোট কথা সে অজ্ঞানের জন্য ফিট আছে কিনা তাই দেখা হয়। কিন্তু লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। আমরা রোগীকে আগে দেখি, তার ত্রুটিটা আইডেনটিফাই করি। ফাইনালটি তার কি ত্রুটি আছে সেটা আইডেনটিফাই করে তার কিছু ছবি তুলে রাখি। সেই ছবি দেখে অ্যাসেস করি, কিভাবে অপারেশন করলে তাকে সর্বোত্তম একটা রেজাল্ট দেওয়া যাবে। এটি আমাদের ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট।

একুশে টেলিভিশন: সিলিকন ইনপ্ল্যান্ট দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু সিলিকন ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা কি সম্ভব?

ডা. ইকবাল আহমেদ: সম্ভব, সিলিকন ছাড়া যেটা করতে পারি বডি থেকে আমরা কার্ডিলেস নিতে পারি। কার্ডলেস মানে নরম হাড্ডি বা তরুণাস্থি। এটা আমরা কান থেকে আবার বুক থেকেও নিতে পারি। কান থেকে নিলে লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। মানে ওই অংশটুকু ইনজেকশন দিয়ে অবশ করে এটা নেয়া সম্ভব। কিন্তু বুক থেকে নিলে তাকে পুরা অজ্ঞান করতে হবে এবং তাকে হসপিটালে এক-দুই দিন থাকতে হবে। এখানে প্রশ্ন থাকতে পারে, আমরা যে কান বা বুক থেকে হাড্ডি নিচ্ছি এর কোন সাইড ইফেক্ট বা কানের কোন বিকৃতি হবে কিনা। এরকম হবে না, কারণ কানের সামনের এবং পেছনের দিকে দুই ধরনের স্কিন থাকে। এই দুই স্কিনের মাঝেই থাকে ক্যার্টিলেইজ বা কানের নরম হাড্ডিটা বা তরুণাস্থি। এটার সামান্য একটা অংশ আমরা নিয়ে আসি এবং বিশেষ স্থান থেকে নিয়ে আসি। যে স্থান দিয়ে আনলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না বা কোন ধরনের বিকৃতি চোখে পড়বে না সে রকমভাবে। যেহেতু আমরা কানের পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আসি, দাগ যেটুকু দেখা যাবে তা পেছনেই এবং তা বেশি একটা বোঝাও যায় না। আর বুক থেকে নিলে যেটা হয়, বুকের অংশটা বেসিক্যাললি কাপড়চোপড় দিয়ে ঢাকাই থাকে। তাই সেটা তেমন দৃশ্যমান হয় না।

একুশে টেলিভিশন: এই যে তরুণাস্থি এক জায়গা থেকে নিয়ে অন্য এক জায়গায় লাগাতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে রোগীদের কত দিন হাসপাতালে থাকতে হয়?

ডা. ইকবাল আহমেদ: তরুণাস্থি দিয়ে যদি লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে করি, সেক্ষেত্রে রোগীকে হসপিটালে থাকতে হবে না। অপারেশনের ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই সে বাড়ি চলে যেতে পারবে। 

একুশে টেলিভিশন: এই অপারেশনের কত দিন পরে রোগীরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে অর্থাৎ কাজকর্ম শুরু করতে পারবেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ: এই প্রশ্নটা রোগীরা বেশি করে থাকে। এটা ডিপেন্ট করবে অপারেশনটা লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করছি, নাকি পুরো অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করছি। এটা ব্যাসিক্যাললি নাকের সমস্যাটা কত দূর তার উপর ডিপেন্ট করবে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে করি, মানে নাকটা শুধু অবশ করে যেটা করি এটার ক্ষেত্রে সে নর্মাল কাজকর্ম পরের দিন থেকেই করতে পারবে। ইভেন সে ওইদিন থেকেও করতে পারে। কারণ এটা শুধু নাকের একটি অংশ, এখানে খুব বড় যে ব্যান্ডেজ দেই তাও নয়। শুধু নাকের একটা ছিদ্র বা দুটা ছিদ্র একদিনের জন্য বন্ধ করে রাখি, সে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিবে। এতে কোন ধরনের সমস্যা হয় না। এই ব্যান্ডেজটা আমরা পরের দিন খুলে দেই। আবার নাকের উপর একটা স্কিন কালারের ট্যাপ লাগানো থাকে, এটা সাধারণত সাত-আট দিন পরে খুলে থাকি। তবে এটা সহ রোগী সবধরনের কাজকর্ম করতে পারবে।  সে ইচ্ছা করলে দু’সপ্তাহ পর যে কোন ধরনের এক্সারসাইজও করতে পারবে, এতে কোন সমস্যা নেই।

একুশে টেলিভিশন: রোগীদেরকে আপনারা কিভাবে ফলোআপ করে থাকেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ: আমরা সাধারণত অপারেশন যেদিন হয় এর তিনদিন পর একবার আসতে বলি রোগীদেরকে। শুধু চেক করার জন্য যে ঠিক আছে কিনা। আর নাকের ভেতরে যদি আমরা কোন ধরনের ছোট ব্যান্ডেজ দেই, সেটা সাধারণত রোগী নিজেই পরের দিন খুলে ফেলতে পারেন। এটার জন্য আর আমরা আসতে বলি না। সেটা ওভাবেই দেওয়া হয় যে, রোগী নিজেই যাতে খুলতে পারে। যদি বাইরে কোন ধরনের সেলাই থাকে সেটা আমরা সাধারণত আট-নয় দিনে খুলে থাকি। আর নাকের উপর টেপ বা স্পিলিন্টও ব্যবহার করে থাকি, এগুলো সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিন কিংবা দশ দিন পর খোলা হয়। এজন্য রোগীকে আট থেকে দশ দিনের দিন একবার আসতে হয়। এর পরে ১৫ দিন পর একবার আসতে পারলে ভাল। কিন্তু অধিকাংশ রোগীর দূর-দূরান্ত থেকে আসে এই ফলোআপগুলো যদি খুব প্রয়োজন পরে তবেই আসতে বলি। এখন তো মাল্টি মিডিয়া ব্যবহার করা যায়, এমন কি ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগীকে দেখে দেয়া যায়। ফলোআপ যদি লাগেই সেক্ষেত্রে ভিডিও কলে সমস্যা সমাধান করে দিতে পারছি।

একুশে টেলিভিশন: এই অপারেশন যাদেরকে করতে হয়, তাদেরকে কি দীর্ঘদিন কোন ওষুধ খেতে হবে এ ধরনের কোন নির্দেশনা আছে?

ডা. ইকবাল আহমেদ: না, এ ধরনের কোন নির্দেশনা নাই। তবে অনেক রোগীই এটা জানতে চায়। তারা ভাবে যেহেতু আমি একটা ইনপ্ল্যান্ট করবো, এর জন্য দীর্ঘদিন কোন ওষুধ মেন্টেইন করতে হবে কি না। ব্যাসিক্যাললি এ ধরনের কোন কিছুই নেই। যে কোন অপারেশনে পাঁচ থেকে সাত দিন একটা অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়। এটার ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম। ব্যথার রোগীরা জিজ্ঞেস করেন, এর জন্য কতদিন ওষুধ খেতে হবে। দুই থেকে তিন পর ব্যথা এমনিতেই থাকে না, তবে আমরা পাঁচ দিনের জন্য ব্যথার ওষুধ দিয়ে থাকি। আর সাত দিনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেই, এর বাইরে সাধারণত আর কোন ওষুধ লাগে না।

একুশে টেলিভিশন: যে অপারেশনটি করা হচ্ছে, এটির কোন দাগ থাকবে কিনা এটা জানা দর্শকদের জন্য খুবই প্রয়োজন এ সম্পর্কে কিছু বলুন?

ডা. ইকবাল আহমেদ : এটা দর্শকদের যেমন আমাদের জন্যও তাই। যারা কসমেন্টিক্স সার্জারি নিয়ে কাজ করি, দাগ আমাদের জন্য অনেক বড় একটা ইস্যু। আমরা সবাই চাই, দাগটা কিভাবে অ্যাবাউট করা যায়। কিন্তু জিরো পার্সেন্ট দাগ নিয়ে পৃথিবীতে কোন সার্জারি নেই। কোন না কোন দাগ থাকবেই। তবে আমরা কসমেটিক্স সার্জারি যারা করি, দাগটা যাতে খুবই মিনিমাম বোঝা যায় সেই চেষ্টা করে থাকি। নাকটা যেহেতু চেহার সামনের অংশে থাকে সেহেতু আমরা দাগটা লুকানোর চেষ্টা করে থাকি। সেক্ষেত্রে আমরা নাকের ভেতর দিয়ে ছিদ্র করার চেষ্টা করি। প্রশস্ত নাক যখন চিকন করা হয় তখন দাগটা নাকের ফোল্ডের মধ্যে ফেলা হয়। তখন দাগটা বেশি একটা বোঝা যায় না। কয়েকটা স্পেশাল জায়গা আছে সেখানে যদি আমরা ইনসিসেশন দেই, তাহলে দাগটা খুবই মিনিমাম বোঝা যাবে।

একুশে টেলিভিশন: সৌন্দর্য তো সকলের জন্যই প্রত্যাশিত, তবে কোনও বয়সের সময়সীমা কী আছে যে কারা এই অপারেশনগুলো করতে পারবেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ : রাইনোপ্লাস্টি যে কোন বয়সেই করা যাবে। তবে সাধারণত আমাদের কাছে যারা আসে এর মধ্যে ১৮ বছর থেকে ৬৫ বছর বয়সেরও মানুষ বেশি। এর চেয়ে বেশি বয়সের মানুষ রাইনোপ্লাস্টির জন্য আমি পাইনি। তবে তারা চাইলে করতে পারবেন। 

একুশে টেলিভিশন: অনেকেই তো ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কিডনি ডিজিজে ভুগেন, তাদের ক্ষেত্রে আপনারা অপারেশন কিভাবে করে থাকেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ: ডায়াবেটিস থাকলেও করতে পারবেন। অপারেশনের সময়ে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকলেই করা যাবে। সার্জারির সময়ে যদি সুগার লেভেল ১২’র মধ্যে থাকে তাহলে সার্জারি করা যায়। আর হাইপারটেশন কিংবা কিডনি ডিজিজ যাদের আছে এই অপারেশনে তাদের কোন সমস্যা নেই।

একুশে টেলিভিশন: কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কী, কারা এই অপারেশনগুলোতে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ হবে?

ডা. ইকবাল আহমেদ: এই রকম নিষেধাজ্ঞা সাধারণত কোন ডিজিজের ক্ষেত্রে নাই। যদি কারোর রক্তের কোন সমস্যা থাকে, যেমন একবার ব্লিডিং শুরু হলে তা আর বন্ধ হয় না। এরকম সমস্যা অনেকেরই জানা থাকে। তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলি, এই সার্জারি না করাই ভাল। তবে বিশেষ প্রিকিউশনে করা যেতে পারে। আরেকটি বিষয় যারা স্মোকার, তাদের ক্ষেত্রে অপারেশন প্রিকিউশন নিয়ে করা ভাল। স্মোকারদের ক্ষেত্রে ব্লিডিংটা একটু বেশি হতে পারে। এ জন্য আমরা স্মোকারদের বলি, কিছুদিন স্মোকিংটা বন্ধ রেখে আমাদের কাছে আসার জন্য। 

একুশে টেলিভিশন: শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নাক খুবই একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সেক্ষেত্রে এই অপারেশনের পরে নিঃশ্বাসে কোন সমস্যা হবে কি না?

ডা. ইকবাল আহমেদ: সৌন্দর্যের আগে ইমপর্টেন্ট হলো আমাদের নিঃশ্বাস। নাকের ফাংশন হলো বডির সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট ফাংশন। সুতরাং এই ফাংশনকে ব্যাহত করে আমরা কোন ধরনের সার্জারি করবো না। নাকে নিঃশ্বাসের জন্য যে পার্থওয়েট আছে আমরা ট্রাই করি ওখানে টাচ না করার জন্য। বরং নাকের হাড্ড যদি বাঁকা থাকে সেক্ষেত্রে তো আপনার নিঃশ্বাসে সমস্যা হয়। সেই হাড্ডিটা যদি সোজা করে দেওয়া হয় তখন নিঃশ্বাস নিতে তার জন্য আরও ভালো হয়। আমরা কোন অবস্থাতেই শ্বাস-প্রশ্বাসকে সমস্যা সৃষ্টি করে কোন ধরনের সার্জারি করবো না। 

একুশে টেলিভিশন: এই ইমপ্ল্যান্টগুলো করার পরবর্তীতে চেঞ্চ করার কোন সময় যদি আসে সেই ইস্যুতে আপনারা কি করেন?

ডা. ইকবাল আহমেদ: নাকের ইমপ্ল্যান্ট পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। এটা হলো সলিট ইমপ্ল্যান্ট, এটি বডিতে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না। এটা হলো লাইফলং। সারা জীবন তার এটা থাকবেই। 

একুশে টেলিভিশন: ইমপ্ল্যান্ট করার পর যদি কেউ এই ডিজায়ার্ডশীপ অন্যভাবে করতে চায়, সেটিও কি সম্ভব?

ডা. ইকবাল আহমেদ: সেটিও সম্ভব। এ ধরনের পেসেন্ট অনেকেই থাকেন। তারা আরেকটু উঁচু কিংবা নিচু চেয়ে থাকেন। সেটাও চেঞ্চ করা সম্ভব।

একুশে টেলিভিশন: সর্বোপরি দর্শকদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?

ডা. ইকবাল আহমেদ: রাইনোপ্লান্টির জন্য আমাদের কাছে প্রচুর পেসেন্ট আসে। তা থেকে বুঝতে পারি যে, নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহী। তবে কেউ আবার চিন্তা করেন যে, নাকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে যেয়ে আরও খারাপ হবে কিনা। বেসিক্যাললি রাইনোপ্লাস্টি করতে গিয়ে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। বাংলাদেশে যেহেতু এই সার্জারির এক্সপার্ট তৈরি হয়েছে, এখন আপনারা এই সার্জারিগুলো বা এই সুযোগগুলো অ্যাভেইল করতেই পারেন। আশা করি, যে সার্ভিসটা আপনারা পাবেন সেটা বিশ্বমানের সার্ভিস হবে। এই সার্জারির বিষয়গুলো রপ্ত করতে গিয়ে আমরা দেশি-বিদেশি বহু জায়গায় ট্রেনিং নিয়েছি। সুতরাং আপনারা আস্থার সঙ্গে আমাদের কাছে আসতে পারেন। 

এএইচ/এমএস/এমবি