রাবি ছাত্রীদের নামে ফেসবুক একাউন্ট খুলে যৌন হয়রানি!
রাবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ১২:০৩ এএম, ২৯ জুলাই ২০২০ বুধবার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রীদের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ফেইক একাউন্ট খুলে প্রতারণা ও হয়রানি করছে একটি চক্র। এমন অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রী। নানা সময়ে ওসব আইডি থেকে অন্যদের কাছে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে করা হচ্ছে যৌন হয়রানিও। এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে ওসব শিক্ষার্থীরা। তবে কে বা কারা এই প্রতারক চক্রের সদস্য তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগ, ফেসবুক আইডির নাম ও প্রোফাইল থেকে ছবি সংগ্রহ করে নতুন ফেসবুক আইডি তৈরি করে প্রতারণা করছে চক্রটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফলো করে তার সমস্ত ইনফরমেশন ব্যবহার করে হুবহু আরেকটি ফেসবুক আইডি তৈরি করে সেই আইডির সকল বন্ধু-বান্ধবী, সিনিয়র-জুনিয়র সবাইকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে প্রথমে নতুন আইডি খোলার নাম করে কথোপকথন শুরু করে। তারপর ক্রমান্বয়ে কুরুচিপূর্ণ বার্তা দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট ও নানা বিপদের কথা বলে বিকাশে চাওয়া হচ্ছে টাকাও। এছাড়াও ফেসবুকে পরিচিত কারো পোস্টে ফেইক আইডি থেকে বিভ্রান্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে থাকে প্রতারক চক্রটি।
ফেসবুকে ফেইক একাউন্ট খুলে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে আইরিন আহমেদ সুপ্তি নামে এক শিক্ষার্থীকে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, "বিষয়টি আমার জন্য খুবই হয়রানিমূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার নামের ফেইক আইডি থেকে জুনিয়রদের বাজে কথা বলছে। বাজে আবদারও করেছে জুনিয়র ছোট ভাইয়ের কাছে। ফেসবুকে ভুয়া আইডি থেকে আমার অনেক বান্ধবীদের আমার বিয়ে, এরপর বিয়ের প্রথম রাত নিয়ে বাজে কথা বলেছে। আমার ফ্রেন্ড লিস্টের প্রায় অনেকের কাছে। আমার ফুপি থেকে শুরু করে বান্ধবী, জুনিয়র ছোট বোন সবার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা সবাই আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে বিষয়টি জানায়। যে বা যারা কাজটা করেছে তা প্রচন্ড ঘৃণিত কাজ।তাদের বিকৃত মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছে তারা। তারা কিভাবে ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েদের সাথে এমন ধরণের কাজ করার দুঃসাহস পেলে এটাই মাথায় আসেনা।"
হয়রানির শিকার রেবেকা সুলতানা রত্না নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, "বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যৌন হয়রানির পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম এর মতো জঘন্য ঘটনা হরহামেশা আমাদের চোখে পড়ছে। আর এই অপরাধ যৌন হয়রানির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। প্রতিদিন অনেক মেয়েই এই হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। এমনকি আমি নিজেও এই হয়রানির ভুক্তভোগী।আমি ছাড়া আমার এক বান্ধবী ও কয়েকজন সিনিয়র আপুকেও এই হয়রানির স্বীকার হতে দেখেছি।
আমার মনে হয়, এই কুরুচিপূর্ণ কাজগুলো যে বা যারা করছে তারা আমাদের আশেপাশের পরিচিত কেউ। এই অসাধু কুরুচিপূর্ণ কাজ অঙ্কুরে বিনাশ না করলে এটা আরো ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করবে বলে আমি মনে করি৷ তাই আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই, প্রতিকার চাই৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের মেয়েদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, ঐকবদ্ধ থাকতে হবে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নিতেও হবে।"
আসমা আইরিন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘করোনা প্ররিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আইনি সহায়তাও নিতে পারছি না। আমি চাই যারা এই নোংরা কাজ করছে তাদের শাস্তি হোক। এতে করে আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে।"
এবিষয়ে রাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান বলেন, "ফেইক ফেসবুক আইডি তৈরি করা হয় অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থিক, সামাজিকসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেকেই। এবিষয়ে ডকুমেন্টসহ আমার কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
কেআই/