ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১

প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে ঋণ প্রদান সহজীকরণ আবশ্যক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৫ এএম, ৩০ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ হতে এসএমই উদ্যোক্তারা এখনও প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পাননি, এজন্য ঋণ প্রদানে বিদ্যমান প্রক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরির করছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত সহজীকরণ করা একান্ত প্রয়োজন। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী আলোচকবৃন্দ এ মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের নিকট ঋণ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন এবং পিকেএসএফ প্রভৃতির মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সহায়তা প্রদানের কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্তিকরনেরও দাবী জানানো হয়। 

ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এ ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাসের, যেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধানরা বিদ্যমান ঋণ পরিস্থিতির উপর মতবিনিময় করেন।

ওয়েবিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে কটেজ, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, এখাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩ মিলিয়ন, যারা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩৫.৪৯ শতাংশের যোগান দিচ্ছে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো ‘কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাবৃন্দ মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং এ অবস্থা উত্তরণে সরকারের পক্ষ হতে ইতিমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তবে উদ্যোক্তারা ব্যাংক হতে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি জানান, ঢাকা চেম্বার ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় করেছে এবং উদ্যোক্তাবৃন্দ বেশিরভাগই, প্রণোদনা প্যাকেজ হতে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টিকে বর্তমান পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ঋণ সহায়তা পাওয়া দ্রুততর করার জন্য ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণের আহ্বান জানান।    

ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার সম্প্রতি ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট বিভাগ’ চালু করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫% এবং এখাতে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৩৫.৫% লোক জড়িত, যারা মোট রপ্তানিতে প্রায় ৭৫-৮০% অবদান রাখছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এখাতের উদ্যোক্তাদের বিক্রি প্রায় ৩৫% কমে গেছে এবং উদ্যোক্তাদের প্রায় ৬২.৪% কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সহ ট্যাক্স, ভ্যাট প্রদানে সক্ষমতা হারিয়েছে। ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি বলেন, ব্যাংক হতে ঋণ সহায়তা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতকরণে উদ্যোক্তারা নানাধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ডিসিসিআই পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৫৯% ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিলতর। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি ঋণ প্রদানের পদ্ধতি সহজতর করা এবং প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ প্রদানের গতি আরো বেগবান করার আহ্বান জানান।  

প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ব্যবসায়িক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার জন্যই মূলত প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকসমূহ ২ লক্ষ ১৯ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ঋণ প্রদান ত্বরান্তিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক এবং গ্রাহকদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাহী পরিচালক বলেন, উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানে দেশের বাণিজ্য সংগঠনসমূহ বেশ এগিয়ে এসেছে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকসমূহকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ নেওয়া এবং তাদের ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান, পাশাপাশি উদ্যোক্তাবৃন্দকে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনার উপর আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর জোরারোপ করেন।

আরকে//