করোনা ও বন্যায় নেই ঈদ আনন্দ
সম্পা আক্তার
প্রকাশিত : ০১:১৫ পিএম, ১ আগস্ট ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০১:৪৬ পিএম, ১ আগস্ট ২০২০ শনিবার
করোনা সনাক্তের হার কমতে না কমতেই বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন। তাই এবারের ঈদ উপলক্ষে আলাদা কোনো চিন্তা নেই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। আসন্ন ঈদুল আজহা নিয়ে বন্যায় সংকটপূর্ন বনভাসি সাধারণ মানুষের এবারের ঈদ যেন গত বছরগুলোর অনান্য ঈদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
গত পাঁচ মাস ধরে করোনা ভাইরাসে কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান আগের তুলনায় অনেকটা থমকে গেছে। অন্যদিকে এই বছর করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বন্যা যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে বন্যার এই প্রাদুর্ভাব যেমন জন জীবনকে বিপর্যস্থ করেছে তেমনি অর্থনৈতিকভাবে হতাশাগ্রস্থ করেছে সাধারণ মানুষকে।
বাংলাদেশে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখন বন্যায় কবোলিত হওয়ায় অন্যান্য ঈদ থেকে এইবারের ঈদ যেন সম্পূর্ন আলাদা। যেখানে সাধারণ মানুষে মৌলিক চাহিদা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা নিয়ে হুমকির মুখে সেখানে ঈদ নিয়ে চিন্তা দুঃস্বপ্ন মাত্র। একে তো মহামারির কারণে হাট বসছে না অনেক জায়গায়। তার উপর বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত করছে গবাদি পশু পালকদের। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে গবাদি পশু থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা হাতে পান হতদরিদ্র সাধারণ মানুষ। যার উপর নির্ভর করে বাস্তবায়ন হয় অনেকের সারা বছরের পরিকল্পনা।
গ্রাম বাংলার ঈদুল আজহার সেই মূল আকর্ষণ কোরবানির পশু কেনা বেচা বন্ধ থাকায় তাদের ঈদ আনন্দ যেমন পন্ড হচ্ছে ঠিক তেমনি সাম্প্রতিক বন্যা অভাব ডেকে এনেছে। অনেকে কোরবানির জন্য বছর ভরে পশু পালন করে বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মমহামারী করোনা ভাইরাসের এই প্রকোপের মধ্যে অনেকেরই ঘর, বাড়ি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। আশ্রয়হীন মানুষ চাইলেই বজায় রাখতে পারছে না সামাজিক দূরত্ব। ফলে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। এক দিকে মাহামারীতে আয় কমে গেছে অন্যদিকে থাকার আশ্রয় হারিয়ে চরম অসহায় পকরিস্থিতিতে রয়েছেন কৃষক এবং দিনমুজুরসহ সাধারণ মানুষ।
সিরাজগঞ্জ জেলার, ছোনগাছা উপজেলার পাঁচ ঠাকুরা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মাদ ফরজ আলী ভূইয়া জানিয়েছেন, গত ২৪ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে বন্যার কারণে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অল্প সময়ে প্রায় দুইশত বাড়ি এবং অনেক গাছপালা, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। এর ফলে গ্রামবাসিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি এখন তার পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
এছাড়া একই গ্রামের মুরগি ব্যবসায়ী আমিনুল তালুকদার জানিয়েছেন, গত ২৪ জুলাই বন্যায় বাধ ভাঙার কারণে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাদের পরিবার এখন নিঃস্ব। ১২ টি আধপাকা বাড়ি ছাড়াও ছয় হাজার লেয়ার মুরগি এবং দুইশত ডিম পাড়া সোনালী মুরগি ভেসে গেছে বাধ ভাঙা বন্যার পানিতে। এমতাবস্থায় তাদের খাওয়া থাকার চিন্তা জীবনকে করেছে অতিষ্ঠ। সিরাজগঞ্জ জেলার পাঁচ ঠাকুরা গ্রামের কৃষক মজনু ভুইয়া জানিয়েছেন, বন্যার পানিতে ফসলের জমিসহ গবাদি পশু এবং ঘর বাড়ি সব হারিয়ে তার মত অনেক কৃষক অসহায় হয়ে পড়েছেন।
তাই খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য সরকারি অনুদানই এখানকার মানুষের এক মাত্র ভরসা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা সরকার থেকে কোনও সাহায্য পাননি। মাহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে বন্যার এই প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সরকার থেকে সাহায্য আশা করছে। তাই ঘরবাড়ি ছাড়া, অর্থহীন এই মানুষগুলোর আশ্রয় টুকু নেওয়া যেখানে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে সেখানে ঈদ নিয়ে চিন্তা করার কোনও সুযোগ নাই। নাই ঈদের আনন্দ। এই সংকটাপন্ন মানুষের এবারের ঈদ উল আজহা খুবই মর্মান্তিক।
লেখক: সম্পা আক্তার, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)
এমএস/