হার্ট অ্যাটাক কী, জেনেনিন এটি রোধে করণীয় সম্পর্কে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৬ এএম, ৪ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩৮ এএম, ৪ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার
হার্ট অ্যাটাক এক নীরব ঘাতক। যে কেউ যেকোনো সময় এর শিকার হতে পারেন। শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাপনে অনিয়ম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। এর লক্ষণগুলো জানা থাকলে একটি জীবন হয়তো বাঁচিয়ে দেওয়া সম্ভব। বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি হার্ট অ্যাটাক। বলা হয় বিশ্বে এক তৃতীয়াংশ মৃত্যুর জন্যে দায়ী হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ।
হার্ট অ্যাটাক কী?
হার্টের উপরিভাগে লেপ্টে থাকে করোনারি আর্টারি বা ধমনী, যার মাধ্যমে হার্ট পুষ্টি এবং অক্সিজেন পায়। যখন করোনারি ধমনীতে চর্বি জমে এবং রক্ত জমাট বেঁধে (শতকরা ১০০ ভাগ) রক্তনালীর রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন উক্ত রক্তনালীর মাধ্যমে হার্টের যে অংশটুকু পুষ্টি এবং অক্সিজেন পেত সেই মাংসপেশিটুকুতে নানা রকম পরিবর্তন সাধিত হয়, যাকে আমরা হার্টঅ্যাটাক বলি। মেডিকেল পরিভাষায় বলা হয় ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’।
যদিও হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করেই হয় কিন্তু এটি দীর্ঘদিন ধরে করোনারি ধমনীতে অ্যাথেরোসক্লেরোটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি চলমান রোগ প্রক্রিয়ারই বহিঃপ্রকাশ। তাই মারাত্মক এই রোগটিকে কখনো কখনো নিঃশব্দ আততায়ী বলা হয়। তবে সময়মত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসায় রোগী ফিরে পেতে পারে নতুন জীবন।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিসমূহ
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিসমূহের মধ্যে কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। আবার কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেমন- পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস।
ঝুঁকি সমূহ
▪︎ করোনারি ধমনীতে চর্বির আধিক্য
▪︎ ডায়াবেটিস মেলাইটাস
▪︎ উচ্চ রক্তচাপ
▪︎ ধূমপান
▪︎ শারীরিক ওজন বৃদ্ধি
▪︎ পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস
▪︎ কায়িক পরিশ্রমহীনতা
▪︎ স্ট্রেস
▪︎ মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি ইত্যাদি।
ধূমপান এবং হার্টঅ্যাটাক
ধূমপানে করোনারি ধমনীতে মাইক্রোইনজুরি হয়, যার ফলে রক্ত জমাট পদ্ধতি ত্বরাম্বিত হয়। এছাড়া ধূমপানে রক্তে কোলেস্টেরল অর্থাৎ যে কোলেস্টেরল হার্টের জন্য ভালো-‘এইচডিএল’ কমে যায়। ‘এইচডিএল’ কমে গেলে খারাপ কোলেস্টেরল ‘এলডিএল’ বেড়ে যায়। অর্থাৎ ধীরে ধীরে হার্টঅ্যাটাকের দিকে ধাবিত হয়।
হার্টঅ্যাটাকের উপসর্গ
▪︎ বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া। কখনো কখনো ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা হাতেও ব্যথা হতে পারে।
▪︎ বুকে ব্যথা এমনভাবে রোগীরা বর্ণনা করেন যেন কোনো ব্যান্ড বুকের ওপর চাপ দিয়ে আছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীরা কখনো কখনো হার্টঅ্যাটাকে এ ধরনের ব্যথার কথা নাও বলতে পারেন।
▪︎ বুকের ব্যথার সঙ্গে প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপসর্গ, যার দ্বারা বোঝা যায় হার্টঅ্যাটাকের প্রক্রিয়া চলছে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়
হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং হৃদরোগের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব শুধু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে। যে কোনো ধরনের স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন। কর্ম জীবনের সব ব্যস্ততার মধ্যেও মানসিক প্রশান্তির কিছু উপায় বের করে নিতে হবে। পরিমিত কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন এবং কম চর্বিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
ধূমপান ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং নিয়মিত মনিটরিং করুন। রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সজীবভাবে হাঁটার অভ্যাস করুন। কমপক্ষে ৪৫ মিনিট প্রত্যহ হাঁটাহাঁটি করুন। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে দিন। এ জন্য বেশি করে শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল গ্রহণ করুন। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় ওষুধ
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় জরুরিভাবে কিছু ওষুধ দেয়া হয়। রোগী প্রাথমিকভাবে বিপদমুক্ত হওয়ার পর আরো কিছু ওষুধ দেয়া হয়।
হার্ট অ্যাটাকের পর যে ওষুধ দেয়া হয় তা দু’ভাবে কাজ করে
১. হার্ট অ্যাটাকে যে ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে নিতে ওষুধ সাহায্য করে।
২. হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী জটিলতা প্রতিরোধে ওষুধ সাহায্য করে।
হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী জটিলতা এবং রোগের উপসর্গ কমাতে নিম্নলিখিত ওষুধ ব্যবহার করা হয়
▪︎ নাইট্রেট : বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা কমাতে সাহায্য করে। এ ওষুধটি করোনারি ধমনীকে প্রসারিত করে এবং রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
▪︎ বিটা ব্লকার : এ ওষুধটি হার্টের গতি স্পন্দনকে পরিমিত রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। হার্টের নিজস্ব কাজের বোঝাকে সহজ করে দেয়। তাই যেমন অ্যানজাইনা কমাতে সাহায্য করে তেমনি হার্টঅ্যাটাক-পরবর্তী জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।
▪︎ অ্যাসপিরিন এবং ক্লোপিডোগ্লেরল : এ দু’টি ওষুধ এন্টিপ্লাটিলেট হিসেবে কাজ করে এবং রক্তকে পাতলা রাখে। রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয় বলে এ ওষুধ হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
▪︎ স্টাটিন : রক্তের কোলেল্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া আরো কিছু কাজ করে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
ভবিষ্যতে হার্টঅ্যাটাক প্রতিরোধে লিপিড প্রোফাইল নিম্নরূপ থাকা বাঞ্ছণীয় :
কোলেল্টেরল < ২০০ মিগ্রা/ডিএল
এলডিএল কোলেল্টেরল < ৭০ ডিএল
এইচডিএল < ৪০ ডিএল
ট্রাইগ্লিসেরাইড < ১৫০ ডিএল
উপরোক্ত কোলেল্টেরল মাত্রা অর্জন স্টাটিন ছাড়াও প্রয়োজন ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজনে ওষুধের সঠিক ব্যবহারে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এসএ/