এখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি মিলন সেনগুপ্ত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ৪ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৪:৪৯ পিএম, ৪ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার
পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে মিলন সেনগুপ্ত
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা গ্রামের বিখ্যাত জমিদার ও সেন পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী মুক্তিযোদ্ধা মিলন সেনগুপ্ত (৭৬)। আর্থিক সংকটে অসহায়ের মতো দিনযাপন করছেন তিনি। সুযোগ সুবিধাতো দূরের কথা মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও এখনো মিলেনি স্বীকৃতি।
মৃত্যুঞ্জয়ী যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ছেলে দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত। তাঁরই ছেলে বীরেন্দ্র মোহন সেন গুপ্তের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মিলন সেনগুপ্ত।
তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যর্থনা কমিটির প্রেসিডেন্ট, পরবর্তীতে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মৃত্যুঞ্জয়ী যাত্রামোহন সেনগুপ্ত।
তারই ছেলে দেশপ্রিয় ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ভারতবর্ষের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি পর পর ৫ বার কলকাতা কর্পোরেশনের মহা-নাগরিক ছিলেন। তিনি ব্যারিস্টার নেলী সেনগুপ্তকে বিবাহ করেন এবং তিনিও কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এ জমিদার পরিবারের নিজস্ব সম্পত্তির উপর চট্টগ্রাম মহানগরে বর্তমান জে এম সেন হল, জে এম সেন স্কুল এন্ড কলেজ, ডাক্তার খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়, অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয়, কৃষ্ণকুমারী বালিকা বিদ্যালয়, ত্রাহিমেনকা সংগীত মহাবিদ্যালয়, বর্তমান শিশুবাগ স্কুল (যা জে এম সেনের বসতঘর), চট্টগ্রাম সংস্কৃতিক কলেজ, চন্দনাইশস্থ বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরমা ডিগ্রি কলেজ, বরমা উন্নতমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরমা দাতব্য চিকিৎসালয়, ভারতের কলিকাতা ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কলেজ, দুর্গাপুর ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং চট্টগ্রাম ও চন্দনাইশে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির অধিকারী এ পরিবারের একমাত্র ওয়ারিশ যাত্রামোহন সেন গুপ্তের দৌহিত্র মুক্তিযোদ্ধা মিলন সেনগুপ্ত।
মিলন সেনগুপ্ত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক নম্বর সেক্টর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করেন। এ মর্মে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদপত্রও রয়েছে। কিন্তু তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বা কোনো রকম স্বীকৃতি পর্যন্ত পাননি বলে অভিযোগ করেন।
তাঁদের এ বিশাল সম্পদ বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বেহাত হয়ে যায়। বর্তমানে মিলন সেনগুপ্ত তাঁদের একটি পুকুর পাড়ের কুঁড়ে ঘরে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
মিলন সেনগুপ্তের ছেলে লিটন সেনগুপ্ত বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও অর্থাভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি। এখন তিনি চোখেও দেখেন না। বাবার চোখে ছানি পড়েছে। খবর পেয়ে গত বুধবার সকালে রোটারি ক্লাব চট্টগ্রাম মেরিন সিটির নেতৃবৃন্দ বাবাকে (মিলন সেনগুপ্ত) চট্টগ্রাম নিয়ে গেছেন চিকিৎসা করাবেন বলে।’
মিলন সেনগুপ্তকে নিয়ে অনেকেই লেখালেখি করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি বাপ্পা উদ্দীপন নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে মিলন সেনগুপ্তকে নিয়ে একটি আবেগময় স্ট্যাটাস দিয়েছে যা অনেকের নজরে আসে। নিম্নে তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির নাম মিলন সেনগুপ্ত। পরার মতো একটিমাত্র জামা আছে তাঁর। আজকে ধুয়ে দিয়েছেন তাই খালি গায়ে রয়েছেন তিনি। শুকানোর আগ পর্যন্ত এভাবেই থাকতে হবে তাঁকে।
মিলন সেনগুপ্ত সাধারণ কোনো পরিবারের মানুষ নন। চট্টগ্রামের কীর্তিমান পুরুষ, উপমহাদেশের বিখ্যাত বাঙালি আইনজীবী, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এর একমাত্র বংশধর। টলমটল চোখে তাকিয়ে থাকা মিলন সেনগুপ্ত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন কিন্তু স্বীকৃতি পাননি। শেষ দিনগুলো তাঁর কেমন যাচ্ছে সহজে অনুমেয়।
চলমান করোনা সংকটে চন্দনাইশ থানার ওসি তাঁর বাড়িতে গিয়ে এই অবস্থার কথা জানান।
তাঁর পূর্বপুরুষ যাত্রামোহন সেন (জেএম সেন) যিনি প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম শহরে টাউন হল (জেএম সেন হল) ডাঃ খাস্তগীর মাধ্যমিক বালিকা স্কুলসহ অনেক শিক্ষা-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, মন্দির এমনকি নূর মহম্মদ তরফ নামে মসজিদের ভূমিও দান করেছিলেন। জেএম সেনের পুত্র দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ছিলেন আরেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। যিনি প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা ও ব্যারিস্টার। যিনি উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বিপ্লবীদের সাথে লড়াই করেছেন। জেল খেটে খেটে মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী ভিনদেশী নেলি গ্রে (নেলি সেনগুপ্ত) ছিলেন আরেক বিখ্যাত মানুষ। রাজনীতিক ও সমাজকর্মী। তিনিও হেঁটেছিলেন স্বামীর পথেই। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী হয়েছিলেন।
অসাম্প্রদায়িক মানবিক বরমার সেন পরিবারের মানুষ উপমহাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং শিক্ষা বিস্তারে যে অবদান রেখে গেছেন তা ঐতিহাসিক।
এমবি//