ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আজ চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয় শহীদ দিবস

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৪৩ পিএম, ৫ আগস্ট ২০২০ বুধবার

আজ চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয় শহীদ দিবস। প্রতিবছর ৫ আগস্ট চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয়ভাবে শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিনটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অত্যন্ত মর্মান্তিক ও স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এই দিনে জেলার আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে শহীদ হন। যে আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন, তারা হলেন- হাসান জামান, সাইফুদ্দিন তারেক, রওশন আলম, আলাউল ইসলাম খোকন, আবুল কাশেম, রবিউল ইসলাম, কিয়ামুদ্দিন ও আফাজ উদ্দীন।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

১৯৭১ সালের দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৩ আগস্ট গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়পুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পার্শ্ববর্তী বাগোয়ান গ্রামের মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খানকে ধরে নিয়ে আসেন।

৫ আগস্ট সকালে পাকিস্তানী দালাল কুবাদ খানের দু’জন লোক চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে খবর দেয়, রাজাকাররা তাদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ কথা বিশ্বাস করে মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্র নিয়ে বাগোয়ান গ্রামের মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিমে দুই দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকেন।

নাটুদহ ক্যাম্পের পাকসেনারা পুর্ব পরিনকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখ ক্ষেতে অ্যাম্বুস অবস্থায় লুকিয়ে থাকে, মুক্তিযোদ্ধার কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের অ্যাম্বুশের মধ্যে পড়ে যান। এখানে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রুকে আক্রমণ করতে থাকেন। এ অবস্থায় যেকোন একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়।

মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান সেই ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। এ সময় অন্য সাথীদের বাঁচাতে সক্ষম হলেও সম্মুখ সমরে শহীদ হন আটজন বীর। এই সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়। পরে জগন্নাথপুর গ্রামের মুক্তিকামী মানুষ রাস্তার পাশে দুটি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ দাফন করেন। কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে ‘আটকবর’। গড়ে উঠেছে বিশাল একটি জনপদ।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও কমান্ডার বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সালে সরকারি সহায়তায় ওই গণকবরের উপর স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘আটকবর’।

চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবছর ৫ আগস্ট স্থানীয় শহীদ দিবস হিসাবে পালন হয়ে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

এএইচ/