আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে এগিয়ে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৭ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার
হোয়াইট হাউস- সংগৃহীত
আমেরিকার ভোটাররা ৩ নভেম্বর নির্ধারণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারা আরও চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজে দেখতে চান কিনা। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন। যিনি বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেক বেশি পরিচিত। যদিও তিনি গত শতাব্দীর ৭০’র দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। নির্বাচনের সময় যতোই ঘনিয়ে আসছে জনমত যাচাইকারী কোম্পানিগুলো সারাদেশে লোকজনের পছন্দ অপছন্দ জানতে ততোই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ভোটারদের তারা প্রশ্ন করছে তারা কোন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে আগ্রহী। খবর বিবিসি’র।
প্রার্থীরা জাতীয়ভাবে কে কেমন করছেন?
সারাদেশে জনপ্রিয়তার দৌড়ে কোন প্রার্থী কতোটা এগিয়ে আছেন সে বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জরিপ বা সমীক্ষা থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে এসব জরিপ থেকে নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ঐ নির্বাচনের আগে জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে তিনি ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হেরে যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে এ রকম হয়েছে। ফলে বেশি ভোট পেলেই নির্বাচনে জয়ী হবেন সেটা সব সময় নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ বছর জাতীয় পর্যায়ে যত জরিপ হয়েছে তার বেশিরভাগ ফলাফলেই জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন। গত কয়েক সপ্তাহে যেসব জরিপ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে মি. বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৫০% এর কাছাকছি। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে আছেন ১০ পয়েন্টে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত কয়েকদিনে এই দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ৪ আগস্টের জরিপে দেখা যচ্ছে জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন যেখানে ৪৯%, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পেছনে সমর্থন ৪৫%। গত নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কার অবস্থান কোথায় এই চিত্রটা ততোটা পরিষ্কার ছিলো না। এবার দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি। কোথাও কোথাও ৫% থেকে ১০%। অথচ ২০১৬ সালের জনমত জরিপগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে ব্যবধান ছিল সামান্য কিছু পয়েন্ট।
জো বাইডেন
ফলাফল নির্ভর করবে কোন কোন রাজ্যের ওপর?
গত নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের পরাজয় থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোন প্রার্থী কত বেশি ভোট পেয়েছেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোন রাজ্যে কোন প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছেন। সাধারণত বেশির ভাগ রাজ্যেই সব সময় একই রকমের ভোট পড়ে। কিছু কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুই জন প্রার্থীর যে কেউ বিজয়ী হতে পারেন। এ সব রাজ্যেই নির্ধারিত হবে কে নির্বাচনে জয়ী আর কে পরাজিত হবেন। জয় পরাজয়ের যুদ্ধটা হয় সেখানেই আর তাই এসব রাজ্যকে বলা হয় ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস।
ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি রাজ্যের হাতে থাকে কিছু ভোট। কোন রাজ্যের কতো ভোট সেটা নির্ভর করে ঐ রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। সবচেয়ে বেশি ভোট টেক্সাস রাজ্যের-৩৮। ইলেকটোরাল কলেজে মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে তাকে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। তাই প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সে সব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করে থাকেন।
এসব রাজ্যে কে এগিয়ে?
বর্তমান জরিপের ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে। কিন্তু নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি। যে কোন সময় এই ফলাফল দ্রুত বদলে যেতে পারে। জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাইডেন মিশিগান, পেনসালভেনিয়া এবং উইসকন্সিন রাজ্যে এগিয়ে আছেন। এই তিনটি শিল্প এলাকা। এসব রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ১% এরও কম ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। এখনকার জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব রাজ্যে এগিয়ে আছেন সেগুলো হচ্ছে- জর্জিয়া, আইওয়া এবং টেক্সাস। কিন্তু এখানে ব্যবধান খুব সামান্য। গত নির্বাচনেও এসব রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল আরও অনেক বেশি।
জো বাইডেন এগিয়ে আছেন যেসব রাজ্যে: অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসালভেনিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকন্সিন। জো বাইডেনের জন্যে ভালো খবর হচ্ছে এসব রাজ্যে তিনি বড় রকমের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু তাই নয় ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব রাজ্যের অধিকাংশগুলোতেই ব্যপক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এসব রাজ্যে এখন এগিয়ে গেছেন জো বাইডেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এখন এটাই দুশ্চিন্তার কারণ:
২০১৬ সালের নির্বাচনে আইওয়া, ওহাইও এবং টেক্সাসে তিনি ৮% থেকে ১০% ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন জো বাইডেনের সাথে তার অবস্থান প্রায় সমান সমান। এসব পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন গত জুলাই মাসে তার নির্বাচনী প্রচারণার দলের ম্যানেজার বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়াও ট্রাম্প এসব জনমত জরিপকে প্রায়শই ‘ভুয়া’ বলে উল্লেখ করে থাকেন। বেটিং কোম্পানিগুলো অবশ্য এখনই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাতিল করে দিচ্ছেন না। কেউ কেউ বলছে, তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা এখনও এক তৃতীয়াংশ।
করোনা ভাইরাসের কারণে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমেছে?
এ বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম দখল করে আছে করোনা ভাইরাস। মহামারির পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে তার পক্ষে বিপক্ষে কথা হচ্ছে। ট্রাম্প যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন তার পক্ষে সমর্থন তুঙ্গে ওঠে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে। তখন তিনি সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন এবং ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাজ্যগুলোর জন্য ঘোষণা করেছিলেন ৫ হাজার কোটি ডলার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প
শীর্ষস্থানীয় একটি জরিপ কোম্পানি ইপসসের হিসেব অনুসারে সেসময় ৫৫% আমেরিকান তার গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাট দলের যারা তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন পরে তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করেন। কিন্তু রিপাবলিকানরা তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখেন। তবে অধিকাংশ মানুষই বর্তমানে তার গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করছে। সর্ব সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরাও এখন তার নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তারা সমালোচনায় সরব হয়েছে।
জুলাই মাসের শুরুতে তার প্রতি রিপাবলিকানদের সমর্থন কমে ৭৮%-এ নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এ কারণে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তার বক্তব্য পরিবর্তন করছেন। শুরুতে তিনি বলেছিলেন এই ভাইরাস এক সময় ‘আপনা আপনি চলে যাবে’ কিন্তু এখন তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ‘পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে মহামারি আরো খারাপ রূপ’ নিতে পারে। শুধু তাই নয় এর আগে তিনি মাস্ক পরার সমালোচনা করতেন কিন্তু এখন তিনি নিজেই মাস্ক পরছেন। এবং আমেরিকানদের প্রতি মাস্ক পরার আহবান জানিয়ে ‘দেশ প্রেমের’ পরিচয় দেওয়ার কথা বলছেন।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মডেল অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে অর্থাৎ ১ নভেম্বরের মধ্যে করোনা ভাইরাসে ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
এসব জরিপ কি আমরা বিশ্বাস করতে পারি?
আগের নির্বাচনের জনমত জরিপ ভুল প্রমাণ হয়েছিল- এটা বলে আমরা খুব সহজেই এসব সমীক্ষা বাতিল করে দিতে পারি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও প্রায়শ এ কাজটা করে থাকেন। কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্য নয়। বেশিরভাগ জাতীয় জরিপে হিলারি ক্লিনটনকে সামান্য পয়েন্টে এগিয়ে রাখা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তারা ভুল করেছে। এটাতো ঠিক যে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
আগের নির্বাচনের জনমত জরিপগুলোতে কিছু সমস্যা ছিলো। সে সব জরিপ ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এবার তাদের সেই ত্রুটি কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু তারপরেও এবারের পরিস্থিতি আরো কঠিন, আরও অনিশ্চিত। এর কারণ করোনা ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং নভেম্বরে মানুষের ভোটের ওপর এই মহামারি কী ধরনের প্রভাব ফেলবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। কেননা নির্বাচনের এখনও কয়েক মাস বাকি।
এমএস/