ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, ভেসে গেছে ৩২ কোটি টাকার মাছ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:১২ পিএম, ৮ আগস্ট ২০২০ শনিবার | আপডেট: ০৪:৩৫ পিএম, ৮ আগস্ট ২০২০ শনিবার

সুনামগঞ্জে আউশ ধানের ক্ষেত দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ধান উৎপাদনে একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জমিগুলো থেকে বন্যার পানি সরে গেলেও এখন উৎপাদনের উপযোগিতা হারিয়েছে। 

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। যেখানে অন্যান্য ফসলের মতো আউশ ধানের ক্ষেত ও আমন ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। 

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রসুলপুর, গৌবিন্দনগর, মজুমদারি, লালারগাঁও, আদুখালী, পুকুরপাড়, মাঝাইর, পলাশগাঁও, ছয়হারা, রণবিদ্যা, রংপুর, তেলিকোনা, কুটিপাড়া, তালেরতলসহ ১৫ গ্রামের আমন চাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় আউশ ও আমনের ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

কৃষকরা বলেন, ‘জমিতে আউশ ধান লাগানো হয়েছিল। কিন্তু পুরোটা বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এখন আবার নতুন করে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করছি। আউশ ধানের ক্ষেত বন্যায় নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বন্যার আগে আমন ধানের বীজও ফেলা হয়েছিল। কিন্তু চারাগুলো বড় হওয়ার আগেই পানিতে তলিয়ে যায়।’
 
অন্যদিকে, ১১ উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৩ হাজার ৮১টি পুকুর ও দীঘি ও খামারের মাছ। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। হাওরাঞ্চলে মৌসুমের ৬ মাস ধান আর বাকি ৬ মাস মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ অঞ্চলের লোকজন। হাওর এলাকার এসব লোকজন অনেকে ধারদেনা করে পুকুরে মাছের চাষ করেছিলেন কিন্তু বন্যার পানিতে সব তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা এসব মৎস্য চাষিরা। 

জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলা সদর উপজেলার খামারিরা। এছাড়া সদর উপজেলা ১ হাজার ২১৮টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। করোনার এমন মহামারিতে দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার আগেই বানের জলে এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হাওরের মৎস খামারিরা 

এদিকে বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক। প্রথম দুই দফার বন্যায় জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক-দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর এবং পৌরশহরের পাশের নবীনগর-ধারারগাঁও সড়ক পথে টানা দেড় মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 

এ পাঁচ উপজেলার মানুষ সড়ক যোগাযোগ করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এগারো উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং সড়ক ও জনপথের সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ও জেলার ১১টি উপজেলার ৮৪ টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার ২০টি ওয়ার্ডে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০৪টি পরিবার।

শুধু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ৯০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে জেলার মোট ২২টি স্থানে স্রোতের তোড়ে সড়ক ভেঙ্গে গিয়ে সড়কপথের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৪০টি ব্রিজ ও কালভার্টের সংযোগস্থলের ক্ষতি হয়েছে এবং হাওরপাড়ে ঢেউয়ে অন্তত ৩০টির বেশি ভিলেজ প্রটেকশন লাইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে, কোনোটি আবার পুরো ভেঙ্গে গেছে। 

সুনামগঞ্জ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলায় মোট ৯০০ কিলোমিটারের মতো গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি সম্পূর্ণ নেমে গেলে এখন পর্যন্ত সড়কগুলোতে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে সড়ক মেরামত বাবদ ৪০০ কোটি টাকা লাগবে।

সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জেলায় পরপর তিন দফা বন্যায় অবর্ণনীয় ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘এলজিইডির মোট চার হাজার ৬৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়ক আছে। তৃতীয় দফা বন্যায় জেলার প্রায় ৯০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এখনও বেশির ভাগ সড়কে বন্যার পানি থাকায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। মানুষ খুব ভোগান্তিতে আছেন।’

সুনামগঞ্জের ছাতক, জগন্নাথপুর ও দিরাই পৌরশহর এলাকায়ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি সড়কের ওপর থাকায় সড়কের বিটুমিন উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বালু ও পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। 

একইভাবে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথের গত দুই দফা বন্যায়ই শুধু ২৫ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। সেখানেও প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এআই/এমবি