ওয়েবিনারে বক্তারা-
ব্যবসায়ে আস্থা ফেরাতে মাঝারি উদ্যোগকে আলাদা করে ভাবা দরকার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৮ এএম, ৯ আগস্ট ২০২০ রবিবার
কভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপরে সানেম ও দা এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের ফলাফল আজ অনুষ্ঠিত একটি ওয়েবিনারে উপস্থাপন করা হয়। জরিপে প্রায় তিনশটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। “কভিড নাইনটিন এন্ড বিজনেস কনফিডেন্স: ফাইন্ডিংস ফ্রম ফার্ম লেভেল সার্ভে” শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডক্টর মশিউর রহমান।
ওয়েবিনারে দা এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল সিরাজ। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, এ.কে. খান টেলিকম লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এর সভাপতি নিহাদ কবির, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মনজুর এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ অফ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। প্রায় ৯০ জন গবেষক, অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও উন্নয়ন কর্মী এই ওয়েবিনারে সংযুক্ত হন।
স্বাগত বক্তব্যে এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল সিরাজ বলেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে এশিয়া ফাউন্ডেশন সবসময় জড়িত থাকবে। তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণ নির্ভর গবেষণায় এশিয়া ফাউন্ডেশন সবসময়ই আগ্রহী।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপনে ড. সেলিম রায়হান প্রথমেই জরিপটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি জরিপ পদ্ধতিটিও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। ৮ বিভাগের ২২টি জেলার মোট ৩০৩টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারী ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩টি উৎপাদন খাতের এবং ১৫০টি সেবা খাতের। জুলাই এর ১৫ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদাধিকারীদের সাথে ফোনে আলাপের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এই জরিপের আরো তিনটি পর্ব আগামী তিন মাস পর পর পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান। জরিপে দেখা গেছে, বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো, মাঝারী ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তাদের প্রতিষ্ঠানের মুনাফা করার ক্ষমতা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, আয়, ব্যবসার খরচ এবং বিক্রি/রপ্তানী নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের উত্তর ০-১০০র একটি মানদণ্ডে পরিমাপ করা হয়েছে যেখানে ০ মানে খুব খারাপ, ২৫ মানে খারাপ, ৫০ মানে কোনো পরিবর্তন নেই, ৭৫ মানে ভালো এবং ১০০ মানে খুব ভালো। এই মানদণ্ডটি ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আস্থা ও প্রত্যাশা প্রতিফলন করে।
জরিপের উত্তরের ওপর ভিত্তি করে সানেম তিনটি সূচক তৈরি করেছে—প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (বার্ষিক), প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) এবং বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (পরর্তী তিন মাস)। এর মধ্যে পিবিএসআই (বার্ষিক) এর মাধ্যমে গত বছরের এপ্রিল-জুনের সাথে এ বছরের এপ্রিল-জুন পর্যায়ে ব্যবসার অবস্থার তুলনা করে। পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) এ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের সাথে এ বছরের এপ্রিল-জুনে ব্যবসার অবস্থার তুলনা করে। আর বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স বা বিসিআই এ বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে ব্যবসায় আস্থা তুলনা করে। প্রতিটি সূচকই ০-১০০র মধ্যে মূল্যায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে, ৫০ মানে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, ৫০ এর নীচে মানে অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
জরিপে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন ২০২০ এ সার্বিক ব্যবসা পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিলো। সব খাতই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তৈরি পোশাক, চামড়া, লাইট ইনজিনিয়ারিং, পাইকারি ব্যবসা ও রেস্টুরেন্টের। ঔষধ ও আর্থিক খাতের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিলো।
এপ্রিল-জুনের তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতি বিসিআই সূচকের সবকয়টি উপাদানে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু সার্বিক বিসিআই পরিমাপ খারাপ (৫১.০৬)।
তৈরি পোশাক, চামড়া, লাইট ইনজিনিয়ারিং এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিসিআই ৫০ এর নীচে।
টেক্সটাইল, ঔষধ, পাইকারি, রেস্টুরেন্ট, আইসিটি ও আর্থিক খাতে বিসিআই ৫০ এর ওপরে, যেটি ভালো পরিস্থিতি নির্দেশ করে। এই খাতগুলো জুলাই-সেপ্টেম্বরে, এপ্রিল-জুনের চেয়ে ভালো পরিস্থিতি আশা করছে।
ব্যবসায়ে আস্থা ও প্রত্যাশা দৃঢ় করতে কভিড-১৯ জনিত স্বাস্থ্য সংকট মোকাবেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ড. রায়হান বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ এর সঠিক বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৪% প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজ এর সাহায্য নিয়েছে, ৫৫% সাহায্য নেয় নি। অন্যদিকে ১১% প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেই না। প্রণোদনা প্যাকেজের এর সাহায্য না নেয়ার কারণ হিসেবে দেখা গেছে, যারা প্যাকেজের সহায়তা নেননি তাদের ৮৪% বলেছেন তাদের খাতের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিলো না, ৮২% বলেছেন এই সাহায্য কোনো অনুদান না দেখে তারা তা নেন নি। অন্যদিকে ৮০% দীর্ঘসূত্রিতাকে দায়ী করেছেন। ৭৮% ব্যাংকিং সেবার সমস্যার কথা বলেছেন, ৬৩% প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সাহায্য নেয়ার প্রক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা জানিয়েছেন, ৩৮% বলেছেন যে অর্থ বরাদ্দ হতো তাদের জন্য সেটি যথেষ্ট নয় এবং ২৩% বলেছেন তাদের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে যারা সহায়তা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৭% জানিয়েছেন যে এই সহায়তা খুবই কার্যকরী। ৪০% জানিয়েছেন সহায়তা তাদের জন্য কার্যকরী ছিল। ৭% এই সহায়তা কার্যকরী বা অকার্যকারী কিছুই মনে করেন না। উত্তরদাতাদের ৪% এর কাছে এই সহায়তার তেমন কার্যকারিতা নেই এবং ২% কোনোই কার্যকারিতা পান নি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছে। ৮৮% দুর্নীতি ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে ৭০% জানিয়েছেন কভিড-১৯ সংকট মোকাবেলা ব্যবসার জন্য সহায়ক ছিলো না। জরিপের অংশগ্রহণকারীরা বাণিজ্যের কাঠামোগত সমস্যা (বন্দর এবং কাস্টমস), অপ্রতুল সরকারি সাহায্য, কর ব্যবস্থায় সমস্যা, আর্থিক সেবা প্রাপ্তিতে সমস্যা, ব্যবসা বা সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা, পরিবহনের অবস্থা, দক্ষ শ্রমিকের অভাব এবং বিদ্যুত সংযোগ প্রাপ্তিতে সমস্যা—কে ব্যবসায় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ড. রায়হান বলেন, এসকল ক্ষেত্রে সংস্কার অত্যন্ত দরকারি। প্যানেল আলোচনায়, আবুল কাশেম খান প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কারের ওপর জোর দেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনায় পরবর্তীতে আসিফ ইব্রাহীম বলেন, রপ্তানীতে কিছুটা উন্নতি হলেও, খুব বেশি আশাবাদী হওয়া উচিত হবে না। যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রের যে কোম্পানীগুলো বাংলাদেশের কাছ থেকে পোশাক কিনত, সেগুলোর অনেকগুলোই দেউলিয়া হয়ে গেছে। ফলে ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি বলা যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশনের কিছু পদক্ষেপের কারণে পুঁজিবাজারে ধীরে ধীরে অংশীদারদের আস্থা ফিরে আসছে। আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য একটি ডাটাবেইজ স্থাপনের প্রস্তাব রাখেন তিনি।
নীহাদ কবির উল্লেখ করেন, ব্যবসাক্ষেত্রে সমস্যাগুলি কোভিড -১৯ পরিস্থিতির আগে থেকেই ছিল এবং ভবিষ্যতেও এটি বজায় থাকবে, তবে বর্তমানে এই সঙ্কটের কারণে দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণাটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে স্বস্তি দিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে এর বাস্তবায়নে একটি অস্পষ্ট বার্তা গেছে যেটি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সংক্রান্ত আস্থা ও প্রত্যাশায় প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কেও চিন্তা করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে আলাদা করে ভাবা প্রয়োজন কারণ তাদের তুলনা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। ব্যবসার জন্য অপ্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুনগুলো বাতিল করা উচিত বলেও বক্তব্য রাখেন তিনি।
সৈয়দ নাসিম মনজুর তার আলোচনায় ব্যাখ্যা করেন যে, কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে রপ্তানির সমস্যাগুলি সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলেছে যার ফলস্বরূপ চাহিদাও প্রভাবিত হয়েছে। খাদ্য ও ঔষধশিল্প ছাড়া সমস্ত শিল্প হুমকির মুখে। অন্যান্য দেশে লকডাউনের সময়ের সাথে বাংলাদেশের লকডাউনের সময়ের অসঙ্গতির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ বিষয়ে নিয়মিত, সঠিক এবং ব্যাপকভাবে তথ্য হালানাগাদ করে প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জোর দেন। এই তথ্যগুলি অন্যদেরকে প্যাকেজের জন্য আবেদন করতে সহায়তা করবে।
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা নেয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে আমাদের বিদেশীদেরকে আশ্বস্ত করা দরকার যেন তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হয়।
দুর্নীতির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি বক্তব্য শেষ করেন। ড. এম মাসরুর রিয়াজ জরিপটির প্রশংসা করে বলেন এটি সময়পযোগী এবং পদ্ধতিগতভাবে সঠিক। কোভিড -১৯ পরিস্থিতি অতিক্রম করার পরেও এটি প্রমাণ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময় সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সাথে যোগাযোগের অভাব ছিল। যার ফলে এর কার্যকরী বিতরণ ব্যাহত হচ্ছে। এই জরিপের ফলাফল এই ব্যবধানটি দূর করতে পারে। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় তিনটি পর্যায় এবং তিনটি আঙ্গিকের সমন্বয়ে একটি কৌশল প্রণয়নের কথা বলেন তিনি। তিনটি পর্যায় হল স্বাস্থ্য সংকট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, জীবিকা নির্বাহ, ব্যবসায়ী উদ্যোগ এবং কর্মসংস্থানের ওপর আঘাত মোকাবেলা এবং টেকসই পুনরুদ্ধার। তিনটি আঙ্গিক হল সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, চাহিদা ব্যবস্থাপনা এবং বিনিয়োগ ঝুঁকি কমানোর জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালা। সরবরাহের ক্ষেত্রে, বাজার ও ব্যবসার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য আনা গুরুত্বপূর্ণ।
সীমান্ত ছাড়পত্রের সমস্যা সমাধানের জন্য শুল্ক আধুনিকায়নের উপর জোর দিতে হবে। চাহিদা বজায় রাখার জন্য নতুন বাজার সন্ধান ও অভিবাসীদের সহায়তা করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ের আস্থার টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য আধুনিক নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, কোভিড -১৯ পরিস্থিতির আমরা নীতি প্রণয়নে দীর্ঘস্থায়ী সংস্কারের কথা ভাবা শুরু হয়েছে, যা আশা জাগায়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মশিউর রহমান বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যতদিন দুর্নীতি করার খরচ দুর্নীতি থেকে প্রাপ্ত লাভের চেয়ে কম থাকবে ততদিন দুর্নীতি থাকবে। তিনি আরো বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজটি সময়োপযোগী এবং দক্ষ, তবে এটি বিতরণে কিছু জটিলতা দেখা দিচ্ছে। তিনি পরামর্শ দেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই প্যাকেজ বিতরণ মনিটরিং করতে পারে। ব্যবসার জন্য অপ্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন বাতিলের ব্যাপারে তিনি জোর দেন। কর ব্যবস্থার সংস্কার দরকার বলে মত দেন তিনি। তিনি খাত অনুযায়ী কর ছাড়ে লাভ-ক্ষতি মূল্যায়নের প্রস্তাব করেন, যেহেতু এতে করে ভবিষ্যতে কর নীতি প্রণয়ন করা যাবে।
মন্ত্রী টিপু মুনশী তার বক্তব্যে সানেম এবং এশিয়া ফাউণ্ডেশনকে অভিনন্দন জানান। তিনি রপ্তানী বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, এ বছর ৪৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানীর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, মহামারীর জন্য তা কঠিন হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, চীন থেক যে বিনিয়োগগুলো সরে যাচ্ছে সেগুলো আকর্ষণে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণে গবেষণার জন্য সানেম ও সংশ্লিষ্টজনদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। দুর্নীতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের শক্ত অবস্থার কথা তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।
আরকে//