আরও কিছুদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখি : রামেন্দু মজুমদার
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৪৩ পিএম, ৯ আগস্ট ২০২০ রবিবার
খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪১ সালের ৯ আগস্ট লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনেই তিনি থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনকে বেগবান করার পথে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
নাট্য সংগঠন ‘থিয়েটার’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে নাট্যবিষয়ক পত্রিকা ‘থিয়েটার’ সম্পাদনা করছেন তিনি। মঞ্চের পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। একাধারে অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক, নির্মাতা ও ঢাকার মঞ্চ নাটক আন্দোলনের পথিকৃত তিনি।
ইউনেস্কোর অধীনে আন্তর্জাতিক নাট্য সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট’-এর সভাপতি হিসেবে পর পর দুইবার দায়িত্ব পালন করেছেন। কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার তার স্ত্রী। তাদের একমাত্র সন্তান অভিনয়শিল্পী ও নির্দেশক ত্রপা মজুমদার।
রামেন্দু মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর পাস করে তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। নোয়াখালীর চৌমুহনী কলেজে মাত্র তিন বছর শিক্ষকতার করে ইস্তফা দেন। পরে পেশা পরিবর্তন করে ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে বিজ্ঞাপন শিল্পে যোগ দেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। পাশাপাশি বঙ্গন্ধুর বক্তৃতা, বিবৃতির একটি ইংরেজি সংকলন সম্পাদনা করে দিল্লি থেকে প্রকাশ করেন। ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে বিটপি অ্যাডভার্টাইজিংয়ে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম ‘এক্সপ্রেশানস’, যেখানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
বেতার ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করছেন যথাক্রমে ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সাল থেকে। এ দুটো মাধ্যমে দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করেছেন। মঞ্চে অভিনয় করছেন ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। বাংলাদেশের নব নাট্যচর্চা ও আন্দোলনে রামেন্দু মজুমদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
‘থিয়েটার’নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘থিয়েটার’ পত্রিকার সম্পাদক, ‘আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুল’-এর অধ্যক্ষ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি হিসেবে তার সংযুক্তি বাংলাদেশের নাটক ও সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবান করেছে।
বাংলাদেশের নাটককে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে রামেন্দু মজুমদার পালন করছেন অগ্রণী ভূমিকা। তিনি ১৯৮২ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট’(আইটিআই) এর বাংলাদেশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ আইটিআই কেন্দ্রকে একটা মর্যাদার আসনে পৌঁছাতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করেছেন।
তিনি বিভিন্ন সম্মাননা ও পদক পাওয়া ছাড়াও ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেছে।
৮০তম জন্মদিন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ৮০তম জন্মদিনে কেবলই মনে হচ্ছে জীবন তো প্রায় শেষ হয়ে এল। আরও কিছুদিন যদি বাঁচতে পারি, আরও কিছু কাজ যদি করে যেতে পারি, এটাই ভাবনা। আসলে জীবন তো একদিন ফুরিয়ে যায়। তারপরও বাঁচার আশা সবারই থাকে। আমিও আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। সত্যি কথা বলতে জন্মদিনে বর্ণাঢ্য কিছু কখনো করি না। আমরা পাঁচ জন (আমি, স্ত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, মেয়ে ত্রপা, মেয়ের জামাই আপন এবং ওদের সন্তান) মিলে জন্মদিনে প্রতিবছর একটু বের হই। এ বছর তাও সম্ভব নয়। আসলে জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকতা করা হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে বাঁচার স্বাদ তো কারও মরে না। সবাই বাঁচতে চায়। সুন্দর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে কেউ যেতে যায় না। অনেক বছর বাঁচলাম। তবে অনেকবছর নয়, আরও কিছুদিন বাঁচার স্বপ্ন দেখি।’
এসএ/