ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

উদ্যোক্তার গল্প

"ব্যবসায়ী না উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি"

মাসুদ আল রাজী

প্রকাশিত : ০৭:৫৯ পিএম, ৯ আগস্ট ২০২০ রবিবার

তওহীদা চৌধুরী, পড়াশুনা করেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি কাজ করছেন নিজের ডিজাইনের তৈরী দেশীয় কাপড় নিয়ে। যুক্ত আছেন ‘উইমেন্স এন্ড ই-কমার্স’ এর সাথে। তার এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন- TAUHIDA ।

তিনি জানান, তার এই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন একদিনে হয় নি বা শখ থেকে আসে নি। বিজনেস ফিল্ডে তিনি আসেন নিজের নিড আর প্যাশন থেকে।’

উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন কিভাবে তৈরী হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘উদ্যোগ শুরু করি ২০১৮ সালে, থার্ড ইয়ারে পড়ি তখন। দেখলাম ক্লাসমেট আর বন্ধুরা সবাই কিছু না কিছু করছে। কেউ টিউশন,কেউ জব বা কেউ অন্যকিছু ।

সামনে ডিপার্টমেন্টের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাচ ট্যুর হবে, ফ্রেন্ডরা নিজের ইনকাম থেকে ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছে ট্যুরের জন্য, অন্যদিকে আমি বাসায় মুখ চেয়ে বসে আছি।

এই ট্যুরের জন্য হন্যতন্য হয়ে টিউশন খুজছিলাম বা পার্ট টাইম জব, কিন্তু তখনও আমার লাক ফেভারে ছিল না। তখন কি করা যায়, কি করে এতো টাকা ম্যানেজ করবো? এসব চিন্তায় অস্থির থাকতাম। বাসায় এতো টাকার কথা কিভাবে বলবো?

ভাবতে ভাবতে মনে হলো আমার মামার কাপড়ের শোরুম আছে, আমার ভাইয়া বসেন ওই দোকানে। দোকানের প্রোডাক্ট যদি আমি অনলাইনে সেল করি তাহলে কেমন হয়? কিন্তু আবার মনে হলো আমার কোনও সেভিংস নাই, কোনও সোর্স নাই ইনভেস্টমেন্টের আবার কারো কাছ থেকে ধার নেওয়ার ইচ্ছাও নাই।’

বিজনেস ফিল্ডে আসার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘আসলে বলতে গেলে আমি একেবারে জিরো থেকে শুরু করেছি। আমার ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করি কেমন হবে, এই ভাবে যদি কাজ করি। ও বলছিলো, করো, ভালো হবে কিন্তু মনে রেখো অনলাইন বিজনেসে মানুষ অনেক হ্যারাস করে স্পেশালি কাস্টমারের ঊনিশ থেকে কোনও কিছু বিশ হয়ে গেলে প্রচুর বঞ্চনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু, সৌভাগ্যক্রমে আমি এখনো এমন কোনও কিছু ফেইস করিনি।

এরপর ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করে হুটহাট করে একটা ফেসবুক পেইজ খুলে কয়েক ডিজাইনের কাপড়ের ছবি দিয়ে দিই। তারপর মোটামুটি পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অর্ডার দেন, কেউ আবার জাস্ট আমাকে সাপোর্ট করার জন্য অর্ডার দেন। এমন করে চারপাঁচ মাস যতটুকু ভেবেছি তারচেয়েও বেশি রেন্সপন্স পাই কিন্তু দেখা যায় প্রডাক্ট বিক্রি করে দোকানে দেয়ার পর আমার হাতে আর তেমন কিচ্ছু থাকেনা।

হঠাৎ একদিন মনে হলো মানুষ যেটা শপিং মলে গেলে পাবে সেটা আমার কাছ থেকে জাস্ট ফটো দেখে কেনো কিনবে?


সেই ভাবনা থেকে মনে হলো অন্যদিকে আমার ফোকাস করা উচিত। আমি যদি এমন নিজে ডিজাইন করে সেল দেই কেমন হয়? এরপর রেডিমেইড প্রোডাক্ট বাদ দিয়ে আমার স্টুডেন্ট কাস্টমাদের বাজেটের কথা চিন্তা করে ব্লক কাপড়ের দিকে নজর দেই। আমার ব্যবস্যা দিয়ে আনেক অনেক টাকা ইনকাম করে ফেলছি-এমনটা নয়। মোটামুটি নিজের বাইরে খাওয়ার, ফ্রেন্ডদের গিফট দেওয়ার টাকা হয়ে যায়, সবচেয়ে আনন্দের যেটা আম্মা আব্বাকে ঈদে ছোটখাটো নিজের ইনকামের টাকায় গিফট দেওয়া ছিলো আমার বিজনেসের লাভ।’

করোনাকালীন সময়ে তার ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বিজনেসের একটা প্লান ছিলো এই বছরের পহেলা বৈশাখ কে কেন্দ্র করে, কিন্তু করোনার জন্য কি করবো কি না সেটা ফোকাস করতে পারতেছিলাম না। সোস্যাল মিডিয়া ইউজ করা বন্ধ করে দেই বাট ফেসবুক পেজের খাতিরে নেটে আসা লাগতো তখন কি ভাবে যেনো উইমেন্স ই-কমার্স ফোরাম (উই) তে জয়েন হই এবং সবার পোস্ট পরে যেন নিজের কাজের প্রতি একটা আস্থা চলে আসে। রিস্ক নেওয়া লাগবে,কাজকে আরও সিরিয়াসলি নিবো তাই বিজনেস নিয়ে খুটিনাটি অনেক জিনিস জানা লাগবে এই কথা মাথায় রেখে গ্রুপ থেকে অর্ডার নেওয়া শুরু করি এবং শুধু ঐ গ্রুপ থেকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকার লেনদেন করি। দেশের বিভিন্ন জায়গাসহ দেশের বাইরেও আমার তৈরী কাপড় পাঠিয়েছি।’

তিনি তার এই উদ্যোগকে ব্রান্ডিং করার স্বপ্ন দেখেন, মানুষে যেন তার কাজের দ্বারা উপকৃত হয় এটাই তার কাজের উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।

আরকে//