ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সুন্দরবনে জেলেদের ওপর হামলা, ইলিশ লুট, ক্ষোভ অসন্তোষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:০৩ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২০ সোমবার

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মামুনের পাশে তার স্বজন। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মামুনের পাশে তার স্বজন। ছবি- একুশে টেলিভিশন।

সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে দফায় দফায় জেলেদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের বিরুদ্ধে। ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের হামলায় আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিতসাধীন রয়েছেন জেলে মামুন খান (৩২)। 

এছাড়াও মারধরের শিকার আরও দুই জেলে একই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় সুন্দরবন ও বঙ্গপসাগরে মাছ আহরণের জন্য যাওয়া জেলে ও তাদের পরিবারের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

আহত মামুন খান শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের আব্দুল হক খানের ছেলে। রোববার বিকেলে সুন্দরবনের দুধমূখী নদীর বালুর চর এলাকায় মামুন খানের উপর হামলা চালায় ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ ও তার লোকজন। পরে আজ সোমবার সকালে মামুন খানকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি করেন তার পরিবার। 

এদিকে সোমবার (১০ জুলাই) সকালে একইস্থানে জেলে নান্টু ফরাজী ও নুর ইসলাম মল্লিকের ওপর নির্যাতন চালায় ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

আহত মামুন খান বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজ লোক পাঠিয়েছে আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পরে তার কাছে না গিয়ে ওই সময় সাগরে জাল ফেলে বালির খালে ফিরে আসি। এসময় ভাইস চেয়ারম্যানের সাথে দেখা হলে সে বলে তোর কাছে টাকা চাইছি টাকা দিসনি কেন। তখন আমি বলি, আমি গরীব মানুষ কিভাবে টাকা দিব। পরে আমার ট্রলারে থাকা ৪০টি ইলিশ মাছের মধ্যে ৩৮টি মাছ নিয়ে যায় ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা। আমাকে ধরে তার ট্রলারে নিয়ে পারভেজ ও আলমসহ তিনজনে আমাকে বেধড়ক মারপিট করে। আমাকে লাথি মারে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আমি এর বিচার চাই।

সোনাতলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ডালিম হোসেন বলেন, মামুনসহ জেলেরা দীর্ঘদিন সুন্দরবন ও বঙ্গপসাগরে মাছ ধরে আসছিল। কিন্তু এবছর ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ ও জাকির ব্যবসায় নেমে জেলেদের উপর বিভিন্ন অত্যাচার শুরু করে। সাধারণ জেলেদের মারধর করে বিতাড়িত করেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

রায়েন্দা ইউনিয়ন মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এমাদুল শরীফ বলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ, সাবেক দস্যু নাছির, আলম ও জাকির সুন্দরবনে গিয়ে আমার জামাই মামুনকে মারধর করেছে। তার কাছে ২৫ হাজার টাকা ও ট্রলার থেকে ৩৮টি মাছ নিয়ে গেছে। আমি এর শাস্তি চাই।

জেলের স্বজনরা জানান, দফায় দফায় মাছ নিয়ে যাবে, টাকা দাবি করবে আর তাদের কথা না শুনলে মারধর করবে। এরকম হলে আমরা কিভাবে বাঁচব। আমরা ভাইস চেয়ারম্যান পারভেজসহ অত্যাচারীদের বিচার চাই।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফরিদা পারভীন বলেন, শরীরে প্রচুর ব্যাথা ও মাথার ডান পাশে কাটা দাগ নিয়ে একজন জেলে আমাদের এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা তার চিকিৎসা প্রদান করছি।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, জেলেদের কাছ থেকে শুনেছি সুন্দরবনের যে জায়গায় এই জেলেরা মাছ ধরছিল, ভাইস চেয়ারম্যানও সেখানে মাছ ধরতে চেয়েছিল। ভাইস চেয়ারম্যান জেলেদেরকে ওখান থেকে চলে যেতে বলে এবং ওই জেলেরা না গেলে ভাইস চেয়ারম্যান ও তার লোকেরা একজনকে মারধর করে। এ ঘটনায় জেলেদের ডেকে আমি সব শুনেছি। জেলেরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

পুর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিন বলেন, জেলেদের মারধরের ঘটনাটি অবশ্যই অমানবিক। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ কিভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। তাকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পেলে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি।

এনএস/