২০২০ সালের অর্ধবার্ষিকের
আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে প্রাইম ব্যাংক
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:১৪ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:২০ পিএম, ১১ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার
২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসের আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। প্রাইম ব্যাংক এ সময়কালে ডিপোজিটে প্রবৃদ্ধি, নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্যণীয় উন্নতি, বাংলাদেশের প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ক্যাপিটাল টু রিক্স ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) অর্জন এবং সরকারের করোনাভাইরাস প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এমএসএমই খাতে অন্যতম সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করেছে।
এর আগে ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায়, ২০১৯ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রাইম ব্যাংক ১৩.৫০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রধান প্রধান অগ্রগতিগুলো হচ্ছে:
১. ৩০ জুন, ২০২০ এ প্রাইম ব্যাংক এর মোট ডিপোজিট দাঁড়িয়েছে ২২,৬১৬ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ২১,৬৪৪ কোটি টাকা থেকে ৪.৪৯% বেশি।
২. নন-পারফর্মিং লোনে (এনপিএল) লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ৩০ জুন, ২০২০ এ এনপিএল দাঁড়িয়েছে ৪.২১%, যা পূর্বের বছরের একই দিনে ছিল ৬.০৭%। ২০২০ এর অর্ধবার্ষিক শেষে এনপিএল কভারেজ রেশিও হয়েছে ১২৯% যা আগের বছরের একই দিনে ছিল ৭১%।
৩. ২০২০ এর অর্ধবার্ষিক শেষে ক্যাপিটাল টু রিক্স ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও (সিআরএআর) দাঁড়িয়েছে ১৮.৩১%, যা বাংলাদেশের প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
৪. ২০২০ এর প্রথম ছয় মাস শেষে রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) দাঁড়িয়েছে ৪.৫৬% এবং রিটার্ন অব অ্যাসেটস (আরওএ) দাঁড়িয়েছে ০.৩৮%, যা ব্যাংকের অর্থনৈতিক দৃঢ়তার প্রতিফলন।
৫. প্রাইম ব্যাংক সরকারের করোনাভাইরাস প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এমএসএমই খাতে এখন পর্যন্ত ৭০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা এ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এমএসএমই খাতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ।
৬. করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে গ্রাহক ও কর্মীবাহিনীর নিরাপত্তায় কার্যকর উদ্যোগের জন্য যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত ফাইন্যান্সিয়াল প্রকাশনা -- ইউরোমানি -- প্রাইম ব্যাংককে ‘এক্সিলেন্স ইন লিডারশিপ ইন এশিয়া ২০২০ পুরস্কার’রে ভূষিত করেছে। এটি প্রাইম ব্যাংকের জন্য এক অনন্য সম্মান কেননা দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকটি এ পুরস্কার অর্জন করেছে।
ক্যাপিটালের পর্যাপ্ততা ও তারল্যের দিক থেকে রেগুলেটরি বাধ্যবাধকতা যথাযথভাবে বজায় রাখতে পেরেছে এবং ইন্ডাস্ট্রির অন্য ব্যাংকের তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে আছে, যা ব্যাংকটির স্থিতাবস্থা ও দৃঢ় আর্থিক সামর্থ্যরে প্রতিফলন বহন করে। ক্যাপিটাল ও তারল্যের স্থিতাবস্থা অনিশ্চয়তার এই সময়ে ব্যাংকটিকে শক্তিশালী ভিত ধরে রাখতে সাহায্য করবে। প্রসারমান ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশনের অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের ফলে দুর্যোগের সময়েও গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে প্রাইম ব্যাংক।
সরকারের কোভিড-১৯ প্রণোদনার আওতায় ঋণ বিতরণে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে প্রাইম ব্যাংক। এ ঋণ বিতরণের পরিমাণের দিক থেকে অন্যতম অগ্রগামী ব্যাংক হিসেবে আছে প্রাইম ব্যাংক। প্রণোদনা বাস্তবায়নের ফলে ব্যবসায় প্রয়োজনীয় পুঁজি প্রদান করা গেছে এবং ব্যবসাকে করোনাভাইরাস পূর্ববর্তী স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতায় ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করছে।
পূর্বেই প্রস্তুতকৃত বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যানের বিচক্ষণ বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সংকটকালে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠতে পেরেছে এবং গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। প্রযুক্তিমুখী ব্যাংকটি, যা এবছর এশিয়ামানি থেকে “বাংলাদেশের সেরা ডিজিটাল ব্যাংক” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সার্ভিস -- অ্যালটিচুড -- এর সেলফ-রেজিস্ট্রেশন চালু, আইসিটি খাতে বাংলাদেশের প্রথম জামানতবিহীন ঋণ প্রদাণের জন্য এমএসএমই অ্যালায়েন্সের সূচনা করেছে, যা ব্যবসায়ী মহলে প্রশংসা অর্জন করেছে।
করোনাভাইরাস দুর্যোগে অনলাইন লেনদেনের সময় গ্রাহকরা যাতে প্রতারকদের প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য প্রাইম ব্যাংক সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য নজারদারি জোরদার করেছে। এর ফলে গ্রাহকরা সরাসরি শাখায় না গিয়ে ঘরে বসেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিস গ্রহণে উৎসাহিত হয়েছে।
রেগুলেটরি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিলম্ব মাশুল মওকুফ, ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের নতুন বিধি ও ইন্টারেস্ট রেট বেঁধে দেওয়ার ফলে আয় কমে যাওয়ায় প্রাইম ব্যাংক আন্তর্জাতিক রেমিটেন্সে জোর দেয়, ডিজিটাল বাংকিংয়ে সক্ষমতা বাড়ায় এবং কার্যকর ব্যয় ব্যবস্থাপনার মত পদক্ষেপ নেয়।
করোনাভাইরাসের সময় প্রাইম ব্যাংক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবায় বিদ্যানন্দ ও জাগো ফাউন্ডেশন এবং মিশন সেইভ বাংলাদেশ এর সাথে অর্থ সংগ্রহের জন্য পার্টনারশিপ শুরু করে, যার ফলে মহামারীকালে দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।
এই প্রতিকূল সময়ে প্রাইম ব্যাংক ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়কালে সলো ভিত্তিতে ৬১.৮৮ কোটি টাকা নেট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল ৯৯.২৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকটি সলো ভিত্তিতে ২৪৮.১৬ কোটি টাকা পরিচালনাগত মুনাফা অর্জন করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩২.৪৭ কোটি টাকা।
পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির পরিচালনা মুনাফা ও কর পরবর্তী মুনাফা যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রেগুলেটরি পদক্ষেপ হিসেবে ফি মওকুফ ও ইন্টারেস্ট রেট বেঁধে দেওয়ার ফলে আয় কমে গেছে।
৩০ জুন ২০২০ এ সলো ভিত্তিতে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ০.৫৫ টাকা, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল ০.৮৮ টাকা। ২০২০ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে সালে ভিত্তিতে শেয়ার প্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালু দাঁড়ায় ২৪.২১ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২২.৭৫ টাকা। ২০২০ এর অর্ধবার্ষিকীতে সলো ভিত্তিতে শেয়ার প্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়ায় ০.৭৫ টাকা, যা পূর্ববতী বছরের একই সময়ে ছিল ০.৮৪ টাকা।
৩ আগস্ট, ২০২০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব রাহেল আহমেদ ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের কর্মকর্তাবৃন্দ ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসের আর্থিক ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং অনলাইনে অংগ্রহণকারী দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বিশ্লেষক, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পার্টনার ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ব্যাংকটির ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এ উপলক্ষে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রাহেল আহমেদ বলেন, “করোনাভাইরাসের সংকটকালে কর্মীবাহিনী ও গ্রাহকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। নিরাপত্তা বজায় রেখে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সার্ভিস প্রদান করাও ছিল অন্যতম অগ্রাধিকার। ভাইরাসটি সংক্রমণের শুরুর দিকেই আমরা সচেতনতা ও নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণ করি। প্রথমদিকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গ্রাহকদের অতি জরুরি সেবা ও পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে। সংকটকালে গ্রাহকদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে প্রাইম ব্যাংক এর আছে পূর্বের অনেক নজির। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতা ও গ্রাহকদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা আমাকে উৎসাহিত করেছে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস এর ওপর ভিত্তি করে আমরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবোই।”
করোনাভাইরাসের কারণে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য জুম ওয়েবিনারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
আরকে//