বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্ত আটকেছিলেন জিয়া: অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৫২ এএম, ১৩ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ১৩ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাজ্যে যে অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয়েছিল, তার সদস্যদের বাংলাদেশে আসতে তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান।
১৯৮১ সালে বিদেশি এই কমিশনের সদস্যদের বাধা দেওয়ার সময় বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন।
যুক্তরাজ্যের এই কমিশন ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যেখানে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে আইনি ও বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজস্ব পথে এগোতে দেওয়া হয়নি। আর এজন্য সরকারই দায়ী।
বিচার পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছিল স্বাধীন এই অনুসন্ধান কমিশন, যদিও তাতে কান দেননি জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে। একদল সেনাসদস্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন ইউরোপে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ আটকে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
তখন প্রবাসে থাকা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং জেল হত্যাকাণ্ডের শিকার জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যদের আবেদনে যুক্তরাজ্যে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে সমাবেশ থেকে ওঠা দাবিও কমিশন গঠনে ভূমিকা রেখেছিল।
কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য স্যার টমাস উইলিয়ামস, সদস্য ছিলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী, শান্তিতে নোবেলজয়ী শন ম্যাকব্রাইড, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য জেফরি টমাস; সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন অব্রে রোজ।
১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কমিশন প্রথম বৈঠকে বসে, এরপর সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির বিষয়ে অনুসন্ধান চালাবেন তারা।
এরপর কমিশনের সদস্যরা বাংলাদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং ভিসার জন্য লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাসের শরণ নেন।
১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে কমিশনের পক্ষে বাংলাদেশে যেতে ভিসার আবেদন করেছিলেন জেফরি টমাস এবং তার এক সহকারী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভিসা না পাওয়ায় এই সফর হয়নি। কেন ভিসা দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কিছু জানানোও হয়নি। দূতাবাসে কয়েকবার চিঠি দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি।”
‘শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি’ প্রতিবেদনটি পুস্তিকা আকারে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়, যার মুখবন্ধ লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, যিনি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যে গঠিত এই কমিশনের সদস্যদের প্রতি আস্থা রেখে তিনি লিখেছিলেন, “তাদের নামগুলো এই নিশ্চয়তা দেয় যে তাদের তদন্ত বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ মান অক্ষুণ্ন রেখেই হত।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের একুশ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের পথ খোলে।
বিচারের রায় হওয়ার পর ক্ষমতার পালাবদলে জিয়ার দল বিএনপি সরকার গঠনের পর তা ঝুলে যায় আবার।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শেষ করে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। এখনও বিদেশে পালিয়ে আছেন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছয়জন।
লেখাটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া
এমবি//