সৃষ্টিকর্তায় সমর্পিত হই
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৫২ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:০৭ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার
দোয়া সব ইবাদতের মূল। যে আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন। আকাশ-বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্র—সব কিছুর মালিক তিনি। তিনিই সবার পালনকর্তা ও রিজিকদাতা। মানুষের যেকোনো চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার ক্ষমতা একমাত্র তিনিই রাখেন। এ জন্য আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহকে স্মরণ করা। যেকোনো প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা।
দোয়া প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো। ’ হজরত নোমান বিন বশির থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত। ’ -আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজা
মনে রাখতে হবে দুনইয়ার এ জীবনে আমরা কখনোই নিরবিচ্ছিন্ন সুখ পাবো না, ক্রমাগত বিপদ থাকবেই। জীবন চলবে বিভিন্ন বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। একটা বিপদ পার হলে, আর একটা এসে হাজির। আবার বিপদের পর আসবে সুখ। এভাবেই চলবে, আর বাড়বে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা।
হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান যদি এমন দোয়া করে যাতে কোনো গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার আহবান না থাকে, তাহলে আল্লাহপাক তাকে তিনটির যে কোনো একটি বিনিময় দান করেন- ১. হয় সাথে সাথে তার দোয়া কবুল করেন, ২. না হয় আখেরাতের জন্য সঞ্চিত রাখেন, ৩. এ পরিমাণ ক্ষতিকর কিছু থেকে তাকে হেফাজত করেন। তখন সাহাবারা (রা.) বলল, তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করবো। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ সবচেয়ে অধিক দাতা। ’ -তিরমিজি
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, দ্বীনের খুঁটি এবং আসমান ও জমিনের আলো। ’ -হাকেম
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে বলে, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্’দাহ লা-শারীকালাহু,... ক্বুওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল আ’লিয়্যিল আ’যীম। রাব্বিগফির লী।’ তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যদি সে কোন দু’আ করে, তবে তার সেই দু’আ কবুল করা হবে। যদি সে উঠে ওযু করে সলাত পড়ে, তবে তার সলাত কবুল করা হবে।’ (বুখারী)
আল কোরআনের দোয়া বা প্রার্থনা -
৭. সূরা আরাফ, আয়াত ১৯০
‘কিন্তু আল্লাহ যখন তাদেরকে সুস্থ সন্তান দান করেন, তখন তাদেরকে যা দেয়া হলো, সেই দান ও অনুগ্রহের জন্যে আল্লাহর সাথে তারা অন্য উপাস্যকে শরিক বলে গণ্য করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ এসব শরিকদের অনেক ঊর্ধ্বে। ১৯১-১৯২. কেন ওরা আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে শরিক করে, যারা কোনোকিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং ওদেরকেই অন্যেরা সৃষ্টি করেছে? ওরা না ওদেরকে সাহায্য করতে পারে, না নিজেদেরকে। ১৯৩. তোমরা যদি ওদের কাছে সৎপথে চলার জন্যে প্রার্থনা করো, ওরা কখনোই সাড়া দেবে না। তোমরা ওদের ডাকো বা না-ই ডাকো, সবই সমান।
৯.সূরা তওবা, আয়াত ৫
‘(প্রচলিত রীতি অনুযায়ী) সংঘাত নিষিদ্ধ মাসসমূহ পার হওয়ার পর (বিবদমান) শরিককারীদের যেখানে পাও, সেখানে ওদের বিনাশ করো। সম্ভাব্য প্রতিটি স্থানে ওত পেতে থেকে (বিবদমান) শরিককারীদের পাকড়াও করো, অবরুদ্ধ করো। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে, তবে তাদের মুক্ত করে দাও। মনে রেখো, আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু। ৬. আর শরিককারীদের মধ্যে যদি কেউ নিরাপত্তা প্রার্থনা করে তোমার কাছে (আল্লাহর বাণী শোনার জন্যে) আসতে চায়, তবে তাকে নিরাপত্তা দিয়ে কাছে আনো এবং (সময় নিয়ে) আল্লাহর বাণী শোনাও। তারপর সে যেখানে নিজেকে নিরাপদ মনে করে, সেখানে পৌঁছে দাও। (কারণ এমন হতে পারে যে) এরা সত্য না জানার কারণে (পাপে লিপ্ত)।’
১২.সূরা ইউসুফ, আয়াত ১৬-১৮.
‘রাতের আঁধারে কাঁদতে কাঁদতে ওরা ওদের পিতার কাছে এলো। বলল, ‘হে আমাদের পিতা! আমরা দৌড়ের প্রতিযোগিতায় মত্ত ছিলাম। ইউসুফকে রেখে গিয়েছিলাম আমাদের মালপত্রের কাছে। এ সময়ে নেকড়ে এসে তাকে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু (আমরা জানি) আপনি আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যি বলছি।’ এরপর ওরা নকল রক্ত মাখানো ইউসুফের জামা পেশ করল। (কিন্তু ইয়াকুব) বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, না (তোমাদের কথা ঠিক নয়), তোমরা এক মনগড়া কাহিনী বলছ। অবশ্য এখন আমার পক্ষে ধৈর্যধারণ করাই শ্রেয় (কারণ বিপদে ধৈর্যধারণ করা আল্লাহর দৃষ্টিতে উত্তম)। আর তোমরা যা বলছ, সে ব্যাপারে আমি শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করছি।
৩.সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৬
‘ইতঃপূর্বে বহু নবীকেই আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে হয়েছে। তাদের সাথে ছিল বহু আল্লাহওয়ালা। আল্লাহর পথে কোনো বিপর্যয়েই তারা হতোদ্যম হয় নি। দুর্বলতা দেখায় নি। অন্যায়ের সামনে মাথানত করে নি। আল্লাহ অবশ্যই ধৈর্যশীল সংগ্রামীদের ভালবাসেন। ১৪৭. তাদের শুধু বিনীত প্রার্থনা ছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের পাপমোচন করো। সকল বাড়াবাড়ির জন্যে আমাদের ক্ষমা করো। বিশ্বাসে দৃঢ় রাখো। সত্য অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে বিজয়ে আমাদের সাহায্য করো।’ ১৪৮. তারপর আল্লাহ তাদের পৃথিবীতে পুরস্কৃত করেছেন এবং আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’
২৩.সূরা মুমিনুন, আয়াত ২৭.
‘আমি নূহের কাছে ওহী পাঠালাম, ‘তুমি আমার ওহী অনুসারে তোমার তত্ত্বাবধানে নৌকা নির্মাণ করো। এরপর যখন আমার ফয়সালার সময় আসবে, তখন তোমার চুলো পানিতে ভরে যাবে। এরপর তুমি সকল প্রকার জীবজন্তু জোড়ায় জোড়ায় নিয়ে নৌকায় উঠবে। তোমার পরিবার-পরিজনকেও নৌকায় ওঠাবে, শুধু যাদের ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে গেছে তাদের ছাড়া। আর সীমালঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে আমার কাছে কোনো সুপারিশ করবে না, ওরা পানিতেই ডুববে।’ ২৮. তুমি সাথিদেরসহ নৌকায় ওঠার সময় বলবে, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে জালেমদের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ ২৯. তুমি প্রার্থনা করো, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন জায়গায় নামিও, যা আমাদের জন্যে কল্যাণকর। সত্যিকার গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে তুমিই শ্রেষ্ঠ।’ ৩০. এই ঘটনার মধ্যে (আমার কুদরতের) বহু নিদর্শন রয়েছে। আমি অবশ্যই আমার বান্দাদের পরীক্ষা করে থাকি।’
৬০.সূরা মুমতাহানা, আয়াত ৪-৫.
‘তোমাদের জন্যে ইব্রাহিম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা তাদের (পৌত্তলিক) সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করো, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তোমরা যা বিশ্বাস করো তার সত্যতা আমরা অস্বীকার করছি। এক আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন না করা পর্যন্ত তোমাদের সাথে আমাদের চিরস্থায়ী বিভেদ সৃষ্টি হলো। শুধু ব্যতিক্রম এটুকুই যে, ইব্রাহিম তার পিতাকে বলেছিল, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করব। কিন্তু তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমার কোনো অধিকার নেই।’ ইব্রাহিম ও তার অনুসারীরা প্রার্থনা করেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমারই ওপর ভরসা করেছি, তোমারই দিকে তাকিয়ে আছি এবং শেষ পর্যন্ত আমরা তোমার কাছেই ফিরে আসব। প্রভু হে! আমরা যেন অবিশ্বাসীদের নিপীড়নের শিকার না হই। আমাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করো। তুমি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’
২.সূরা বাকারা, আয়াত ৪০-৪১.
‘হে বনি ইসরাইল! আমার দেয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করো এবং আমাকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করো। তাহলে আমিও আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। আর তোমরা আমার অবাধ্যতার ব্যাপারে সতর্ক থেকো। তোমাদের কাছে যে কিতাব রয়েছে, তার সত্যায়ন হিসেবে আমি এখন যে কিতাব নাজিল করেছি, তা বিশ্বাস করো। তোমরাই এই কিতাবের প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ো না। আর পার্থিব ক্ষুদ্র লাভের জন্যে আমার আয়াত বিক্রি কোরো না। তোমরা আল্লাহ-সচেতন হও। ৪২. তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিও না। জেনেশুনে সত্য গোপন কোরো না। ৪৩. তোমরা নামাজ কায়েম করো, অন্যের কল্যাণে ব্যয় করো এবং প্রার্থনাকারীদের সাথে প্রার্থনায় অবনত হও। ৪৪. তোমরা অন্যকে সৎ কাজ করতে বলো আর নিজেরা তা পালন করতে ভুলে যাও! অথচ তোমরা আল্লাহর কিতাব পাঠ করো। তোমরা কি তোমাদের সহজাত বিচারবুদ্ধিও প্রয়োগ করবে না?’