ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

জঙ্গি-পুলিশ সংঘর্ষের ১৯ বছর আজ, ১৩ জঙ্গিকে খুঁজছে পুলিশ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪৯ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৫৬ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার

২০০৩ সালের (১৪ আগষ্ট) জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামে গোপন বৈঠক করার সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে পুলিশের অস্ত্র ও ওয়াকিটকি লুট করেছিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শীর্ষ কয়েক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য জব্দ করে। 

এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ১০ বছর আগে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হলেও এখনো মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়নি। কারণ মামলার ৫৯ আসামির মধ্যে শীর্ষ ১৩ জঙ্গি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও পুলিশ এক যুগেও তাদের ধরতে পারেনি।

জামিন নিয়ে পলাতক জঙ্গিরা হলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের আনোয়ার হোসেন ওরফে খোকা, তারিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে শহীদ ওরফে ভাগ্নে শহীদ, রংপুরের জয়নাল আবেদীন, গাইবান্ধার মামুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছরোয়ার জাহান, শহিদুল ইসলাম ওরফে রানা ও তুফান ওরফে আবুল কাশেম, রাজশাহীর শহীদুল্লাহ ফারুক ওরফে সেলিম ও আদনান ছামি ওরফে আম্বর ওরফে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে মোখলেছার, নওগাঁর সাইফুল ইসলাম ওরফে খোকন ও আব্দুল কুদ্দুস; বগুড়ার আরিফুর রহমান ওরফে আসাদুল্লাহ এবং নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন ওরফে ছালেহীন।

একাধিকবার অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু আসামিরা আদালতে উপস্থিত না থাকায় অভিযোগ গঠনের তারিখ পেছানো হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। সেদিনও অভিযোগ গঠন হয়নি বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামের স্থানীয় জঙ্গি নেতা মন্তেজার রহমানের বাড়িতে দেশের শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের নিয়ে গোপন বৈঠক চলছিল। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর ও ক্ষেতলাল থানা পুলিশ মহেশপুর গ্রামে (১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি) মন্তেজারের বাড়িটি ঘেরাও করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা করে। হামলায় সদর থানার সেই সময়কার ওসি ইকবাল শফিসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে গুরুতর জখম করে ৩টি শটগান, ৪৫টি গুলি ও ১টি ওয়াকিটকি লুট করে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। পুলিশ রাতেই ১৯ জঙ্গিকে আটক করে। 

এ ঘটনায় পরের দিন ১৫ আগস্ট সদর থানার সেই সময়কার এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ক্ষেতলাল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় এজাহারনামীয় ৩৩ জন ও অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে অস্ত্র লুট ও পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে জখম ও মারপিট করার অভিযোগ আনা হয়।

২০০৪ সালের বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার ১৩ জঙ্গি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এরপর থেকেই তাঁরা পলাতক রয়েছেন। মামলার আটজন আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। তাঁরা হলেন আনোয়ার সাদাত, সালাউদ্দিন, মন্তেজার রহমান, রাজ্জাক, আজিজুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, ইউনুছ ও ময়নুল ইসলাম। আর ৩৮ জন আসামি জামিনে রয়েছেন। এক আসামি মৃত্যুবরণ করেছেন।

দিনাজপুর জোনের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক জালাল উদ্দীন মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ৬০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই ঘটনার পর আসামি মন্তেজার রহমানের বাড়ির পাশ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হলেও অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে কোনো মামলা করেনি পুলিশ। 

এ ঘটনায় ২০০৯ সালের ১২ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন জানান। আবেদনটি আমলে নিয়ে আদালত অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আবারও তদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে আদেশ দেন। দিনাজপুর জোনের সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার শেখ আহসান-উল কবীর আদালতের নির্দেশে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক জব্দ হওয়ার বিষয়টি পুনঃ তদন্ত করেন। তিনি তদন্ত করে ২০১০ সালের ২৫ মে ৬০ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র একই আদালতে দাখিল করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট মামলা দায়ের হওয়ার পর বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালত থেকে ১৩ জন আসামি জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে দেখা গেছে, ওই সব পলাতক জঙ্গির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী হেনা কবীর জানান, মামলা তিনটি জয়পুরহাট অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকজন আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান,মামলাটি জেলার আলোচিত মামলা। বিএনপি সরকারের আমলে এ মামলার ১৩ জন শীর্ষ আসামি আদালত থেকে প্রায় এক যুগ আগে জামিন পেয়েছেন। এরপর থেকেই তাঁরা লাপাত্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও এই মামলায় বিচারের সম্মুখীন হননি। 

এছাড়া কারাগারে আটক অন্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন জেলায় মামলা থাকায় তাঁদের অনেককে জয়পুরহাট আদালতে সময়মতো হাজির করা যাচ্ছে না। আইনের বিধান হলো একজন আসামির অনুপস্থিতিতেও মামলার চার্জ গঠন করা যাবে না। ফলে আসামিদের হাজিরা নিশ্চিত করতে না পারার আইনগত জটিলতার কারণেই ঘটনার ১৭ বছরেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচারকাজ শুরু করা যায়নি।
কেআই//