বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও ন্যায় বিচার: একটি আইনি পর্যালোচনা
মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
প্রকাশিত : ১১:৩১ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার
মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম
উইলিয়াম ই গ্লেডস্টোন বলেছিলেন ‘Justice delayed is Justice denied!’ এই প্রবাদের সঙ্গে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আমাদের দেশের যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, বিলম্বিত বা বিচারিক দীর্ঘসূত্রিতা এবং ঘৃন্য রাজনীতি তার সূত্রপাত হয়েছিল মূলত ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে। ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় বিচার নিশ্চিতে রাষ্ট্রপক্ষ (Prosecutor) এবং পুলিশ বিভাগের ভূমিকা ছাড়া ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ফলে তা হতে হয় নির্ভরযোগ্য, নিরেপক্ষ এবং দায়িত্বশীল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তৈরীর কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহামানের সপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার এ জাতি আজও পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেনি। খন্দকার মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সামরিক ক্ষমতা বলে ‘indemnity Act’ (দায়মুক্তি) আইন জারী করেছিলেন হত্যাকারীদের দায়মুক্তি এবং কোনো আদালত যেন বিচার করতে না পারে সেই ব্যবস্থা পোক্ত করার জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীতে এই দায়মুক্তি আইনকে বাতিল করা হয়নি বরং তা বৈধতা দেয়া হয়। অর্থ্যাৎ পরবর্তী সরকারগুলি (জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসন আমল) বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে চায়নি তথাপি অভিযুক্তদের বিভিন্ন দূতাবাসে এবং উচ্চপদে আসীন করা হয়। এ রকম ঘটনা আসলে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
অবশেষ বিচার শুরু ও আইনি পর্যালোচনা:
অবশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ঘোষণা দেয়। তবে উল্লেখ যে, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্ভাব্য আসামির অনেকেই আগেই সবকিছু আঁচ করতে পেরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় এবং অনেকেই সফল হয়। ফলে সরকার পুলিশকে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী দেশে অবস্থানরত জড়িত অভিযুক্তদের আটকের নির্দেশ দেয়। Amnesty International একটি রিপোর্টে উল্লেখ করে “সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিশেষ ক্ষমতা আইনের দ্রুত ব্যবহার দেশের আইনী সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছিল যদিও অনেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার করার সিদ্ধান্তকে নীতিগতভাবে সমর্থন করেছিলেন। কিছু পর্যবেক্ষক এটিকে শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত অবস্থান থেকে বড় প্রস্থান হিসাবে দেখেন কারন তিনি বিরোধী দলের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি বিশেষ ক্ষমতা আইনকে একটি ‘কালো আইন’ বলে অভিহিত করেছিলেন যা অপসারণ করা উচিত বলে মত দিয়েছিলেন।” ১৩ আগস্ট ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ছিলেন মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সায়েদ ফারুক রহমান এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান যিনি তখন বিদেশে কর্মরত ছিলেন ফরেন ডিপ্লোমেট হিসেবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় তাকে দেশে ফেরত আনা হয়।
নাশকতা, অবৈধ অস্ত্রমজুদ ও পাসপোর্ট জালিয়াতির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে সন্দেহে ৩০ দিন অভিযুক্তদের আটক রাখা হয় special powers Act এর অধীনে এবং তদন্ত শুরু হয় কেননা ‘দায়মুক্তি আইন’ বলবৎ থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তৎক্ষনাৎ শুরু করা সম্ভব ছিলো না। সরকার এক দিকে অভিযুক্তদের আটক রাখে এবং অন্যদিকে দায়মুক্তি আইন বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করে দ্রুত। ইতোমধ্যে আসামির আইনজীবীরা আটককে চ্যালেন্জ করে কিন্তু পুলিশ তখন জেলহত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে আর আটকৃত অভিযুক্তদের এই গ্রাউন্ডে আটক দেখানো হয় এবং পরবর্তীতে সরকার ঘোষণা করে যে জেলহত্যা মামলার তদন্ত শুরু করতে আইনগত কোনো বাধা নেই এই যুক্তিতে যে দায়মুক্তি আইন জেলহত্যা সংঘটনের আগে জারি করা হয়েছে। ফলে জেলহত্যা মামলার তদন্ত ক্ষেত্রে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না। ফলস্বরূপ ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে CID জেলহত্যা মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করে এবং তাহেরুদ্দিন, জোবাইদা এবং মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয় সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৩ আসামীকেও এই মামলার সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়। মেট্রোপোলিটিন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলা এই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার FIR এবং দায়মুক্তি আইন বাতিলকরণ:
বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার তদন্ত করা হবে বলে পুলিশের প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ খান ও খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের তিন সপ্তাহ পরে। অভ্যুত্থানের সময় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের আবাসিক ব্যক্তিগত সচিব মাহিতুল ইসলাম ১৯৯৯ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন। মামলাটি দন্ডবিধির ধারা ১২০ (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৩০২ (হত্যা), ৩৪ (একই সমাবেশে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির দ্বারা পরিচালিত কাজের জন্য দায়ী সমস্ত ব্যক্তি), ১৪৯ (সমস্ত ব্যক্তি তাদের সমাবেশে এক ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদিত অপরাধের জন্য দায়ী), ৩২৪ বিপজ্জনক অস্ত্র দ্বারা স্বেচ্ছায় আহত করা), ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা) এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১০৯ (অপরাধমূলক সহয়তা) এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল যদি এসব অভিযোগে অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয় তবে এর মধ্যে কয়েকটি অভিযোগের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। অভিযুক্তরা হলো খন্দকার মোশতাক আহমেদ, রাষ্ট্রপতি মুজিব ও রাষ্ট্রপতি মোশতাক উভয়ের মন্ত্রীসভার প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, (যার স্ত্রী জোবাইদা আটক হয়েছিল ইতোমধ্যে) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল ফারুক রহমান, গ্রেফতারকালে সামরিক চাকরিতে সক্রিয় লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর জলিল, লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে বিচার শুরুর আগেই মারা গিয়েছিলেন। মেজর আহমদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন কিসমত হোসেন, লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী রিসালদার (অব.)। মোসলেহউদ্দিন ওরফে হিরণ খান ওরফে মোসলেমুদ্দিন ওরফে রফিকুল ইসলাম। মেজর (অব.) বজলুল হুদা (থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে ফৌজদারী বিনিময় চুক্তির অংশ হিসাবে ব্যাংকক থেকে ফিরিয়ে আনা হয়), বেশিরভাগ আাসামী আত্মগোপনে চলে যায় এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফিরে আনতে ব্যর্থ হন। আওয়ামী লীগ সরকারের কুটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের মধ্য থেকে দেশগুলোর সঙ্গে অপরাধী প্রত্যার্পন চুক্তি না করতে পারা এবং সর্বোপরি লবিং এর অভাব ছিল বা আছে এখনও। সরকার তাদের খোঁজখবর নিতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছিল এবং কয়েকজন অভিযুক্তকে প্রত্যর্পণ চেয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে কমপক্ষে দুই জন কর্নেল (উপ) ফারুক রহমান এবং কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ বিদেশী সাংবাদিকদের এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন।
১২ নভেম্বর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাঁধা ‘দায়মুক্তি আইন’ বাতিল করা হয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। এখানে একটি আইনী প্রশ্ন চলে সংসদে ২/৩ মেজোরিটি আওয়ামী লীগের ছিল না এবং বিরোধী দলের কেউই সংসদে উপস্থিত ছিল না এবং সাধারণ কোরামে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। এবং অভিযুক্তদের আত্মীয় স্বজন এই গ্রাউন্ডসে এটিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে। হাইকোর্ট বিভাগ জানুয়ারী ১৯৯৭ সালে পিটিশনটি খারিজ করে দেন নিম্নোক্ত গ্রাউন্ডসে "The Indemnity (Repeal) Act, 1996 (Act No. 21 of 1996) is a valid piece of legislation and it is not ultra vires of the Constitution" since the Indemnity Ordinance had not been itself constitutional, its removal does not require a two-third majority as pointed out by the family".
দায়মুক্তি আইন বাতিল হওয়ার পর সরকার দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করতে সচেষ্ট হয়। চার্জশিটে পুলিশ এফআইআর এবং আটকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের উপর ভিত্তি করে ১৪ জন অভিযুক্তসহ আরও ৬ জনসহ মোট ২০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে। এফআইআরে নাম প্রকাশিত ১৪ জনের পাশাপাশি বাকী ছয়জন হলেন, ক্যাপ্টেন মাননীয় আবদুল ওহাব জোয়ারদার (ইতোমধ্যে আটক), বেগম জোবাইদা রশিদ (ইতোমধ্যে আটক), লে. কর্নেল (অব.) নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শরিফুল হক ডালিম, মেজর (শাস্তিপ্রাপ্ত) এসকেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, দফাদার মারফত আলী, মোহাম্মদ আবদুল হোসেন। অভিযোগপত্রে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ, মাহবুবুল আলম চশী, রিসালদার সৈয়দ সরোয়ার হোসেন এবং ক্যাপ্টেন এম মোস্তফা আহমেদকে আসামি করা হলেও তারা সবাই মারা গেছেন। অভিযোগপত্রে সাক্ষী হিসাবে ছিলেন ৭৬ জন।
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের কার্যক্রম ও পরবর্তী প্রোসিডিংস:
২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭, ৬ জন আসামিকে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটিন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আনা হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক হাঙ্গামা এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কোর্ট বাসানো হয়েছিলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিষয়টি বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে অন্যতম একটি ঘটনা। ৮ এপ্রিল ১৯৯৭ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রত্যেকেই not guilty plead করে ( অভিযোগ অস্বীকার)। অভিযুক্ত জোবাইদা পুলিশি নির্যাতন বর্ণনা করে এবং তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে দোষ স্বীকারে বাধ্য করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ করে। পরবর্তীতে চিকিৎসার গ্রাউন্ডসে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়। কয়েক দিন মামলার প্রিট্রায়াল শুনানি চলে এবং ২১ এপ্রিল ট্রায়াল শুনানীর তারিখ ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। অতঃপর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫১ কার্যদিবসে ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৯ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে রায় কার্যকরের আদেশ দেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির কলঙ্ক কিছুটা হলেও দূর হয়। আটককৃত দোষীদের মধ্যে চারজন (ফারুক, শাহরিয়ার, বজলুল হুদা, এবং মহিউদ্দিন) এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। সাবেক তথ্যমন্ত্রী এবং অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে দোষী সাব্যস্ত না করে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি ২০০৫ সালে স্বাভাবিকভাবেই মারা যান।
১৪ ডিসেম্বর ২০০০ সালের সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মোহাম্মদ রুহুল আমিন (২০০০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি) এবং বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গঠিত ১৫ সদস্যের রায় নিয়ে একমত হতে ব্যর্থ হন দুই সদস্যের হাই কোর্টের প্যানেল। জুনিয়র বিচারপতি খায়রুল হক দুই বছর আগে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছিলেন এবং ১৫ জনের ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন যদিও সিনিয়র বিচারপতি রুহুল আমিন পাঁচজনকে প্রমাণের অভাবে খালাস দিয়েছিলেন। এই পাঁচজন হলেন, মহিউদ্দিন আহমেদ, আহমেদ শরিফুল হোসেন, মো. কিসমত হাশেম, নাজমুল হোসেন আনসার এবং মোসলেমউদ্দিন। যেহেতু দুজন বিচারক অন্য পাঁচজনের দোষে বিভক্ত হয়েছিলেন তৃতীয় বিচারকের রায় পাওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম (বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি) এবং প্রায় তিন মাস দীর্ঘ শুনানির শেষে ৩০ শে এপ্রিল ২০০১ তিনি মহিউদ্দিন আহমেদ ও মোসলেমউদ্দীন কে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং বাকি তিনজনকে খালাস দেন। অর্থ্যাৎ ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনকে সর্বশেষ দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে হাইকোর্ট বিভাগ। দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১২জনের মধ্যে কেবল ৪জনকেই বাংলাদেশ কারাগারে আটক করা হয়েছিল, ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, সুলতান শরিয়ার রশিদ খান এবং মহিউদ্দিন আহমেদ। অন্যরা বিদেশে পলাতক ছিল। ৪জন দোষী ব্যক্তি একই বছর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন এই গ্রাউন্ডসে যে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু বিদ্রোহের অংশ ছিল এবং তাদের সাধারণ আদালত বিচার না করে সামরিক আইনে বিচার করা উচিত ছিল। পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অবেশেষে দীর্ঘ ৬ বছর পর কেয়ারটেকার গর্ভমেন্ট আমলে ৭ আগস্ট ২০০৭ সালে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে বহু ব্যার্থ চেষ্টার পর ১৮ জুন ২০০৮ সালে মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়। এবং সেও অন্য চারজনের মত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে। ১৯ নভেম্বর ২০০৯ সালে বিচারপতি তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ (সদস্যের বেঞ্চ) আপিল বিভাগ ৪১২ পৃষ্ঠার পূর্নাঙ্গ রায় প্রদান করেন এবং ১২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন এবং আপিল খারিজ করে দেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ নিম্নরূপঃ
Leave was granted to consider the following points: a) Because the learned Judges of the Division Bench have delivered and signed two separate dissenting opinions, the third learned Judge has committed a fundamental error of law in not considering the reference in its entirety i.e, in respect of all the convicts and considering the cases of six convicts only.
b) Because there is inordinate delay of 21 years in lodging the F.I.R.; this unreasonable delay speaks of ill intention and design on the part of the prosecution to falsely implicate the appellants by introducing a concocted story the High Court Division, in the premises, erred in law in maintaining the capital sentence without properly considering this aspect of the matter.
c) Because the evidence on record disclose a case of mutiny leading to the murder of the then President and his family members and thus the said killing not being a case of murder simplicitor, the trial of the appellants by a normal criminal court has vitiated the trial.
d) Because the evidence on record do not disclose a case of a criminal conspiracy to commit murder but disclose a case of conspiracy to commit mutiny to change the then Mujib Government, hence the conviction and sentence are illegal.
e) Because the prosecution having failed to prove the charge under section 302/34 of the Penal Code against the appellants on proper evaluation and sifting of evidence on record, there has been a serious miscarriage of justice.
On opinion on the above points is as under:
a) Sections 378 and 429 of the Code of Criminal Procedure contemplate that it is for the third learned Judge to decide on what points he shall hear arguments, if any, and, that postulates that he is completely free in resolving the difference as he thinks fit, and therefore, the third learned Judge was competent to decide the case of six convicts of whom the learned judges were equally divided in their opinion and thus the third learned Judge was in agreement with the decision of the learned Judges of the Division Bench in respect of 9(nine) convicts of whom there was no difference of opinion.
b) The learned Sessions Judge as well as the learned Judges of the High Court Division have believed the explanation given by the prosecution regarding the delay in lodging the First Information Report on assessment of the evidence on record; this finding being a concurrent finding of fact, in our view, does not call for any interference.
c) An offence of murder has been included in section 59(2) of the Army Act, 1952 triable under the Army Act subject to the condition that if the offender commits the said offence while in ‘active service’, but as the appellants were not in ‘active service’ within the meaning of section 8(1) of the Army Act, their trial by an ordinary criminal Court is not barred by the provisions of the Army Act, and secondly, even if it is assumed that it is a ‘civil offence’ within the meaning of Section 8(2) of the Army Act, there is no legal bar for trial of such offence in view of section 94 of the said Act.
d) There is no legal evidence, no record to come to the conclusion that the murder of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and other members of his family including the three security personnel was committed as a consequence of mutiny, we are of the view that it is not a case of criminal conspiracy to commit mutiny, rather it is a criminal conspiracy to commit the murder of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman and other members of his family.
e) The learned Judges of the High Court Division having believed that the prosecution has been able to prove beyond reasonable doubt the charge of murder against the appellants and other convicts by adducing reliable evidence, and the appellants having failed to make out a case that the High Court Division has caused a grave substantial injustice or a miscarriage of justice in accepting the death reference so far as it relates to the appellants without proper evaluation and sifting of evidence, we find no cogent ground to interfere with the impugned judgment and order of the High Court Division.
f) The appellants having failed to make out a case of extenuating circumstance to commute their sentence of death, we are not inclined to interfere with the sentence of death awarded to the appellants by the learned Sessions Judge and maintained by the High Court Division.
In the premises, Criminal Appeal Nos. 55-59 of 2007 with Jail Appeal No. 2 of 2007 with Criminal Misc. Petition No.8 of 2001 with Criminal Review Petition No.3 of 2000 are hereby dismissed.
The order of stay passed by this Court is hereby vacated.
This short order shall form part of the judgment.
অবেশেষে ২০১০ সালের ২৮ শে জানুয়ারী দোষী ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হয়। এবং ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আরেক আসামী আব্দুল মজিদ ভারত থেকে বাংলাদেশ চলে আসলে তাকে ফাঁসির রায় অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আসামীদের মধ্যে বাকি ৫ জনের রায় কার্যকর করা এখনো বাকি রয়েছে (১জন মৃত) বিভিন্ন দেশে পলাতক তারা। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে এইদেশকে ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য অপরাধের কলঙ্ক থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্তি দিবে আশা করি। যে জাতি এত বছেরও তার জাতির ত্রাতার সপরিবারে হত্যার বিচার করতে পারেনা সে জাতির অভ্যন্তরীন ন্যায় বিচার কিভাবে সম্ভব? কিছুটা হলেও জাতি কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে। এই মামলার ইতিহাস থেকে স্পষ্ট আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থর চিত্র। যিনি আজীবন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন তাঁর নিজের হত্যার বিচার হতে অনেক সময় পাড়ি দিতে হয়েছে। বর্তমানে যেসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি বলে দাবী করা হয় তাদের বিচার ও একদিন হবে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্য পলাতক আসামীদের দেশে ফেরত এনে মামলার রায় কার্যকরের দাবী জনগনের দীর্ঘদিনের।
(সূত্র: 1.Wikipedia, 2.Prothom alo 3.Amnesty international 4.Bangabandhu murder case Judgement. 5. Chancery Law chronicles. লেখক সকল তথ্যের উৎসের প্রতি কৃতজ্ঞ।)
লেখক: মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আইন গবেষক ও লেখক। ই-মেইল: tajul_jdjbd71@yahoo.com
এমএস/