ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে রেখে আসা মূল্যবান জিনিসের সর্বনাশ করছে উঁইপোকা!

রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১২:২২ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২০ সোমবার

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। ছুটি দীর্ঘ না হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে হলের আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজগপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেককিছুই হলে রেখে দিয়ে বাড়ি চলেন আসেন। কিন্তু করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ছুটি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর এদিকে উঁইপোকার আক্রমণে নিরাপদ স্থানে রেখেও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ মূল্যবান জিনিসপত্রের হচ্ছে না শেষ রক্ষা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মফিজুল ইসলাম হল বন্ধের সময় শহীদ জিয়াউর রহমান হলের তার রুমে এইচ.এস.সি এবং এস.এস.সির মূল সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগজপত্রগুলো একটি ফাইল করে লকারে রেখে ছিলেন। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর হলে গিয়ে দেখেন  উঁইপোকা খেয়ে শেষ করে দিয়েছে সবকিছু। এ নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। 

মফিজুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে ভার্সিটি ছুটির আগেই বাড়িতে আসার কথা ছিল। পরের দিনই ভার্সিটি দশ দিনের ছুটি ঘোষণা করে। এ কারণে বেশি কিছু না ভেবেই বাড়িতে চলে আসি। এরপর থেকে তো ছুটি বেড়েই চলেছে। লকারের মধ্যে ল্যাপটপের মোটা বক্সের ভিতরে ফাইলে করে রেখেছিলাম কাগজগুলো। সব কেটে ফেলেছে। এর মধ্যে একবার রাজশাহীতে যেতে চেয়েছিলাম কাগজপত্র আনার জন্য। কিন্তু তখন শুরু হয় সারাদেশে লকডাউন। রুমের চাবি আর আইডি কার্ড দিয়ে অন্য কাউকে দিয়েও ওগুলো আনতে চাইছিলাম। অনেকে বলেছে এভাবে নিতে দিবে না। ফলে আর যাওয়া হয়নি। এরই মধ্যে যা হবার হয়ে গেছে। পোকায় কেটে ফেলেছে বইপত্র, তোষক সব।

কাগজপত্র আবার তোলা যাবে। কিন্তু দুইটা বোর্ডে যাওয়া,স্কুল, কলেজ, থানায় জিডি কত ঝামেলা!

শনিবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রসেনজিৎ কুমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের তার ব্যক্তিগত ওয়ালে ছবিসহ ঘটনাটি তুলে ধরেন। পরে মোবাইলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মফিজুল ইসলাম।

প্রসেনজিৎ কুমার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, “আমার একবার খুব করে ইচ্ছে হয়েছিলো সার্টিফিকেটগুলো সব একসাথে পুড়িয়ে কিনবা কেটেছিড়ে ফেলবো। এ ইচ্ছাটা ইচ্ছাই থেকে গেল সাহস হয়নি। গতকাল জিয়া হলের ছোটভাই সজীব এসেছে ওর রুম থেকে কাগজপত্র নিতে আমিও গেছিলাম। ওর রুমটা নিচতলায়। মোটামুটি রুমের সব কাপড়চোপড় শেষ। উঁইপোকা পুরো রুমটা দখল করে আছে। সবকিছু দেখে মনটা খারাপই হলো। চলে আসার আগে ওর রুমমেট সার্টিফিকেটগুলো দেখতে বলল। লকার খুলে ওগুলো দেখলাম।

এভাবে সার্টিফিকেট উঁইপোকায় কেটে নষ্ট করেছে এটা সর্বপ্রথম দেখলাম। ওর রুমমেটের (মফিজুর) কণ্ঠ ভারি হয়ে এলো ভিডিও কলে সার্টিফিকেট দেখে ওর যেন মুহুর্তে কান্না চলে এলো। এটা দেখার পর বেশ খারাপই লাগছে। ঐ রুমের যে অবস্থা তাতে মনে হয় ঐ হলের নিচ তলায় যত রুম আছে সব শেষ প্রায়। এখন সময় দেয়া ঠিক হবেনা। রুম থেকে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নিয়ে গেলে ভালো হয়।

হল প্রশাসনের দৃষ্টি দরকার এদিকে। হারিয়েছে ডুপ্লিকেট পাওয়া যাবে কিন্তু এমারজেন্সি লাগলে পাওয়া কষ্ট। আর আমাদের সরকারি অফিসগুলোর যা অবস্থা তাতে বুঝতেই পারছেন এই অর্থনৈতিক দৈন্যদশার সময় এই ছেলের কী অবস্থা হবে! মন্ডায় খারাপ হয়ে গেল।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় হলে আমার সব মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে আসছি। বর্তমানে সে জিনিসগুলো কি অবস্থায় আছে আল্লাহ জানে। মূল্যবান সার্টিফিকেটগুলো উঁইপোকা আক্রমণ করলে মহা বিপদে পড়ে যাব।

শাওন কাদির থাকেন মাদার বখশ হলে, এতদিন বাড়ীতে থেকে মূল্যবান জিনিস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অনেকে হল রুমের লকারে রাখা জিনিসপত্র নিয়ে চিন্তামুক্ত ছিলো কিন্তু আজ জিয়া হলের একজন শিক্ষার্থীর লকারে রাখা কাগজপত্র এবং জামাকাপড় উইপোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এই ঘটনায় আমরা বুঝতে পারি লকারে রেখে আসা কাগজপত্র, জামা কাপড় কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোনটাই নিরাপদ না। হঠাৎ করে সব জিনিসপত্র রেখে আসা আমার মতো ছাত্র ছাত্রীরা খুবই উদ্বিগ্ন আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে৷

যে সকল শিক্ষার্থীরা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হবে ক্যাম্পাস খোলার পর তাদের তালিকা করে প্রসাশনের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রফেসর লুৎফর রহমান বলেন, করোনায় ক্যাম্পাস দীর্ঘ ছুটিতে রয়েছে। সে জন্য শিক্ষার্থীদের রেখে যাওয়া মূল্যবান জিনিসপত্র নেয়ার জন্য আবাসিক হলসমূহ খোলা রাখা হয়েছে। যাদের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রেখে গিয়েছে তারা যেন হলে এসে কাগজপত্রগুলো নিয়ে যায়।

এমবি//